রমযান মাসের সমাপ্তি
ভাইয়েরা আমার! অতি শীঘ্রই রমযান মাস আমাদের নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছে ও নতুন একটি মাস আসছে, কিন্তু রমযান মাস আমাদের জন্য সাক্ষী থাকবে। এ মাসে যে ব্যক্তি ভাল আমল করতে পেরেছে, সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ও শুভ পরিণামের অপেক্ষায় থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভাল আমলকারীর আমল নষ্ট করেন না। আর যে ব্যক্তি এ মাসে অন্যায় কাজ করেছে, সে যেন তার প্রভূর কাছে খালেছ তওবা করে। আল্লাহ তাআলা তওবাকারীর তওবা কবুল করেন। তিনি আমাদের জন্য এ পোশাক শেষে এমন কিছু ইবাদত নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়, বৃদ্ধি পায় ঈমানী শক্তি, সমৃদ্ধ হয় আমলনামা। যেমন সদকাতুল ফিতর আদায় করা এবং ঈদের চাঁদ উঠার পর থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহর তাআলার মহত্ব বর্ণনা কর (তাকবীর বল)। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পার’। {সূরা আল-বাকারা : ১৮৫}
তার পদ্ধতি হল, অধিক হারে নিম্নের এ তাকবীর পড়া :
اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ لاَ إلَهَ إَلاَّ الله واللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
পুরুষগণ ঘরে, বাজারে এবং মসজিদে অর্থাৎ সকল জায়গায় আল্লাহর মহত্বের ঘোষণা দিয়ে ইবাদতের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। উক্ত তাকবীর উচ্চস্বরে বলা সুন্নত। মহিলাদের জন্য নিচু স্বরে বলা সুন্নত। যেহেতু তারা নিজেদের ও নিজেদের কণ্ঠস্বরকে গোপন করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে। মুসলমানদের ঈদের দিনটি কত চমৎকার! পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনা শেষে তারা সর্বত্র তাকবীর ধ্বনি দ্বারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করে এবং তারা আল্লাহর তাকবীর, প্রশংসা ও একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। তারা আল্লাহর রহমতের আশাবাদী এবং তার আজাবের ভয়ে শংকিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা ঈদের দিন বান্দাকে ঈদের সালাতের হুকুম দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে তার উম্মতের নারী-পুরুষ সকলকে আদেশ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ আল্লাহর হুকুমের মতই।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣ ﴾ [محمد: ٣٣]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। তোমাদের আমলসমূহকে নষ্ট কর না’। {মুহাম্মদ : ৩৩}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের ঈদের সালাত আদায়ের জন্য ঈদগাহে যেতে বলেছেন। যদিও তাদের জন্য ঈদের সালাত ব্যতীত অন্যান্য সালাত ঘরে পড়াই উত্তম।
উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে সালাতের উদ্দেশ্যে বের হতে বলেছেন। এমনকি ঋতুবতী নারীকেও। ঋতুবতী নারীগণ সালাতে অংশগ্রহণ করবে না। ঈদগাহের এক পাশে থাকবে এবং দুআয় শরিক হবে। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেকের পর্দা করার চাদর নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, সে তার বোনের চাদর নিয়ে হলেও ঈদের সালাতে শরিক হবে।
ঈদুল ফিতরের সালাতে যাওয়ার পূর্বে খেজুর খাওয়া সুন্নত।
তিন, পাঁচ বা ততোধিক বেজোড় সংখ্যায় হিসাব করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর খেতেন। [বুখারী ও আহমদ]
ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নত। আলী বিন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
العيد ماشيا. رواه الترمذي
অর্থাৎ ঈদগাহে পায় হেঁটে যাওয়া সুন্নত। [তিরমিযী]
পুরুষগণ ঈদগাহে যাওয়ার সময় সুন্দর পোশাক পরে সজ্জিত হয়ে যাবে।
বুখারীতের আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি রেশমী পোশাক বাজার থেকে এনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটা ক্রয় করে ঈদের দিন এবং মেহমানের উপস্থিতিতে ব্যবহার করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমী কাপড়ের দরুন অসুন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, রেশমী পোশাক ঐ ব্যক্তিদের জন্য যারা আখেরাতের কিছুই পাবে না। পুরুষের জন্য রেশমী পোশাক বা স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু এটা উম্মতে মুহাম্মদীর পুরুষদের জন্য হারাম। নারীগণ সাজসজ্জা ও আতর ব্যবহার ব্যতীত এবং পূর্ণ পর্দাসহ ঈদগাহে যাবে। কারণ তাদেরকে বাইরে বের হওয়ার সময় উলঙ্গপনা, সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। গোপনীয়তা ও পর্দার আদেশ করা হয়েছে। ঈদের সালাত একাগ্র চিত্তে আল্লাহর ভয়-ভীতি সহকারে আদায় করবে। বেশী বেশী করে আল্লাহর জিকির করবে ও দোয়া পড়বে। তার রহমতের আশা ও আজাবের ভয় করবে। সকলে একত্রিত হয়ে আল্লাহকে ডাকার মধ্যে অধিক মর্যাদা আছে। যেহেতু মানুষের মধ্যে কেউ অধিক পুণ্যবান, কেউ আল্লাহ ভীরু, আবার কেউ মধ্যম স্তরের। বিধায় সকলে একত্রিত হয়ে দোয়া ও কান্নাকাটি করা অধিক লাভজনক ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [الاسراء: ٢١]
