ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। মানব সমাজ থেকে ফেতনা-ফাসাদ জুলুম-অনাচার দূর করে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ উপহার দেওয়া ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য যুগে যুগে মানবতা বিচ্যুত মানুষকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু নবী-রাসূল সা. প্রেরণ করেছেন। যারা অন্ধকার জগতের বসিন্দাদের আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। দিশাহীনদের সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। অসহায় ও মাজলুমদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ইসলাম সব সময় মানবতার মুক্তির সুধা বিলি করেছে। কখনো তার অধপতনের কারণ হয়নি। মানবতা ও বিশ্ব-শান্তির ভয়ংকরতম শত্রু হচ্ছে ফেতনা-ফাসাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত শান্তির পৃথিবীকে কেউ যেন বিনষ্ট না করে তাই আল্লাহ তাআলা কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন।
ولا تفسدوا فى الارض بعد اصلاحها
শান্তি প্রতিষ্ঠার পর তোমরা জগতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না। (সূরা আ’রাফঃ ৫৬ )
শান্তি-শৃংখলায় বিঘœ ঘটে এমন কাজ ইসলাম নিষেধ করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কোন শরয়ী নিয়ম ছাড়া মানবহত্যাও ইসলাম কঠোরভাবে হারাম করেছে। ইরশাদ হচ্ছে-
انه من قتل نفسا بغير نفس او فساد فى الارض فكانما قتل الناس جميعا, ومن احياها فكانما احيا الناس جميعا.
কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে ফিতনা বিস্তারের কারণে না হয়। তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ রক্ষা করে সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো। (সূরা মায়েদাঃ ৩২)
এরপরের আয়াতে দলগতভাবে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও অন্যায়ভাবে সম্পদ লুন্ঠনকারীদের ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে-
انما جزاء الذين يحاربون الله و رسوله و يسعون فى الارض فسادا ان يقتلوا او يصلبوا او تقطع ايديهم و ارجلهم من خلاف او ينفوا من الارض, ذلك لهم خزى فى الدنيا و لهم فى الاخرة عذاب عظيم.
যারা আল্লাহ ও তার রাসূল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হবে। এটা তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।(সূরা মায়েদাঃ ৩৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
اول ما يقضى بين الناس يوم القيامة فى الدماء.
কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার।
(বুখারী, হাদিস নং-৬৫৩৩, মুসলিম, হাদিস নং-১৬৭৮)
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেতনা থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকার কথা বলেছেন-
ستكون فتن القاعد فيها خير من القائم و القائم خير من الماشى و الماشى فيها خير من الساعى من تشرف لها تشرف فمن وجد منها ملجأ او معاذا فليعذ به.
অচিরেই অনেক ফেতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চে’ উত্তম। দাঁড়ানো ব্যক্তি পদচারীর চে’ উত্তম, পদচারী ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চে’ উত্তম হবে। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায় তাহলে সে যেন তথায় আতœরক্ষা করে। (বুখারী, হাদিস নং-৭০৮১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃত মুমিন মুসলিমের পরিচয় সম্পর্কে বলেছেন,
المسلم من سلم الناس من لسانه و يده و المؤمن من أمنه الناس على دمائهم و اموالهم.
মুসলিমতো সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মানুষ নিরাপদ থাকে আর মুমিনতো সে, যার থেকে অন্য লোক নিজের জান ও মাল কে নিরাপদ মনে করে। (সুনানে নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-৪৯৯৫)
এ ছাড়াও অন্য এক হাদিসে ফিতনা সৃষ্টি করাতো দূরে থাক, জনমনে আতংক সৃষ্টি হয় এমন কোন আচরণ বা কর্ম করতেও নিষেধ করেছেন-হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
ان النبى صلى الله عليه و سلم فنهى ان يتعاطى السيف مسلولا.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উন্মুক্ত তরবারী লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং-২৫৮৮, তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৩)
অন্যত্র আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেন,
من أشار على أخيه بحديدة لعنه الملائكة.
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি ধারালো কিছু দিয়ে ইশারা করে তাহলে ফিরিশতাগণ তার উপর লা’নত করেন।
(সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬২)
উপরোল্লিখিত হাদিসদ্বয়ের মাধ্যমে বুঝা গেল, অন্য কাউকে কষ্ট দেয়াতো দূরের কথা, কষ্ট পাবার আশংকা আছে এমন কোন কাজ করাও নিষেধ।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানা গেলো, অশান্তি ও বিশৃংখলা ইসলাম সমর্থন করে না। কেউ যদি ইসলামের বিরুদ্ধে এসবের দায় চাপাতে চায় তাহলে মুসলিম উম্মাহর উচিত তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো।
সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই প্রতিয়মান হলো, ইসলাম সর্বপ্রকারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। যে কোন ধরণের ফিতনা-ফাসাদ- চাই তা যেখানেই হোক না কেন বা যার সঙ্গেই হোক না কেনো, এগুলোকে ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে।
ইসলামী বিধান সব যুগেই শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রদিত হয়েছে। অতএব, সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান ইসলাম ধর্মে নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সুমতি দান করুন। আমীন।