কাজের কষ্টের কারণে রোযা ছাড়া যাবে কি?
উত্তরঃ এ সম্পর্কে ফতোয়া বিষয়ক সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা উত্তরে বলেনঃ যার প্রতি রোযা ফরয সে এই কারণে রোযার দিনে রোযা ছাড়তে পারে না যে, সে শ্রমিক। কিন্তু রোযা অবস্থায় কাজের সময় যদি তার দারুণ কষ্ট হয়, যার ফলে তাকে ইফতার করতে বাধ্য হতে হয়, তাহলে সে এতখানি ভক্ষণ করবে যার মাধ্যমে তার অতি কষ্ট দূর হবে। অতঃপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সে রোযা থাকবে এবং রোযাদারদের সাথে ইফতার করবে আর সেই দিনের রোযাটি অন্য সময়ে পূরণ করে দিবে। [ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১০/২৩৩, নকলকৃত, হারাম দেশের উলামাদের ফাতাওয়া,১/৮৯৮]
এই ফাতওয়া থেকে যা বুঝা যায় তা হল, রোযাদারের কাজ শক্ত ও কঠিন তাই সে রোযা ছাড়তে পারে না কিন্তু রোযা অবস্থায় শক্ত কাজ করতে গিয়ে যদি তার অবস্থা এমন হয়ে পড়ে যে কিছু না খেলে তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে, তার জীবনের ভয় হবে, তাহলে সে এতখানি খাবে যার মাধ্যমে সে তার সেই শোচনীয় অবস্থা থেকে নিরাপদ লাভ করবে। অতঃপর সে সারা দিনে খাবে না এবং অন্য সময়ে তাকে তা কাযা করে দিতে হবে।
পরীক্ষার কষ্টের কারণে ইফতার করা (রোযা ছাড়া) যাবে কি?
উত্তরঃ এ বিষয়ে সউদী আরবের সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ উসায়মীন (রহ) কে এক পরীক্ষার্থী জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ পরীক্ষার কারণে রামাযান মাসে তার ইফতার করা (রোযা ছাড়া) ভুল এবং এরকম করা অবৈধ। কারণ সে চাইলে রাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে। এখানে ইফতারের কোন প্রয়োজন নেই। তাই সে যেন তাওবা করে এবং তাকে তা কাযা করতে হবে। [ফাতাওয়া উলামাইল্ বালাদিল্ হারাম,১/৮৯৮]
এই রকম ভাইদের উদ্দেশ্যে কিছু পরামর্শঃ
যে সমস্ত মুসলিম ভাই শক্ত কাজ করে থাকেন কিংবা পড়া-শুনা সহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন এবং রোযা রাখতে কষ্ট হয়, এমন ভাইদের উদ্দেশ্যে নিম্নে কিছু পরামর্শ প্রদত্ত হলঃ
১-মানসিক প্রস্তুতিঃ
এটি একটি সত্য নিয়ম যে, মানসিক প্রস্তুতি অনেক কিছুকে সহজ করে দেয়; বরং কোন কিছুর সাফল্যের প্রথম সিঁড়িই হচ্ছে মানসিক প্রস্তুতি। মানুষ দুনিয়াবী কাজ-কর্মের ক্ষেত্রে কত প্রস্তুতি নেয়, কত পরিকল্পনা করে কিন্তু এক মাস ফরয রোযা পালনের ক্ষেত্রে কোন প্রস্তুতি নেয় না; অথচ একজন মুমিন তার দুনিয়াবী কাজের তুলনায় দ্বীনের কাজকে বেশী প্রাধান্য দেয়। তাই রোযার মাস আসার পূর্বে আমাদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সংকল্প নিতে হবে যে, আমি অবশ্যই রোযা পালন করবো। আর এমন সৎ নিয়ত থাকলে আল্লাহ তাআলা সেই কাজ করতে সাহায্য করবেন এবং তাওফীক দিবেন। পক্ষান্তরে দৃঢ় সংকল্প না নিলে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং আপনাকে এই ফরয ইবাদত থেকে দূরে রাখার জন্য সে যাবতীয় কৌশল গ্রহণ করবে এবং চক্রান্ত চালাবে।
২-সময় ও অবস্থা হিসাবে প্রস্তুতিঃ
এ ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সউদী আরবের অবস্থা ও ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করব। সউদী আরবে রোযার মাসে সরকারী দফতরগুলিতে সাধারণতঃ ছুটি থাকে না। এমন কি স্কুল কলেজগুলিতেও ছুটি থাকে না। তবে বর্তমানে তাদের নির্ধারিত বাৎসরিক গ্রীষ্মের ছুটি যে সময়ে হয় তাতে রামাযান মাস পড়ে বলে কয়েক বছর ধরে রামাযানে স্কুল কলেজ ছুটি থাকছে। কিন্তু অন্যান্য দফ্তরগুলিতে ছুটি নেই। তারা রামাযান মাসে রোযাও পালন করে এবং দৈনন্দীন কাজ-কর্মও করে। এ ক্ষেত্রে এখানকার সরকার এবং কম্পানীগুলো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যার ফলে লোকেরা রোযা সহ অফিসিয়াল কাজ-কর্ম সচল রাখতে পারে। উদাহারণ স্বরূপঃ
ক-সাধারণতঃ অফিস ও কম্পানীগুলিতে দৈনন্দীন কাজের নির্ধারিত সময় ৮ ঘন্টা। কিন্তু রামাযান মাসে তা কমিয়ে করা হয় ৬য় ঘন্টা। কম্পানী বিশেষে ৫ ঘন্টাও।
খ- কিছু সংস্থা ও কোম্পানী এমনও আছে যারা তাদের কাজ দিনে না করে রাতে নির্ধারণ করে। তারাবীর পর কাজ শুরু হয় আর সাহরীর কিছুক্ষণ পূর্বে শেষ হয়। যেহেতু এখানে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুতের সুব্যবস্তা রয়েছে তাই রাতে কাজের কোন অসুবিধা হয় না।
গ-অনেক সংস্থা এমনও আছে যারা ফজরের পর কাজ শুরু করে এবং সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত কাজ করে। অতঃপর সারাদিন ও রাত বিরতি থাকে যেন রোযা করতে সহজ হয়। এবং এই ধরণের আরও অন্যান্য সুন্দর পদক্ষেপ।
উপরের কার্য ব্যবস্থানুযায়ী আমরা আমাদের দেশের ঐ সকল ভাইদের কিছু পরামর্শ দিতে পারি, যারা বর্ণিত অজুহাতে ফরয রোযা ত্যাগ করে।
১-আপনারা সাধারণ দিনে যত বেশী সময় ধরে কাজ করেন, তার মাত্রা রামাযান মাসে কমাতে হবে কারণ আপনার উপর রোযা ফরয এবং আপনাকে তা পালন করা আবশ্যক।
২- ফজরের পর সরাসরি কাজ শুরু করা যেন দিনে রোদের তাপ প্রখর হওয়ার পূর্বে আপনি আপনার কাজের অনেকটা সমাধান করতে পারেন।
৩-ব্যবস্থা থাকলে রাতে কাজ করা। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম আলো ও চাঁদের আলোতে কাজ করা সহায়ক হতে পারে।
৪-আগে থেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, যেহেতু গ্রীষ্মে রোযা তাই রোযার কারণে কাজের কিছু ক্ষতি হতে পারে, তা সহ্য করতে হবে।
>>>>>CTC : Abdur Raquib Bukhari<<<<<