গরমেও পেতে পারেন চরম নেকীঃ
___________
————
গ্রীষ্মের অন্যতম করণীয় পিপাসার্তকে পানি পান করানোঃ
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করেন, কোন দান উত্তম? তিনি বলেন, ‘পানি পান করানো।’(নাসাঈ)।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।
‘আল্লাহ দিন ও রাতের পরিবর্তন ঘটান। এতে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য চিন্তার উপকরণ রয়েছে।’(সূরা নূর : ৪৪)।
যারা চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, তাদের বিবেকবান বলা হয়েছে কোরআনের সূরা আলে ইমরানে। সুতরাং আল্লাহর অন্য ১০টি সৃষ্টির মতো ঋতু ও ঋতুর গমনাগমন এবং সৃষ্টি রহস্য নিয়েও একজন মোমিনের ভাবনা থাকতে হবে। জানতে হবে কোরআন ও সুন্নতের আলোকে ঋতুকেন্দ্রিক করণীয়।
________
গ্রীষ্মের উত্তাপ থেকে শিক্ষাঃ
গ্রীষ্মে একজন মোমিনের প্রথম করণীয়, গ্রীষ্মের তাপ থেকে জাহান্নামের তাপের প্রখরতা অনুমান করে আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়া। জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচন্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন একটি শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচ- উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচন্ড শীত অনুভব কর।’(বোখারি)।
এ হাদিসের আলোকে গরমের উৎপত্তিস্থল জাহান্নাম। সুতরাং অতিরিক্ত গরমে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে তা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া উচিত।
জোহরের নামাজ দেরিতে পড়াঃ
_______________
সাধারণত যে কোনো সালাতই শুরু ওয়াক্তে পড়া উত্তম। স্বাভাবিক সময়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ ওয়াক্ত হওয়ার পর বিলম্ব না করেই পড়তেন। (তিরমিজি)।
তবে অতিরিক্ত গরমে জোহরের নামাজ কিছুটা দেরি করে পড়া উত্তম। এটা নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন গরমের প্রচ-তা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচ-তা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।’ (বোখারি)। অবশ্য দেরি করে পড়তে গেলে সালাত বা জামাতই ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে আগে পড়ে নেওয়াই শ্রেয়।
___________
নফল রোজা রাখাঃ
গরমে রোজা শীতের রোজার চেয়ে কষ্টকর। আর সেই কষ্ট উপেক্ষা করে অনেক সাহাবি গ্রীষ্মকালে নফল রোজা রাখতেন। তাদের মধ্যে আবু বকর, ওমর, আয়েশা এবং আবু সাঈদ খুদরি প্রমুখ সাহাবি (রা.) ছিলেন।
ছায়াদার বৃক্ষ নিধন থেকে বিরত থাকা
গ্রীষ্মে রোদের কষ্ট থেকে রক্ষার জন্য মানুষ ছায়ার আশ্রয় নেয়। এ কারণে নবী (সা.) একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষের চলাচলের পথে অবস্থিত ছায়াদার বৃক্ষ কাটার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ)।
ছায়াদার বৃক্ষের নিচে তথা মানুষের বিশ্রামের স্থানে মূলমূত্র ত্যাগেও বিশেষ নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
_________________
গ্রীষ্মকে গালমন্দ বা ভৎর্সনা না করাঃ
অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে গরমকে গালমন্দ করেন বা অহেতুক বকেন। এটা অনুচিত। প্রথমত, গরম আল্লাহর একটি সৃষ্টি। আমাদের প্রয়োজনেই তিনি তা সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয়ত, নবী (সা.) বলেন, ‘মোমিন কখনও অভিশাপকারী, অশালীন ও গালিদাতা হতে পারে না।’ হাদিসে সময়কে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কিছুকে অভিশাপ দিল, যা আভিশাপের পাত্র হওয়ার মতো নয়, তবে সেই অভিশাপ তার নিজের ওপর এসে পতিত হয়।’ (তিরমিজি)।
___________
পিপাসার্তকে পানি পান করানোঃ
গ্রীষ্মের অন্যতম করণীয় পিপাসার্তকে পানি পান করানো। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করেন, কোন দান উত্তম? তিনি বলেন, ‘পানি পান করানো।’ (নাসাঈ)।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি। হাদিসে বলা হয়েছে, সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা। সুতরাং গ্রীষ্মকালে তৃষ্ণার্ত ব্যক্তিকে পানি পান করানো জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার অন্যতম উপায়। বনি ইসরাইলের এক পাপিষ্ঠ নারী একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে তার জীবন রক্ষার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (বোখারি)।
এ হাদিসের আলোকে জনৈক পূর্বসূরি বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে অনেক অপরাধী মনে করে, সে যেন তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণে উদ্যোগী হয়। মধ্যপ্রাচ্যে গ্রীষ্মের সময় বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে কিংবা পথচারী অথবা উন্মুক্ত স্থানে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে প্রচুর পরিমাণে শীতল পানি বণ্টনের অনুপম দৃষ্টান্ত দেখা যায়। অনেকে সওয়াবের আশায় পথ কিংবা মসজিদের ধারে ট্যাঙ্ক স্থাপন করে শীতল সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন।
_____
ঘর্মাক্ত শরীরে জনসমাগমে গমন না করাঃ
গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ করেছে ইসলাম। শুক্রবার মোমিনদের সপ্তাহিক বড় সমাগমের দিন। ঘামের গন্ধে যেন কারও কষ্ট না হয়, সেজন্য জুমার দিনে গোসল করে মসজিদে যেতে নির্দেশ করেছেন রাসুল (সা.)। সুতরাং দুর্গন্ধময় মুখ এবং শরীর নিয়ে মসজিদে যাওয়া নিষেধ। এ নির্দেশ সব জনসমাগমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোনো জনসমাগমেই ঘর্মাক্ত ও দুর্গন্ধময় শরীরে যাওয়া অনুচিত। কারণ তা অন্যের কষ্টের কারণ।
…….
♣ >>>>>লেখক : শায়খ আহমাদ উল্লাহ<<<<<<