ভ্যালেন্টাইন ডে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

ভ্যালেন্টাইন ডে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস: পেছন ফিরে দেখা
ভালবাসা দিবস সম্পর্কে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীনের ফতোয়া :
ভালবাসা দিবস সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া

ভ্যালেন্টাইন ডে

মনে নেই সে দিনের কথা, নিশ্চয় করে। তবে ভোর হবে নিশ্চিত। তাজা, শিশির স্নাত, একটি লাল গোলাপ রেখে দিল আমলের বুকের উপর। আকস্মিকতার আশ্রয়ে এভাবেই চমকে দিল নাওরা তার বান্ধবীকে। ঈষ স্মিত মুখে জানান দিল, ‘আজকের উপহার।’ কীসের উপহার ?

‘আজ ভালোবাসা দিবস, ভ্যালেনটাইন ডে – জান না বুঝি ? এ দিনে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। গিফ্ ট দেয় একে অপরকে। আজ সত্যিকার, প্রকৃত ভালোবাসা দিবস – ভ্যালেনটাইন ডে।’ …নাওরা ইন্টারনেটে দেখা আরো অনেক স্মৃতির কথা শোনাচ্ছে। গর্বিত কণ্ঠ, একজন বিজ্ঞ পণ্ডিত। ‘সব সময় তার থেকে শিখি, অনেক দিন পর সুযোগ মিলেছে, আজ আমালকে নতুন জ্ঞান দেয়ার। আমাল নিশ্চুপ, কোনো প্রতিধ্বনি নেই তার মুখে। গভীর মনোযোগ দিয়ে নাওরার কথা শুনছে। ‘তুমি জান – ভ্যালেনটাইন-এর অর্থ কি ? তৃপ্তি মেশানো কণ্ঠে নাওরার প্রশ্ন। ‘এর অর্থ ভালোবাসা।’

হেসে দিল আমাল। এ ব্যাপারেও আমাল তার চেয়ে বেশি জানতো, জানতো না নাওরা। ভ্যালেনটাইন ডের অর্থ, উৎস, প্রভাব – নানান বিষয়ে অনেক কিছুই জানে সে। যা সচরাচর অন্য মেয়েরা জানে না। সে ভর্ সনা করে বলল, ‘উৎসব পালন করছ, অথচ সঠিক অর্থও জান না ? ভ্যালেনটাইন, একজন কৃশ্চিয়ানের নাম। সে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর পাদরি ছিল।’ আমাল ঘটনার বিবরণ দিল…। বলল, ‘ভ্যালেনটাইন ডে নিখাঁদ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একজন খ্রিস্টান পাদরিকে অমর করে রাখার নিমিত্তে তার স্মৃতিচারণ মাত্র। আমাল দুঃখ প্রকাশ করল। মেয়েদের যা শোনান হচ্ছে, তা সঠিক নয়। তাদের অনুসরণ অপরিণাম দর্শিতার পরিচয়।’

ভ্যালেনটাইন-ডে-র ইতিহাস

আমাল : ক্যাথলিক বিশ্ব কোষে ভ্যালেনটাইন সম্পর্কে তিনটি ব্যাখ্যা মিলে। বিভিন্ন বইয়ে লেখা প্রসিদ্ধ ঘটনাটির স্বরূপ এই-

ভ্যালেনটাইন, রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস এর আমলের লোক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রীয় বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্রাট তার মৃত্যুর আদেশ প্রদান করে। কীসের অভিযোগ ? আমাল বলল, সে ছিল কৃশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারক, সম্রাট ছিলেন রোমান দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাট এ জন্যই তাকে মৃত্যু দণ্ড দিয়েছে।

আরেকটি বর্ণনা : সম্রাট লক্ষ্য করেছেন, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিনতম মুহূর্তে ধৈর্যের পরিচয় বেশি দেয়, বিবাহিত যুবকদের তুলনায়। অনেক সময় তারা স্ত্রী-পুত্রের টানে যুদ্ধে যেতেও অস্বীকৃতি জানায়। তাই যুগল বন্দী তথা যে কোনো পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেন্ট ভেলেনটাইন এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। গোপনে তার গির্জায় পরিণয় প্রথা চালু রাখে।

এ খবর জানাজানি হলে সম্রাট তাকে জেল বন্ধী করার নির্দেশ প্রদান করে। জেলের ভেতর-ই পরিচয় ঘটে জেলার-এর এক অন্ধ মেয়ের সাথে। সে ছিল চিকি সক। বন্দি অবস্থাতেই চিকিৎসা করে অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেয় – বলে ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়। এভাবে ভেলেনটাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে লেখা এক চিঠিতে সে জানায় – ইতি তোমার ভ্যালেনটাইন। এর আগে-ই মেয়েটি ৪৬ জন সদস্যসহ তার কৃশ্চিয়ান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল।

