শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অঙ্গহানী ইত্যাদি পরীক্ষা না কি শাস্তি?

প্রশ্ন: পবিত্র কুরআনে সুরা তোয়া-হা এর ১২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “যে আমার উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে তার সংকীর্ণ জীবন হবে এবং পরকালে তাকে অন্ধাবস্থায় উঠাব।”

আমার এক দীনি বোন আছেন, যিনি এক দুর্ঘটনায় তার এক পা হারান। এখন এই বোন জানতে চাচ্ছেন যে, তার জীবন তো এখন সংকীর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও সহজে চাইলেই যেতে পারেন না আগে যেটা পারতেন। ঘরের মধ্যে চলাচলেও কষ্ট। তবে এটা কি তার শাস্তি না কি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা? উল্লেখ্য যে, তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে পা হারান।

উত্তর:
আল্লাহ তাআলাা বলেন:
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ

“এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (সূরা ত্বা-হা: ১২৪)

❒ ‘সংকীর্ণ জীবন’ বলতে কী উদ্দেশ্য?*
1f4a0💠 “জীবন সংকীর্ণ হবে” অর্থ সে মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকবে। গোমরাহীর কারণে তার অন্তরটা সংকীর্ণ ও সংকুচিত থাকবে। যদিও সে ইচ্ছামত খাওয়া-দাওয়া করবে এবং পোশাক পরিধান করবে কিন্তু সবসময় সে অস্থিরতা, দু:শ্চিন্তা, সংশয়, সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাব। সর্বদা তার হৃদয়ে দোদুল্যমনতা কাজ করবে। সে মোটেও সুখময় জীবনের অধিকারী হবে না।

1f4a0💠 যাহহাক রহ. বলেন, সংকীর্ণ জীবন অর্থ: খারাপ কাজ এবং নিকৃষ্ট খাবার।

1f4a0💠 আরেকটি অর্থ হল, মৃত্যু বরণের পরে তার কবর তার জন্য সংকুচিত হয়ে তাকে এমনভাবে চেপে ধরবে যে, তার শরীরের হাড্ডিগুলো এপার-ওপার হয়ে যাবে।” (আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে মাউকুফ সূত্রে বর্ণিত) [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

তাহলে এই আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, সংকীর্ণ জীবন দ্বারা শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি, অঙ্গহানী ইত্যাদি উদ্দেশ্য নয়। বরং তা মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, অথবা কবরের সংকীর্ণতা ইত্যাদি উদ্দেশ্য।

প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ হুইল চেয়ারে বসেও মানসিকভাবে অত্যন্ত সুখী জীবনের অধিকারী হতে পারে। যদি তার ভেতর আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি থাকে।

❒ শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি, অঙ্গহানী বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বান্দার গুনাহমোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ:

আল্লাহ তাআলা বান্দার শারীরিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদির মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করেন এবং তার দরবারে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

267b রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ ولا وَصَبٍ ولا هَمٍّ ولا حَزَنٍ ولا أذًى ولا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إلا كفَّرَ اللهُ بها من خَطَايَاهُ
‘মুসলিম ব্যক্তি কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা এমনকি কোন কাঁটা বিধলেও (যদি সে ছবর করে ও আল্লাহর উপরে খুশী থাকে), তাহ’লে তার কারণে আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেন’। [বুখারী ও মুসলিম, রিয়াযুস সালেহীনহা/৩৭।]

267b অন্য হাদীছে তিনি বলেন,
مَن يُّرِدِ اللهُ به خَيْرًا يُصِبْ منه
‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন’। (বুখারী, রিয়াযুস সালেহীন হা/৩৯)।

267b অন্য হাদীছে তিনি বলেন,
لا يزال البلاء بالمؤمن أو المؤمنة فى نفسه و ماله و ولده حةى يلقىَ الله ةعالى وما عليه من خطيئة

‘মুমিন পুরুষ বা নারীর জীবন, সন্তান ও মালের উপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার (আমলনামায়) কোন পাপ থাকে না’।[ সুনান তিরমিযী, মুওয়াত্তা মালিক, মিশকাত হা/১৫৬৭।] অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের ফলে মুমিন বান্দা পাপমুক্ত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যান এবং আল্লাহর কাছে মহা পুরষ্কার লাভে ধন্য হন।
সুতরাং উক্ত বোন যদি সবর করেন এবং আল্লাহর তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আল্লাহ তাআলা আখিরাতে তার এই বিপদের বিনিময় দান করবেন ইনশাআল্লাহ। তার গুনাহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। হয়ত আল্লাহ এভাবে তাকে পরীক্ষা নিতে চান এবং পরিশুদ্ধ মানুষে পরিণত করে পরকালীন সাফল্য নিশ্চিত করতে চান।

তাই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রয়োজন আল্লাহর আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত করার পাশাপাশি এই দুর্ঘটনাকে আল্লাহর তাকীদেরর ফয়সালা হিসেবে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা এবং তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম
27122712271227122712
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব।।

Share: