আলী সাল্লাবী (হাফে) কয়েকজন সালাফদের মৃত্যুর ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন-
শায়খ ইবনে রজব (রহ) সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখছিলেন। যখন তিনি জানাযার অধ্যায়ে পৌঁছান, তিনি মারা যান।
শায়খ মুহাম্মদ আল মুখতার আল শানকিতি (রহ) মসজিদে নবীতে দরস দিতেন। তিনি ‘মদিনায় মৃত্যুবরণ ও দাফন হবার ফযীলত’- নিয়ে দারস দেয়ার পর মারা যান।
শায়খ মুহাম্মদ রাশিদ রিদা (রহ) এ আয়াতের তাফসীর লেখার পর আল্লাহর সমীপে আত্ননিবেদন করেন-
“হে আমার রব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক, আপনি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন!” [সূরা ইউসুফ ১২:১০১]
শায়খ মুহাম্মদ আল আমিন শানকিতি (রহ) একটি তাফসীর লিখছিলেন। যখন তিনি এ আয়াতে পৌঁছালেন-
“আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তারাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।” [সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:২২]
তিনি আল্লাহর কাছে চলে গেলেন।
ইবনে হাজার আসকালানী এই আয়াত পড়তে পড়তে আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছিলেন-
“পরম দয়ালু রবের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে ‘সালাম’।” [ ইয়াসীন ৩৬:৫৮]
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) মৃত্যুর সময়ে এই আয়াতটি পড়ছিলেন-
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে। যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।” [সূরা কামার ৫৪:৫৪-৫৫]
ইমাম আবু যুর’আহ আর রাযী (রহ) এই হাদীস বলার পর পৃথিবী ত্যাগ করেন-
“যাদের শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [আবু দাউদ, ৯১৭]
এ তো গেল, তাদের মৃত্যুর কথা যাদের রুহ উত্তম কাজে নিয়োজিত অবস্থায় আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছে। বিপরীত দৃষ্টান্তও আছে। ইমাম আয যাহবী (রহ) তার বইয়ে কয়েকটি অশুভ মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেনঃ
একজন লোক দাবা নিয়ে দিন-রাত মেতে থাকতো। যখন মৃত্যুর সময় তাকে কলেমা পড়তে বলা হলো, সে “চেক-মেট, চেক-মেট” বলতে থাকলো । আর এ অবস্থাতেই মারা গেলো।
একজন লোকের অভ্যাস ছিলো প্রচুর মদ পান করা। মৃত্যুর সময় তাকে কলেমা পড়তে বলা হলে সে উত্তর দিলো, “আমাকে একটু মদ এনে দাও।” আর সে অবস্থাতেই মৃত্যু তার কাছে এসে গেলো।
একজন শায়খ আরেক লোকের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন-
সে বিখ্যাত আরব শিল্পী উম কুলসুমের গানের ভক্ত ছিল । মৃত্যুর আগে লোকজন সেই গান বন্ধ করে কুর’আন চালু করে দিলো। লোকটা চিৎকার করে বলে উঠলো, “উম কুলসুমের গান প্লে করো। তার গান শুনলে আমার অন্তর ঠান্ডা হয়।”
তাই, আমি সারাজীবন আল্লাহর নাফরমানি করবো, আর মৃত্যুর আগে কলেমা পড়ে জান্নাতে চলে যাবো, ব্যাপারটা আসলে একটা সুষ্পষ্ট ভ্রান্তি। আত্ন-প্রবঞ্চনা । আমরা কয়জন মানুষকে দেখেছি যারা সারাজীবন আল্লাহর নাফরমানী করে মৃত্যুর আগে কলেমা পড়ে মরতে পেরেছে?
কবরে আমাদের সবাইকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। আল্লাহ না করুন, যদি কেউ ব্যর্থ হয় তখন খুব কুৎসিত এক ব্যক্তি কবরে প্রবেশ করবে। তাকে দেখে মৃত ব্যক্তিটি আঁতকে উঠে বলে উঠবে-
“তুমি কে? তোমার চেহারা তো কেবল অশুভ খবরের কথা বলে।”
লোকটি তখন জবাব দিবে- “আমি তোমার মন্দ আমল।” আমি তোমার রাতের বেলায় দেখা পর্ণগ্রাফী, আমি তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে রাতভর কথা বলা, আমি তোমার গীবত, আমি তোমার এলকোহল, আমি তোমার সুদ খাওয়া, আমি তোমার মানুষের সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করা, আমি তোমার মানুষকে মন্দ কাজে সহযোগিতা করা।
আর তখন একটি ঘোষণা দেয়া হবে, আর মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হবে- “তুমি এর উপর বেঁচেছো, এর উপর মরেছো আর এর উপরেই তোমাকে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে।”
ব্যস্ত জীবনে একটুখানি থমকে দাঁড়াই। একবার ভাবি। আমি কিসে ব্যস্ত আছে? আমার অধিকাংশ সময় কোন চিন্তায় আবর্তিত হচ্ছে?
মৃত্যু তো আসছে। কখন মরব তা তো আমরা জানি না।
কিন্তু কখনো কখনো নিজের জীবনটাই তো জানিয়ে দেয় কীভাবে আমাদের মৃত্যু ঘটবে।
***বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ মামুন হাসান সেলিম***