তৃতীয় আরেকটি বর্ণনা : গোটা ইউরোপে যখন কৃশ্চিয়ান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালন করা হতো রোমিয় একটি কালচার। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি জারে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম বের হয়ে আসতো, সে পূর্ণ বৎসর ঐ মেয়েরে প্রেমে মগ্ন থাকত। সাথে সাথেই তাকে চিঠি লিখত, এ শিরোনামে, ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ তাদের মাঝে এ সম্পর্ক সারা বৎসর বিদ্যমান থাকত। বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ কালচারটি কতক পাদরির গোচরীভূত হলে তাদেরকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে। তারা মনে করল, একে সমূলে উ পাটন করাও অসম্ভব। তাই শুধু শিরোনামটি পাল্টে দিয়ে একে কৃশ্চিয়ান ধর্মায়ন করে দেয়া যায়। তাই নির্দেশ জারি করল, এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভেলেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ, এটা কৃশ্চিয়ান নিদর্শন, এভাবেই তারা ধীরে ধীরে কৃশ্চিয়ান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হবে।

আরেকটি বর্ণনা : ভেলেনটাইনকে ‘আতারিত’ – যা রোমানদের বিশ্বাসে ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনা ও দস্যুদের প্রভু – এবং ‘জুয়াইবেতার’ – যা রোমানদের সব চেয়ে বড় প্রভু – সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সে উত্তরে বলে, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসিহ।’

আমাল : দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! তারা যে সকল কথাবার্তা বলে, এর থেকে আল্লাহ পবিত্র, মহান ও অনেক ঊর্ধ্বে।

আমাল আরো বলল, জনৈক পাদরি বলেন, আমাদের পিতা-মাতারা এমন একটি ধর্মীয় নিদর্শনের বর্তমান পরিণতি দেখে ব্যথিত, বিষণ্ন। যেমন, কিছু কিছু কার্ডে দু’টি পাখা বিশিষ্ট একটি শিশু বাচ্চার, অন্তরের চার পাশে তীর তাক করে ঘুর্ণয়মান ছবি যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। ‘তুমি কি জান, এটা কীসের নিদর্শন বহন করে ?’ নাওরাকে জিজ্ঞাসা করল আমাল। এ নিদর্শনটিকে রোমানদের নিকট ভালোবাসার প্রভু মনে করা হয়।

সে আরো বলল, ভালোবাসা উদযাপন সম্পর্কীয় একটি চ্যানেল, ঐ নিদর্শনটির চার পাশে হৃদয়ের ছবি এঁকে মাঝে ক্রুশ চিহ্ন অঙ্কন করে দিয়েছে।

ভালবাসা দিবস উদ্ যাপন করার বিধান

আমাল এর সাথে যুক্ত হলো মাজেদা, সে ইয়াহুদ, নাসারাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্ যাপনের বিধান সম্পর্কে অনেক কিছু জানাল। সে বলল : কিছু সমাজ, যেখানে প্রকৃত মহব্বত ও ভালোবাসা বিরাজিত ছিল, পারিবারিক সম্পর্কে যারা ছিল নিঃস্বার্থ। ডিশ ও ইন্টারনেটের কুপ্রভাবে সে সকল মুসলিম পরিবারের কতক মেয়েরাও পাশ্চাত্য কালচার গ্রহণ করা শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে যারা তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছে এবং যারা ইসলামি সভ্যতায় ঈষ অভ্যস্ত। এটা মূলত মানসিক বিপর্যয়ের আলামত। সুতরাং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন প্রতিটি লোকের এ সম্পর্কে সচেতন থাকা অপরিহার্য। কেউ যাতে তাদের তথাকথিত সভ্যতার ধোঁকায় পতিত না হয়।

সাহাবি আবু অকেদ বলেন,

রসুল (ﷺ) খায়বার যাত্রায় মূর্তি পূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের নিকট যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর উপর তীর টানিয়ে রাখা হত। এ দেখে কতক সাহাবি রসুল (ﷺ)-কে বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। রসুল (ﷺ) ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ, এ তো মুসা (আঃ)-এর জাতির মত কথা। ‘আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর ন্যায়।’ আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে। (তিরমিজি- সহিহ-)

মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণ প্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ বিচারে এটি গর্হিত, নিন্দিত। বিশেষ করে অনুকরণীয় বিষয় যদি হয় আক্বীদা, এবাদত, ধর্মীয় আলামত অথবা জাতীয় কালচার, আর অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় বিধর্মী, বিজাতি। আফসোস! ক্রমশ মুসলিম ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে আসছে, আর বিজাতিদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশি বেশি আরম্ভ করছে। স্বকীয়তা ও নিজস্ব কালচার বিনষ্টকারী অনেক প্রথার অনাকাঙ্ক্ষিত ছয়-লাব হয়ে গেছে আমাদের ভেতর। যার অন্যতম ১৪ ফেব্রুয়ারি বা ভালোবাসা দিবস। অথচ এ দিনটি কৃশ্চিয়ান সেন্ট/পাদরি ভ্যালেনটাইনকে অমর করে রাখার উপলক্ষ্য মাত্র। তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে এ দিনটি পালন করবে, সে নিশ্চিত ইসলাম বহির্ভূত, কাফের। তাকে স্মরণীয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সে জঘন্য অপরাধী।