‘হে নবী, আপনি লক্ষ্য করুন, আমি তাদের কতককে কতকের ওপর সম্মান দান করেছি। আর যে পরকালে মর্যাদা লাভ করে সে প্রকৃত মর্যাদা লাভকারী’। {সূরা বানী ইসরাঈল : ২১}
পোশাক আগনে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে। কেননা তিনি বান্দার জন্য সালাত, সিয়াম, কুরআন তেলাওয়াত, সদকা ইত্যাদি ইবাদত সহজ করে দিয়েছেন। ইবাদত করার তাওফীক পাওয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٥٨ ﴾ [يونس: ٥٨]
‘হে নবী! আপনি বলুন, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা প্রাপ্ত হয়েছে, তাদরে এতে খুশি হওয়া উচিৎ। মানুষ যে সম্পদ অর্জন করে, এটা তা থেকে অধিক উত্তম’। {ইঊনুস : ৫৮}
যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রমযানের সিয়াম ও রাত জাগরণ গুনাহ মাফের উপায়। সুতরাং মুমিনগণ রমযান মাস ফেলে খুশ হয়। আর দূর্বল ঈমানদার রমযান মাস ফেলে নারাজ হয় ও সে সিয়াম পালনকে কষ্টকর মনে করে।
হে আমার ভাই সকল! রমযান মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু মুমিনের আমল তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেষ হবে না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]
‘আপনি আপনার প্রভূর ইবাদত করুন, আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত’। {আল-হিজর : ৯৯}
তিনি আরো ইরশাদ করেন :
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢ ﴾ [ال عمران: ١٠٢]
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় কর। তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’। {আলে-ইমরান : ১০৬}
রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে,তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। এখানে মৃত্যুকে মানুষের আমলের সমাপ্তি ধরা হয়েছে। সুতরাং মানুষ যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন রমযান ঘুরে ঘুরে আসতে থাকবে।
আবূ আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
যে ব্যক্তি রমজানে সিয়াম পালন করেব, অতঃপর শাওয়ালের আরো ছয়টি সিয়াম পালন করবে, সে সারা বছর সিয়াম রাখার সমতুল্য সওয়াব প্রাপ্ত হবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন করা। [মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
প্রতি মাসে তিনটি এবং এক রমযান থেকে অন্য রমযান সিয়াম পালন করা সারা বছর সিয়াম পালনের সমান। [মুসলিম ও আহমদ]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। এক. প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করবে। অর্থাৎ আইয়্যামে বিজ বা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূজর কে বললেন, হে আবূ জর! তুমি যখন প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করবে তখন তা ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে পালন করবে। [আহমদ ও নাসায়ী]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আরাফার দিনের সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি উত্তর দিলেন, তা এক বছরের আগের গুনাহ ও এক বছরের পরের গুনাহের কাফ্ফারা স্বরূপ। আশুরার সিয়াম পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ মোচন করে দেয়। প্রতি সোমবারের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, সোমবার আমি জন্মগ্রহণ করেছি ও সোমবার নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছি এবং সোমবার আমার উপর কুরআন নাযিল করা হয়েছে। [মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হল, পোশাক পরে কোন মাসে সিয়াম পালন উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাররম মাসের সিয়াম। [মুসলিম]
বুখারী ও মুসলিমে আছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ছাড়া অন্য কোন সময় পূর্ণ একম মাস সিয়াম পালন করতে দেখিনি।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে অপর বর্ণনায় আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তাহে সোমরাব ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করতেন।
উসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
বনী আদমের আমল সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি পছন্দ করি আমার আমল সিয়াম অবস্থায় পেশ করা হোক। [তিরমিযী]
রমযান মাস শেষ হওয়ার দ্বারা রাত জাগরণ শেষ হয় না, বরং বছরের প্রত্যেক রাতে নফল সালাত ও তাহাজ্জুদ পড়ার মাধ্যমে রাত জাগরণ করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা বছর রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন।
বুখারীতে মুগীরা বিন শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত অধিক নফল সালাত আদায় করতেন যে, তার পা মুবারক ফুলে যেত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি কি শুকর গুজার বান্দা হব না?
আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
হে লোক সকল! তোমরা অধিক হারে সালাম দিবে। অভাবগ্রস্তদের খাদ্য খাওয়াবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখবে। যখন মানুষ ঘুমে খাকে তখন রাতে নফল সালাত আদায় করবে। তাহলে তোমরা শান্তির স্থান জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [তিরমিযী]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
সর্বোত্তম সালাত হল, ফরজ সালাতের পর রাতের তাহাজ্জুদ সালাত। [মুসলিম]
আর রাতের সালাতে সব ধরণের নফল এবং বিতর অন্তর্ভুক্ত। রাতের সালাত দু’ দু’ রাকাত করে আদায় করতে থাকবে। সময় শেষ হওয়ার ভয় হলে এক রাকাত মিলিয়ে বিতর পড়ে নেবে।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে অর্থাৎ শেষ রাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, আমার কাছে চাওয়ার মত কে আছ? আমি তাকে দান করব। কে আছে আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার প্রার্থনা কবুল করব। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। [বুখারী ও মুসলিম]
দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আদায় করবে। চার রাকাত জোহরের পূর্বে ও দু’ রাকাত পরে। দু’ রাকাত মাগরিবের পর। দু’ রাকাত এশার পর ও দু’রাকাত ফজরের পূর্বে।
উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি,
যে মুসলমান বান্দা বারো রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদা সালাত প্রতিদিন আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করেন। [মুসলিম]
প্রতি ফরজ সালাত আদায়ের পর কিছু সময় জিকির করবে। যেহেতু জিকির করতে আল্লাহ হুকুম করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ فَإِذَا قَضَيۡتُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمۡۚ ﴾ [النساء: ١٠٣]
‘অতঃপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন কর, তখন দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিকির করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি যখন ফরজ সালাত থেকে সালাম ফিরাতেন, তখন তিনবার ইস্তেগফার করতেন। অতঃপর এ দুআ পড়তেন।
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর ৩৩ বার سبحان الله ও ৩৩ বার الحمد لله ও ৩৩ বার الله أكبر মোট ৯৯ বার। সর্বশেষ ১০০ পূর্ণ করতে বলবে :
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
তাহলে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহ তা মাফ করে দিবেন। [মুসলিম]
সুতরাং হে আমার ভাইগণ! আপনারা অধিক পুণ্যের কাজ করুন। পাপ থেকে বেচে থাকুন। যাতে আপনাদের পার্থিব জীবন সুখময় হয়। মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী শান্তির অধিকারী হতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [النحل: ٩٧]
‘পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যে ঈমান সহ সৎকর্ম করে, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে কর্মের উত্তম পুরস্কার দেব’। {আন-নাহল : ৯৭}
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ঈমানের উপর মজবুত রাখুন এবং আমলে সালেহ করার তাওফীক দিন। হায়াতে তায়্যিবাহ দান করুন। আমাদেরকে পুণ্যবান ব্যক্তির সঙ্গী বানান। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি বিশ্ব জগতের পালনকর্তা। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার, সাহাবা ও সকল সৎকর্মশীল ব্যক্তির উপর। আল্লাহ তাআলা আমাদের ইখলাছের সাথে আমল করার, ঈমান ও সৎ আমলের উপর অটল থাকার তাওফীক দিন ও সৎ কর্মশীলদের অন্তভুক্ত করুন। আমীন
সমাপ্ত
লেখক : মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন
অনুবাদক: মোঃ সানাউল্লাহ নাজির আহমদ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব