পরিচ্ছন্নতা জীবনকে সুন্দর করে
আবু আহমাদ
আমি মুসলিম। মুসলিমের অনন্য বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছন্নতা। মুসলিম ঈমান ও বিশ্বাসে পরিচ্ছন্ন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবন চলার ক্ষেত্রেও পরিচ্ছন্ন। মুসলিমের ঈমান র্শিক ও কুফ্র থেকে পরিচ্ছন্ন। তার পোশাক ও শরীর যাবতীয় নাপাকী থেকে পরিচ্ছন্ন। তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ অশ্লীলতা ও কপটতা থেকে পরিচ্ছন্ন। মোটকথা মুসলিমের ভেতরটাও থাকবে পরিচ্ছন্ন, বাহিরটাও থাকবে পরিচ্ছন্ন।
নবীজী সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকতেন, আমাদেরকেও সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম নবীজী আমাদের যে কাজের নির্দেশ করেছেন তা হলো মিসওয়াক করা। মিসওয়াকের মাধ্যমে আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। মুখ পরিচ্ছন্ন হয়। দাঁত ভালো থাকে। আমার মুখের দুর্গন্ধ দ্বারা অন্যে কষ্ট পায় না।
হাদীস শরীফে এসেছে- সকালে ঘুম থেকে উঠে নবীজী সবার আগে মিসওয়াক করতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৯৭৯
আমি যদি সকালে মিসওয়াক না করে ঘর থেকে বের হই তাহলে যার সাথেই আমার দেখা হবে সেই আমার মুখের দুর্গন্ধে কষ্ট পাবে। এটা আমি ভালোভাবে তখন বুঝতে পারি যখন অন্য কারো মুখের দুর্গন্ধে আমি কষ্ট পাই।
শুধু তাই নয়, নবীজী বাইরে থেকে যখন ঘরে ফিরতেন তো ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে মিসওয়াক করতেন; যাতে মুখের দুর্গন্ধের কারণে ঘরের মানুষ কষ্ট না পায়। আয়েশা রা. বলেন, নবীজী যখনই ঘরে প্রবেশ করতেন প্রথমে মিসওয়াক করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৩
মুখের পরিচ্ছন্নতা মানুষের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মিসওয়াকের বিষয়ে আমাকে এত বেশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আমার আশংকা হচ্ছিল, মিসওয়াক করা ফরয করে দেওয়া হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬০০৭
পরিচ্ছন্নতার আরেকটি দিক হলো পোশাকের পরিচ্ছন্নতা। এটিই আমাদের সবচেয়ে বেশি নযরে পড়ে। যার পোশাক পরিচ্ছন্ন থাকে তাকে আমরা পরিচ্ছন্ন বলি। যার পোশাক অপরিচ্ছন্ন থাকে তাকে বলি ‘নোংরা ছেলে’। আর পোশাক অপরিচ্ছন্ন থাকলে মন ও শরীরের উপর এর প্রভাব পড়ে। মন মরা মরা থাকে, মেযাজ খিটখিটে হয়ে যায়, শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। তার সাথে কেউ মিশতে চায় না।
নবীজী সব সময় পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন। সুতরাং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা একটি সুন্নত। আর নবীজী অপরিচ্ছন্ন পোশাক পছন্দ করতেন না। হযরত জাবের রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের বাড়িতে এলেন, …এক ব্যক্তির পোশাক ময়লা দেখে বললেন, সে কি তার কাপড় পরিচ্ছন্ন রাখার মত পানি পায় না? -সুনানে আবু দাউদ হাদীস ৪০৬২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৮৫০
দামী দামী পোশাক পরলাম কিন্তু তা পরিচ্ছন্ন রাখলাম না- সে দামী পোশাকের কোনো দাম নেই। তার চেয়ে কমদামী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক অনেক ভালো। সুতরাং আমরা সব সময় পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব।
পরিচ্ছন্নতার আরেকটি দিক হল, শরীর পরিচ্ছন্ন রাখা। আমি খুব সুন্দর একটা পোশাক পরলাম কিন্তু তিন দিন থেকে গোসল করি না, ফলে আমার শরীর থেকে ঘামের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে; তো সুন্দর পোশাক দেখে মানুষ আমার কাছে আসলেও শরীরের দুর্গন্ধে ভাগবে।
তা ছাড়া শরীর পরিচ্ছন্ন না থাকলে ঘা-পাচড়া হবে, আমাকে মানুষ ঘৃণা করবে। কেউ আমার সাথে মিশতে চাইবে না। আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে।
আমার ঘামের দুর্গন্ধে অন্য কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। তাই নবীজী বিশেষভাবে জুমার দিন গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, জুমার দিন মসজিদে অনেক মানুষের সমাগম হয়, এখন এর মধ্যে যদি গোসল না করার কারণে কিছু মানুষের শরীর থেকে ঘামের দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে অন্য সকলের কষ্ট হবে। জুমার মত এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে ব্যঘাৎ ঘটবে। যা কখনোই কাম্য নয়। তাই নবীজী ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন জুমার জন্য মসজিদে আসে সে যেন গোসল করে আসে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৭৭
শুধু গোসল নয় বরং নবীজী জুমার দিন গোসল করে, মিসওয়াক করে, আতর লাগিয়ে আসতে বলেছেন।
আর প্রতি জুমার দিন হাত-পায়ের নখ কাটতে হয়- এ কথা তো সবারই জানা। এটা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। হাদীস শরীফে নবীজী বলেছেন, “দশটি বিষয় মানুষের স্বভাবজাত; তার মধ্যে একটি হল, হাত-পায়ের নখ কাটা।” রুচিশীল মানুষ কখনো হাত-পায়ের নখ না কেটে থাকতে পারে না। যদি সময় মতো নখ না কাটা হয় তাহলে নখের মধ্যে ময়লা জমে; সেটা পেটে গিয়ে পেটের ক্ষতি করে। যারা নখ বড় রাখে তাদের আমরা কখনো রুচিশীল মানুষ বলতে পারি না। সুতরাং আমরা রুচিশীলতার পরিচয় দিব, সময় মতো নখ কাটব। পরিচ্ছন্ন থাকব।
এখানে পরিচ্ছন্নতার কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হল। আমি খেয়াল করলেই বুঝতে পারব, পরিচ্ছন্ন থাকতে হলে, রুচিশীল হতে হলে আমাকে আর কোন কোন দিক খেয়াল রাখতে হবে। আমার ঘর, পড়ার টেবিল, বিছানা-পত্র, কাথা-বালিশ, বাড়ির আঙিনা সবই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এসকল পরিচ্ছন্নতার সাথে সাথে আমাকে আরো কিছু বিষয়ে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আমার কথা-বার্তা যেন অশ্লীলতা ও গালিগালাজ থেকে পরিচ্ছন্ন থাকে। আমার চোখ যেন অশ্লীল ও অন্যায় দৃষ্টি থেকে পবিত্র থাকে। আমার অন্তর যেন হিংসা ও অহংকার থেকে পরিচ্ছন্ন থাকে। আমার সকল কাজ-কর্ম যেন আল্লাহর নাফরমানী থেকে পরিচ্ছন্ন থাকে। তাহলেই আমি হব পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল মানুষ। আমার জীবন হবে সুন্দর।