ইবনে কায়্যূম রহ. বলেন, ‘কাফেরদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তাদের শুভেচ্ছা জানানো একটি কুফরি কাজ। কারো দ্বিমত নেই এতে। যেমন তাদের ধর্মীয় ঈদ, উৎসব ও সওম উপলক্ষ্যে ‘ঈদ মোবারক’, ‘শুভেচ্ছা’ ইত্যাদি বলা। এগুলো কুফরি বাক্য না হলেও ইসলামি দৃষ্টিকোণ হতে হারাম। কারণ, এর অর্থ হল, একজন লোক ক্রুশ, মূর্তি ইত্যাদিকে সেজদা করছে, আর আপনি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এটা একজন মদ্যপ ও হত্যাকারীকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে বেশি জঘন্য, আল্লাহর অভিসম্পাদের বড় কারণ। বক ধার্মিক অনেক লোক অবচেতন ভাবেই এ সকল অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অথচ তারা জানেও না, কত বড় অপরাধ তারা করে যাচ্ছে। বেদআত, আর কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, ধন্যবাদ দিচ্ছে। এভাবেই আল্লাহর গোস্বা আর শাস্তিতে নিপতিত হচ্ছে।

আমাল : মাজেদা, ইসলামের ভেতর একটি বিধান আছে, ‘মুসলিমদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও কাফেরদের সাথে সম্পর্ক ছেদন’ এর সাথে তার ভূমিকা কি ?

মাজেদা : আমাদের পথিকৃ সাহাবা, নেককার পূর্ব পুরুষদের এটি একটি বৈশিষ্ট্য। তারা মোমিনদের সাথে সম্পর্ক কায়েম করতেন, কাফেরদের সাথে সম্পর্ক ছেদন করতেন। সুতরাং যারাই বিশ্বাস করে, ‘আল্লহ এক, তিনি ছাড়া কোনো প্রভু নেই, মুহাম্মদ তার রসুল।’ তাদের উচিত ও কর্তব্য, মুসলিমদের মুহব্বত করা, কাফেরদের ঘৃণা করা, তাদের সাথে বৈরিভাব পোষণ করা, তাদের আচার অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করা। এতেই আমরা নিরাপদ, এখানেই আমাদের কল্যাণ, অন্যথায় সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপরুন্ত, মুসলিমদের অনুষ্ঠানে একাত্মতা ঘোষণা করলে যেমন মুসলিমগণ খুশি হন, তাদের অন্তর সমূহ প্রফুল্ল বোধ করে। তদ্রুপ কাফেরদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলে তারা খুশি হয়, তাদের সাথে ঋদ্ধতা বাড়ে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘ও ইমানদারগণ, তোমরা কৃশ্চিয়ান, ইহুদিদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। যে তাদের সাথে মিশে গেল, সে অবাধ্য, তাদেরই একজন। আল্লহ অবাধ্যদের সৎ পথ দেখান না।’ (আল-মায়েদা : ১৫)

আল্লাহরসুল (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলছেন,

‘আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কেয়ামতের দিন বিশ্বাস করে, এমন কোনো জাতিকে আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যে আল্লাহ এবং তার রসুলের সাথে শত্রুতা পোষণ করে।’ (আল-মুজাদালা : ২২)

আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘যদি তোমাদের আল্লাহ এবং তার রসুলের উপর ইমান থাকে, তবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের বাইরে তোমরা কোনো করুণা দেখাবে না।’ (আন-নুর : ২)

তাদের সাথে সামঞ্জস্যের মারাত্মক দিক হল, এর দ্বারা তাদের অনুষ্ঠান প্রচার লাভ করে, প্রাধান্য বিস্তার করে অন্য সব অনুষ্ঠানের উপর। এর দ্বারাই রসুলের সুন্নত মিটে, বেদআতের প্রসার ঘটে। তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অথচ আমরা প্রতি রাকাতে পড়ি,

‘আমাদের সৎ পথ দেখান, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন তাদের পথ, অভিশপ্ত ও বিভ্রান্তাদের পথ নয়।’ (আল-ফাতেহা : ৬-৭)

আমরা কীভাবে এ কথাগুলো বলছি, অথচ স্বেচ্ছায় তাদের অনুকরণ করছি।

আমার কোনো বোন হয়তো বলবে, আমরা তাদের আক্বীদা বিশ্বাস গ্রহণ করি না, শুধু আপোশ মহব্বত, ভালোবাসা তৈরি করার নিমিত্তে এ দিনটি ব্যবহার করি। এটাও এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা। আমাল এর বক্তব্যে এ সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি, সে আরো জানিয়েছে, কীভাবে এক জন অপরিচিত মেয়ে একজন অপরিচিত ছেলের সাথে মাত্র একটি ফুল বিনিময় করে এ দিনটি উদ্ যাপন করে। একজন সতী-সাধি পবিত্র মুসলিম নারী মানুষের এ ধরনের নোংরামির সাথে কখনো জড়িত হতে পারে না।

এ দিনটি উদ্ যাপন কোনো স্বভাব সিদ্ধ ও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বরং একজন ছেলেকে একজন মেয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার পাশ্চাত্য কালচার আমদানিকরণ। আমরা সকলে জানি, তারা সমাজকে চারিত্রিক পদস্খলন ও বিপর্যয় হতে রক্ষা করার জন্য কোনো নিয়মনীতির ধার দ্বারে নয়। যার কু সিত চেহারা আজ আমাদের সামনে স্পষ্ট। আল্লহর মেহের বাণীতে তাদের কালচারের বিপরীতে আমাদের অনেক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। আমাদের নিকট ‘মা’র আসন অন্য যে কোনো জাতির দৃষ্টি হতে অনেক ঊর্ধ্বে। যে কোনো সময় তাকে উপহার উপঢৌকন দিতে পারি। তদ্রুপ, পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পরিজনদেরকেও। তবে তাদের সাথে এর বিনিময় করব অন্য কোন দিন।

উপহার দেয়া ভাল, এর দ্বারা পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয়। কিন্তু, এর সাথে কৃশ্চিয়ান কালচার, পাশ্চাত্য সভ্যতার মিশেল, মূলত তাদের সভ্যতা ও জীবন পদ্ধতির আমদানি।

মাজেদা : অবশ্য কতক ব্যবসায়ী অন্য আরেকটি কারণে এ দিনটি পেয়ে খুশি হন। তাদের ব্যবসা রমরমা ও জমাট হয়। প্রচুর পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়। অসংখ্য কার্ড সেল হয়। যেহেতু তাদের সাথে সামঞ্জস্য বৈধ নয়, তাই তাদের কর্মে উৎসাহ, উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, তাদের অনুষ্ঠানে প্রাণ সঞ্চার করে, এমন কাজও করতে নেই।

নাওরা অনুশোচনায় মুহ্যমান। হাত প্রসারিত করে ফুলটি সরিয়ে নিচ্ছে। অনুতপ্ত ও কৃতজ্ঞ কণ্ঠে বলল, এ উপদেশটিই আমার প্রয়োজন ছিল। এর দ্বারা আমি দৃষ্টি ফিরে পেয়েছি, কল্যাণের পথ চিনেছি, আল্লহর জন্য মহব্বত ও ভালোবাসা শিখেছি। ‘ও আল্লাহ আমাদের সে সব লোকের অন্তর্ভুক্ত কর, যাদের ব্যাপারে তুমি বলেছ্তো’যারা আমার জন্য পরস্পর মহব্বত করে, পরস্পর দেখা-সাক্ষা করে, পরস্পর উপহার বিনিময় করে, তাদের জন্য আমার মহব্বত অবধারিত।’

আল্লহ তুমি আমাদের জীবনকে প্রকৃত মহব্বত ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করে দাও। যা আমাদেরকে আসমান-জমিনসম প্রশস্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। আমাদের স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিত্ব তুমি হেফাজত কর। মুসলিমদের সংশোধন সুনিশ্চিত কর।

১. প্রশ্ন : শেষ জমানায় এসে ভালোবাসা দিবসটি ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর। এটি মূলত কৃশ্চিয়ানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ দিনে জামা, জুতো লাল রঙ্গের পরিধান করা হয়। পরস্পর লাল গোলাপ বিনিময় হয়। আপনার নিকট জানতে চাচ্ছি, এ ধরনের অনুষ্ঠান পালন করার বিধান কি ? এ সকল ক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য আপনাদের পরামর্শ কি?

উত্তর :

প্রথমত : এটি নতুন আবিষ্কৃত (বেদআত) একটি ঈদ, ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।

দ্বিতীয়ত : এ সকল আচার অনুষ্ঠান অন্তর কলুষিত করে দেয়। এ ধরনের অনুষ্ঠান উদ্ যাপন আমাদের পথিকৃ পুবসূরিদের নীতি ও আদর্শ বিরোধী। সুতরাং এ দিন তাদের উৎসব অনুষ্ঠানের কোন কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়। পানাহার, পরিচ্ছদ, উপহার সামগ্রী কিংবা অন্য যে কোনো জিনিসে। মুসলিমদের উচিত, স্বীয় ধর্ম ও কালচারের ব্যাপারে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট থাকা। অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তির অনুসরণ না করা। আল্লহ! তুমি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ফে না হতে মুসলিমদের হেফাজত কর। তাদের তওফিক দান কর। তুমিই সকল মুসলিমের অভিভাবক।

শাইখ উসাইমিন রহ. এর একটি ফতওয়া। ০৫/১১/১৪২০ হি.

