চারপাশের যা অবস্তা চোখ দিয়ে ধর্ষণ হচ্ছে অহরহ।
বোনদের জন্য দলিল ভিত্তিক উপদেশ
**** বাইরে বের হওয়ার আগে শরয়ী পর্দা করুন।
কারণ মহান আল্লাহ্ বলেন,
{يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلاَ يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوراً رَحِيماً}
অর্থাৎ, হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসীদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমণ্ডলের) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ্ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব ৫৯ আয়াত)
**** আর নবী (সাঃ) বলেন, ‘নারী গুপ্ত জিনিস; সুতরাং যখন সে (বাড়ি হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় করে দেখায়।’ (সহীহ তিরমিযী ৯৩৬নং)
**** আতর বা সেন্ট ব্যবহার করবেন না। কারণ মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর মহিলা যদি (কোন প্রকার) সুগন্ধ ব্যবহার করে কোন (পুরুষদের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তবে সে ব্যভিচারিণী (বেশ্যা মেয়ে)।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৪৫৪০নং)
***** মসজিদে গেলেও আতর লাগাতে পারবেন না।
আবু হুরাইরা (রাঃ) একদা চাশ্তের সময় মসজিদ থেকে বের হলেন। দেখলেন, একটি মহিলা মসজিদ প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ বা লেবাস থেকে উৎকৃষ্ট সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল। আবূ হুরাইরা মহিলাটির উদ্দেশে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ মহিলাটি সালামের উত্তর দিলেন। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় যাবেন আপনি?’ সে বলল, ‘মসজিদে।’ বললেন, ‘কি জন্য এমন সুন্দর সুগন্ধি মেখেছন আপনি?’ বললেন, ‘মসজিদের জন্য।’ বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ বললেন, ‘আল্লাহর কসম।’ পুনরায় বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ বললেন, ‘আল্লাহর কসম।’ তখন তিনি বললেন, ‘তবে শোনেন, আমাকে আমার প্রিয়তম আবুল কাসেম (সাঃ) বলেছেন যে, ‘সেই মহিলার কোন নামায কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকীর গোসল করার মত গোসল করে নেয়।’ অতএব আপনি ফিরে যান, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেলেন। তারপর ফিরে এসে নামায পড়েন।’
(আবূ দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৩১নং)
**** মাথায় খোঁপা বাঁধবেন না, যাতে বোরকার ভিতর থেকে চুল উঁচু হয়ে দেখা যায়। কারণ, মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামবাসী হবে যাদেরকে এখনো আমি দেখিনি। তন্মধ্যে প্রথম শ্রেণী হল সেই লোক, যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক; যার দ্বারা তারা লোকেদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই মহিলাদল, যারা কাপড় পরা সত্তেক্ষও যেন উলঙ্গ থাকবে, (যারা পাতলা অথবা খোলা লেবাস পরিধান করবেন।) এরা (পর পুরুষকে নিজের প্রতি) আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (তার প্রতি) আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে হিলে যাওয়া উটের কুজের মত। তারা জান্নাত প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ এত-এত দূরবর্তী স্থান হতে পাওয়া যাবে।”
(মুসলিম ২১২৮নং)
**** সফরে একা যাবেন না। সঙ্গে যাবে যে আপনার মাহরাম; অর্থাৎ, যার সাথে চিরতরের জন্য বিবাহ হারাম। দোলাভাই বা দেওরের সাথে নয়। সঙ্গে ছোট ছেলে বা মেয়ে থাকলেও না। অবশ্য বড় কোন আপনজন মহিলা থাকলে ভিন্ন কথা।
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন না করে এবং মাহরাম ছাড়া যেন কোন মহিলা একাকিনী সফর না করে।’ এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী (একাকিনী) হজ্জ করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়ে ফেলেছি। (এখন আমি কি করতে পারি?)’ তিনি বললেন, ‘তুমি ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর।”
(বুখারী ৩০০৬, মুসলিম ১৩৪১নং)
**** রাস্তার একধারে চলুন। মাঝে চলবে পুরুষরা। (আবূ দাঊদ, বাইহাকী)
এমন অলঙ্কার বা জুতা ব্যবহার ক’রে পথ চলবেন না, যাতে কোন প্রকার শব্দ বা বাজনা হয়। মহান আল্লাহ্ বলেন,
{وَلاَ يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ}
অর্থাৎ, তারা যেন এমন সজোরে পদক্ষেপ না করে যাতে তাদের গোপন আভরণ প্রকাশ পেয়ে যায়। (সূরা নূর ৩১ আয়াত)
**** চক্ষু অবনত ক’রে রাস্তার উপর নজর রেখে চলবেন। অর্থাৎ, পরপুরুষের দিকে তাকাতাকি করবেন না। মহান আল্লাহ্ বলেন,
{وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ}
অর্থাৎ, বিশ্ববাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে। ( সূরা নূর ৩১ আয়াত)
****এমন ভঙ্গিমায় চলবেন না, যাতে পরপুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। লাস্যময়ী ভঙ্গিমা অথবা হিহি-ফিফি ক’রে কথা বলতে বলতে পথ চলবেন না। যেহেতু তাতে আপনি ঐ আকর্ষণকারিণী মহিলাদের দলভুক্ত হয়ে যাবেন।
**********************************************
আদর্শ মুসলিম নারী
প্রণয়নে
আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাক্কিক আলিম ও দাঈ।।
>>>কৃতজ্ঞতাঃ- এহসানুল করিম ভাই<<<