সমাপ্ত

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : পেছন ফিরে দেখা

লেখক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা: কাউসার বিন খালেদ

সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

ভালোবাসা শুধু পবিত্র নয় পূণ্যময়ও বটে। নির্দোষ ও পরিশীলিত ভালোবাসা আমাদের ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ মসৃণ করে। সৃষ্টিজীবের প্রতি বিশেষ এবং পিতামাতা ও আল্লাহ-রাসূলের প্রতি সবিশেষ ভালোবাসা ছাড়া ঈমান পূর্ণতা লাভ করে না। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ.

‘ওই সত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন, তোমাদের কেউ সে পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তান থেকে বেশি প্রিয় হই।’ [বুখারী : ১৪]

অপর বর্ণনায় রয়েছে, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ».

‘তোমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে নিজ সন্তান, পিতা-মাতা ও সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসার পাত্র বলে বিবেচিত হই।’ [বুখারী : ১৫; মুসলিম : ১৭৮]

শুধু নিজেকে নয়; অন্যদেরও ভালোবাসতে বলা হয়েছে। প্রতিবেশিসহ সকল মুসলিম ভাইকে ভালোবাসার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। একে অন্যকে ভালোবাসার এমন অবিনাশী চেতনা ইসলাম ছাড়া অন্য কোথাও নেই। ভালোবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, একে অপরের প্রতি ভালোবাসার প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন,

﴿ مُّحَمَّد رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ ﴾ [الفتح: ٢٩]

‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়।’ {সূরা আল-ফাতহ, আয়াত : ২৯}

অন্য ভাইকে ভালোবেসে তার সার্বিক কল্যাণ ও শুভ কামনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ – أَوْ قَالَ لِجَارِهِ – مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ ».

‘তোমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না সে তার ভাই অথবা তিনি বলেছেন নিজের প্রতিবেশির জন্য তাই পছন্দ করে যা পছন্দ করে সে নিজের জন্য।’ [মুসলিম : ১৭৯]

একই সাহাবী থেকে বর্ণিত অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে,

«لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ ».

‘তোমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা পছন্দ করে সে নিজের জন্য।’ [বুখারী : ১৫; মুসলিম : ১৭৯]

ইসলাম শুধু অন্যকে ভালোবাসার কথাই বলেনি, নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্বে থেকে ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছে। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

«لاَ يَجِدُ أَحَدٌ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ حَتَّى يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَحَتَّى أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ وَحَتَّى يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا».

‘কোনো ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে না সে পর্যন্ত যাবত না সে মানুষকে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে। আর যাবত সে এমন (ঈমানদার) আল্লাহ তাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে পরিত্রাণ দেবার পর সে কুফরে ফিরে যাবার চেয়ে তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াই প্রিয়তর হয়। আর যাবত তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাঁদের ছাড়া অন্যদের চেয়ে প্রিয় না হয়।’ [বুখারী : ৬০৪১]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« أَنَّ رَجُلاً زَارَ أَخًا لَهُ فِى قَرْيَةٍ أُخْرَى فَأَرْصَدَ اللَّهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيدُ قَالَ أُرِيدُ أَخًا لِى فِى هَذِهِ الْقَرْيَةِ. قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا قَالَ لاَ غَيْرَ أَنِّى أَحْبَبْتُهُ فِى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ. قَالَ فَإِنِّى رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ ».

‘এক ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে অন্য জনপদে গেল। পথিমধ্যে আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে একজন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা তার কাছে এসে বললেন, কোথায় চললে তুমি? বললেন, এ গ্রামে আমার এক ভাই আছে, তার সাক্ষাতে চলেছি। তিনি বললেন, তার ওপর কি তোমার এমন কোনো নেয়ামত আছে যার প্রতিপালন প্রয়োজন? তিনি বললেন, না। তবে এতটুকু যে আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে আল্লাহর বার্তাবাহক হিসেবে এসেছি। আল্লাহ তোমাকে বার্তা জানিয়েছেন যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন যেমন তুমি তাকে তাঁর জন্য ভালোবাসো।’[মুসলিম : ৬৭১৪]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا. أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ ».

‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম। তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যাব না পরিপূর্ণ মুমিন হবে। আর তোমরা পূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ না একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের কথা বলে দেব না, যা অবলম্বন করলে তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’[মুসলিম : ২০৩]

বিভীষিকার রোজ কিয়ামতে যখন সূর্য মাথার হাতখানেক ওপর থেকে অগ্নি বর্ষণ করতে থাকবে, প্রখন তাপে মাথার মগজ গলে পড়বে, তখন সাত শ্রেণীর লোক মহা প্রভাবশালী আল্লাহর আরশের সুশীতল ছায়াতলে স্থান পাবে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ওই দুই ব্যক্তি যারা শুধু আল্লাহর জন্যই একে অপরকে ভালোবাসে, তার জন্য মিলিত হয় আবার তাঁর জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ فِي خَلاَءٍ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسْجِدِ وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ إِلَى نَفْسِهَا قَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا صَنَعَتْ يَمِينُهُ.

‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন নিজের ছায়া দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ন শাসক, আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন যুবক, ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ আর তার চোখ অশ্রু ফেলে, ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের ভালোবাসায় ঝুলে থাকে, ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, যে ব্যক্তিকে রূপবতী কুলীন কোনো নারী নিজের প্রতি আহ্বান করে আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং যে ব্যক্তি এমন সংগোপনে সদাকা করে যে তার বাম হাত জানতে পারে না ডান হাত কী করেছে।’ [বুখারী : ৬৮০৬; মুসলিম : ২৪২৭]

বান্দা যতক্ষণ অপর ভাইয়ের সাহায্য করে আল্লাহ পাকও তাকে সে অবধি সাহায্য করেন। ভালোবাসার অকৃত্রিম প্রেরণায় একে অপরকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নায় সৃষ্টজীব বিশেষত মানবসেবার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য বাণী বিবৃত হয়েছে। যেমন

« مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَاللَّهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ ».

“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে। আর যে কেউ ইলম অর্জনের কোন পথ দেখাবে, আল্লাহ তাকে এর কারণে জান্নাতের দিকে একটি পথ সুগম করে দিবেন, কিছু লোক যখন আল্লাহর কোন ঘরে বসে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং তা নিয়ে পরস্পর পাঠ করে তখনই সেখানে প্রশান্তি নাযিল করা হয়, রহমত তাদের ঢেকে যায়, আর ফেরেশতা তাদের ঘিরে থাকে এবং আল্লাহ তাঁর কাছে যারা আছে তাদের কাছে এদেরকে স্মরণ করেন, আর যার আ‘মাল তাকে ধীর করেছে তাকে তার বংশ দ্রুত করবে না।” [বুখারী : ৭০২৮]

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا ، أَوْ مَظْلُومًا قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ هَذَا نَنْصُرُهُ مَظْلُومًا فَكَيْفَ نَنْصُرُهُ ظَالِمًا قَالَ تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ.

‘তুমি তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো, চাই সে অত্যাচারী হোক কিংবা অত্যাচারিত। তখন তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) , অত্যাচারিতকে সাহায্য করার অর্থ তো বুঝে আসল, তবে অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তুমি তার হাত ধরবে (তাকে জুলুম থেকে বাধা প্রদান করবে)।’ [বুখারী : ২৪৪৪]

অর্থাৎ তুমি তোমার ভাইকে সর্বাবস্থায় সাহায্য করবে। যদি সে জালেম হয় তাহলে জুলুম থেকে তার হাত টেনে ধরবে এবং তাকে বাধা দেবে। আর যদি সে মজলুম হয় তাহলে সম্ভব হলে তাকে সাহায্য করবে। যদিও একটি বাক্য দ্বারা হয়। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দিয়ে। আর এটি সবচে দুর্বল ঈমান।

অপরের প্রতি দয়া ও সহযোগিতার হাত সেই বাড়িয়ে দিতে পারে সতত যার মন ভালোবাসায় টইটুম্বুর থাকে। অতএব ভালোবাসা কোনো পঙ্কিল শব্দ নয়, নয় কোনো নর্দমা থেকে উঠে আসা বা বস্তাপঁচা বর্ণগুচ্ছ। ভালোবাসা এক পুণ্যময় ইবাদতের নাম। ভালোবাসতে হবে প্রত্যেক সৃষ্টজীবকে, প্রতিটি মুহূর্তে। এর জন্য কোনো দিন নির্ধারণ করা, বিশেষ উপায় উদ্ভাবন করা মানব জাতির চিরশত্রু ইবলিসের দোসর ছাড়া অন্য কারও কাজ হতে পারে না।

কয়েক বছর পূর্বে এদেশে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’-এর আমদানি করে একটি প্রগতিশীল (?) সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। প্রতিযোগিতার বাজারে কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না বলে পরের বছর থেকেই অন্যান্য পত্রিকাও এ দিবসের প্রচারণায় নামে। এ দিবসটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষালয়গুলোতে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে রাজধানী ঢাকায় একটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকায়! কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও পার্কে তরুণ-তরুণীরা সোল্লাসে পালন করে এ দিবস। মূলত কার্ড ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিত্রেতারাই নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে এ দিবসের প্রচারণায় ইন্ধন যোগায়। এদিন যুবক-যুবতীরা যা করে তা শুধু ইসলামের দৃষ্টিতেই নয়, তথাকথিত আবহমানকালের বাঙালী সংস্কৃতির আলোকেও সমর্থনযোগ্য নয়।

ভালোবাসার জন্য কোনো বিশেষ দিবসের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ পাত্র বা পাত্রিরও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা করার জন্য বিশষ সময়, দিবস লাগে, বিশেষ পাত্র বা পাত্রীর দরকার পড়ে। তাই ভালোবাসার কোনো দিবস পালন করা একটি ভাওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। হ্যাঁ, বেহায়াপনার জন্য দিবস হতে পারে। কারণ অশ্লীলতা চর্চাকারীরা তাদের নির্লজ্জ আচরণ সবসময় করতে পারে না, সবার সাথে করতে পারে না। এর জন্য উপলক্ষ দরকার। যে দিবসের আড়ালে বেলেল্লাপনা চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোবাসা দিবস পালনের ধরন ও প্রকৃতিই আমাদের বক্তব্যের বস্তুনিষ্ঠতা প্রমাণে যথেষ্ট বলে মনে করি।

তাই আমরা এই দিবসের নাম রাখতে চাই ‘বিশ্ব বেহায়া দিবস’। এখন থেকে কুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন হবে বিশ্ব বেহায়া দিবস কবে? সঠিক উত্তর হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এভাবে এ দিবসের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসের যে ইতিহাস, তা জানলে কোনো মুসলিম সন্তান এ দিবস পালনে উৎসাহী হতে পারে না। তাই আসুন আমরা সংক্ষিপ্তভাবে এ দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য জেনে নেই।

ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের আগে চতুর্থ শতকে পৌত্তলিক, মূর্তিপূজারীদের সমাজে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেবতার অর্চনা করতে। পশু পাখির জন্য একজন দেবতা দেবতা কল্পনা করত। জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য একজন দেবতার বিশ্বাস করত। যে দেবতার নাম ছিল ‘লুপারকালিয়া’। এই দেবতার সন্তুষ্টির জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি ছিল যুবতীদের নামে লটারি ইস্যু করা। যে যুবতীর নাম যে যুবকের ভাগে পড়ত সে তার সাথে অগামী বছরের এ দিন পর্যন্ত বসবাস করত। এ দিন এলে দেবতার উদ্দ্যেশ্যে পশু জবাই করা হতো। জবাইকৃত পশুর চামড়া যুবতীর গায়ে পরিয়ে পশুটির রক্ত ও কুকুরের রক্তে রঞ্জিত চাবুক দিয়ে ছেলে-মেয়েকে আঘাত করত। তারা ভাবত এর দ্বারা নারী সন্তান জন্ম দেয়ার উপযুক্ত শাস্তি হয়। এ অনুষ্ঠানটি পালন করা হতো ১৪ ফেব্রুয়ারি।

খৃষ্টধর্মের আবির্ভাব হলে তারা এটাকে পৌত্তলিক কুসংস্কার বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু এতে দিবসটি পালন বন্ধ হয় না। পাদ্রীরা অপারগ হয়ে এ দিবসকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, আগে এ অনুষ্ঠান হতো দেবতার নামে, এখন থেকে হবে পাদ্রীর নামে। যুবকরা ১ বছর পাদ্রীর সোহবতে থেকে আত্মশুদ্ধি করবে। এদিনে সেই সোহবত শুরু ও শেষ হবে। ৪৭৬ সনে পোপ জোলিয়াস এ দিবসের নাম পরিবর্তনের পরে এ দিবসের নাম যাজক ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ রাখা হয়। ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে এ দিবসের নাম রাখার কারণ হলো এই খৃষ্টান যাজক কারাগারে বন্দি হওয়ার পর প্রধান কারারক্ষীদের মেয়ের সাথে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে প্রেমিকার উদ্দেশে একটি চিরকুট লিখে যান। এই জন্য খৃষ্টান সমাজে ‘প্রেমিকদের যাজক’ হিসেবে তার খ্যাতি লাভ হয়। এরপর থেকে তার মৃত্যু তারিখ তথা ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পালিত হতে শুরু করে।

আমাদের যুব সমাজকে এসব ইতিহাস জানতে হবে। খুতবা, বক্তৃতা ও সকল গণমাধ্যমে এ দিবসের জন্মপ্রথা ও তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। বুঝাতে হবে পৌত্তলিকদের উদ্ভাবিত, খৃষ্টানদের সংস্কারকৃত কোনো অনুষ্ঠান মুসলিমরা উদযাপন করতে পারে না। যুবসমাজ হলো জাতির প্রাণ। দেশের ভবিষ্য । যুবসমাজের নৈতিকতার পতন হওয়া মানে ওই জাতির ভবিষ্য ধ্বংস হওয়া। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা উস্কে দিয়ে শত্রুরা আমাদের ভবিষ্যতকে গলা টিপে হত্যা করতে চায়। যুবকদের নৈতিকতার বলকে বিচূর্ণ করে আমাদের দুর্বল করে দিতে চায়। যারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক, তারা এ দিবসকে সমর্থন করে দেশ ও জাতির সর্বনাশ করতে পারেন না। যারা প্রগতিশীল, সুশীল ইত্যাদি বিশেষণে নিজেদের বিশেষিত করেন, তাদের প্রতি অনূরোধ-দেশের ভবিষ্য সুরক্ষায় তরুণ-তরুণীদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অশ্লীলতার পথ থেকে ফেরান। তাদের নৈতিক পতন রোধ করুন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও উৎসবের নামে নীতি-নৈতিকতা ধ্বংসের প্রতিযোগিতা থেকে তাদের রক্ষা করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

প্রশ্ন:

শ্রদ্ধেয় শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (হাফেযাহুল্লাহ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভালবাসা দিবস’ উদযাপন অনেকের (বিশেষ করে ছাত্রীদের) মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে; যা খ্রিষ্টানদের একটি উৎসব। তখন প্রত্যেকের বস্ত্র হয় সম্পূর্ন লাল রঙের— পোশাক-জুতা সবই; আর তারা পরস্পরের নিকট লাল ফুল বিনিময় করে। শ্রদ্ধেয় শাইখের নিকট এ-জাতীয় উৎসব উদযাপন করার বিধান বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ রইল। তা-ছাড়া এ-রূপ বিষয়ে মুসলিমদের প্রতি আপনাদের দিকনির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাদের হেফাযত ও রক্ষা করুন॥

উত্তর:

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

কয়েকটি কারণে ‘ভালবাসা দিবস’ উদযাপন জায়েয নয়:—

প্রথমত: এটি একটি নব-উদ্ভাবিত বিদ‘আতী দিবস, শরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই।

দ্বিতীয়ত: এটি অনৈতিক-প্রেম পরিণতির দিকে মানুষকে ধাবিত করে।

তৃতীয়ত: এর কারণে সালাফে সালেহীনের পথ-পদ্ধতির বিরোধী এরূপ অর্থহীন বাজে কাজে মানুষের মন-মগজ ব্যস্ত করার প্রবণতা তৈরি হয়।

তাই এ-দিনে দিবস উদযাপনের কোনো কিছু প্রকাশ করা কখনও বৈধ নয়; চাই তা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-আশাক পরিধান, পরস্পর উপহার বিনিময় কিংবা অন্য কিছুর মাধ্যমেই হোক না কেন।

আর প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিজ দীন নিয়ে গর্বিত হওয়া এবং অনুকরণপ্রিয় না হওয়া: কেউ করতে দেখলেই সেও করবে, কেউ আহ্বান করলেই তাতে সাড়া দিবে, এমনটি যেন না হয়।

আল্লাহর নিকট দু‘আ করি, তিনি যেন প্রত্যেক মুসলিমকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাযত করেন; আর আমাদেরকে তিনি তাঁর অভিভাবকত্ব ও তাওফিক প্রদান করে ধন্য করেন।

লিখেছে : মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন

৫/১১/১৪২০ হি.

ভালবাসা দিবস সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া

ফতোয়াটি যারা সত্যায়ন করেছেন :

সৌদি আরবের গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ:

ফতোওয়াটি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদে বিশ্লেষণের পর এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে যে,

কুরআন সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামে ঈদ বা উৎসবের দিন মাত্র দু’টি। সালাফে সালেহীনগণও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামে স্বীকৃত ঈদ দুটির একটি হল ঈদুল ফিতর, অপরটি হল ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। উল্লিখিত ঈদ দু’টি ব্যতীত যত ঈদ বা উৎসব আছে, হোক না তা কোন ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তা বিদআত।

মুসলিমদের তা পালন করা বা পালন করতে বলা বৈধ নয় এবং এ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা ও এ ব্যাপারে কিছু দিয়ে সাহায্য করাও নিষেধ। কেননা এ ধরনের কাজ আল্লাহ তা’আলার সীমা লঙ্ঘন বৈ অন্য কিছু হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করবে সে নিজের উপর অত্যাচার করবে। এ ধরনের কালচার বিধর্মীদের অনুসরনের কল্পে গ্রহণ করা হলে অপরাধ আরো মারাত্বক হবে। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সদৃশ্যতা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে এক ধরনের বন্ধু বানানো হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে এ থেকে বারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, من تشبه بقوم فهو منهم

যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য।

ভালবাসা দিবস পালন করাও এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি খৃষ্টানদের উৎসব। যে মুসলিম আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এ কাজ করা দেয়া বা এই দিনে কাউকে ফুল বা অন্যকোনো উপহার দেয়া বৈধ নয়। বরং তার কর্তব্য হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম পালন করা এবং আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসে এমন কাজ থেকে নিজে দূরে থাকা ও অন্যদের দূরে রাখা।

অতএব এ দিবসকে কেন্দ্র করে পানাহার করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, কোন কিছু প্রস্তুত করা বা উপঢৌকন দেয়া, চিঠি-পত্র চালাচালি করা ও প্রচার-পত্র বিলি করা অবৈধ। এ সমস্ত কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ المائدة2

Share: