ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়লে বা না পড়লে স্বলাতের গ্রহনযোগ্যতা কতখানি ?

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়লে বা না পড়লে স্বলাতের গ্রহনযোগ্যতা কতখানি ?

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়লে বা না পড়লে স্বলাতের গ্রহনযোগ্যতা কতখানি ?
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

স্বলাতে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যকীয় বিষয়, যা না পড়লে স্বলাত হয় না। কিন্তু ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। তবে স্বলাত সরবে হোক বা নীরবে হোক প্রত্যেক স্বলাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। সূরা ফাতিহা না পড়ার পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয়, মুহাদ্দিছগণের নিকট সেগুলো সবই জাল ও যঈফ। এ নিয়ে তিন ধরনের আলোচনা রয়েছে। (এক) স্বলাত জেহরী কিংবা সের্রী হোক অর্থাৎ সরবে ক্বিরাআত পড়া হোক আর নীরবে পড়া হোক ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়তে পারবে না (দুই) সরবে ক্বিরাআত পড়া হলে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। ইমাম নীরবে ক্বিরাআত পড়লে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়বে (তিন) সকল স্বলাতে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সর্বশেষ আমলটিই সর্বাধিক দলীল ভিত্তিক। প্রথম মতের পক্ষে কোন দলীলই নেই। শুধু অপব্যাখ্যা ও দলীয় গোঁড়ামীর কারণে এটি বাজারে চলছে। যদিও অধিকাংশ মুছল্লী এরই জালে আটকা পড়েছে। দ্বিতীয় মতের পক্ষে কিছু আলোচনা রয়েছে। নিম্নে সূরা ফাতিহা না পড়ার দলীলগুলো পর্যালোচনা করা হল : ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা

(1) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ انْصَرَفَ مِنْ صَلَاةٍ جَهَرَ فِيْهَا بِالْقِرَاءَةِ فَقَالَ هَلْ قَرَأَ مَعِىْ أَحَدٌ مِنْكُمْ آنِفًا فَقَالَ رَجُلٌ نَعَمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِنِّىْ أَقُوْلُ مَالِىْ أُنَازِعُ الْقُرْآنَ قَالَ فَانْتَهَى النَّاسُ عَنْ الْقِرَاءَةِ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فِيْمَا جَهَرَ فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ الصَّلَوَاتِ بِالْقِرَاءَةِ حِيْنَ سَمِعُوْا ذَلِكَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ .

(১) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা জেহরী স্বলাতের সালাম ফিরিয়ে বললেন, এই মাত্র আমার সাথে তোমাদের কেউ কি ক্বিরাআত পড়ল? জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি পড়েছি। তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাথে কুরআন নিয়ে ঝগড়া করতে চাই না। উক্ত কথা শুনার পর লোকেরা জেহরী স্বলাত সমূহে ক্বিরাআত পড়া হতে বিরত থাকল।[1]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন,

وَقَوْلُهُ فَانْتَهَى النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ الزُّهْرِىِّ وَقَدْ بَيَّنَهُ لِى الْحَسَنُ بْنُ الصَّبَّاحِ قَالَ حَدَّثَنَا مُبَشِّرٌ عَنِ الْأَوْزَاعِىِّ قَالَ الزُّهْرِىُّ فَاتَّعَظَ الْمُسْلِمُونَ بِذَلِكَ فَلَمْ يَكُونُوا يَقْرَءُونَ مَعَهُ فِيْمَا يَجْهَرُ بِهِ

মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া বলেন, ‘লোকেরা ক্বিরাআত পড়া বন্ধ করল’ এই কথাটি যুহরীর। এটা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হাসান ইবনু ছাবাহ। তিনি বলেন, মুবাশ্শার আমাকে আওযাঈ থেকে হাদীছ শুনিয়েছেন যে, যুহরী বলেছেন, মুসলিমরা এ ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করেছে তাই তারা জেহরী স্বলাতে ক্বিরাআত পড়ত না।[2]

মূলকথা হল ‘লোকেরা ক্বিরাআত পড়া বন্ধ করে দিল’ অংশটুকু যুহরীর পক্ষ থেকে সংযোজিত এবং মারাত্মক ভুল। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,

فَانْتَهَى النَّاسُ إلَى آخِرِهِ مُدْرَجٌ فِي الْخَبَرِ مِنْ كَلَامِ الزُّهْرِيِّ بَيَّنَهُ الْخَطِيْبُ وَاتَّفَقَ عَلَيْهِ الْبُخَارِيُّ فِي التَّارِيْخِ وَأَبُوْدَاوُد وَيَعْقُوْبُ بْنُ سُفْيَانَ وَالذُّهْلِيُّ وَالْخَطَّابِيُّ وَغَيْرُهُمْ

‘মানুষরা ক্বিরাআত বন্ধ করে দিল’ অংশটুকু যুহরীর বক্তব্য হিসাবে হাদীছের সাথে সংযোজিত হয়েছে। খত্বীব এটি বর্ণনা করেছেন আর ইমাম বুখারী ‘তারীখের’ মধ্যে এর প্রতি একমত পোষণ করেছেন। অনুরূপ আবুদাঊদ, ইয়াকুব ইবনু সুফিয়ান, যুহলী, খাত্ত্বাবী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও একই মত ব্যক্ত করেছেন।[3] উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছকে আলবানী সহিহ বলেছেন এবং জেহরী স্বলাতে ক্বিরাআত না পড়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে তিনি যে অংশটুকু দ্বারা দলীল পেশ করেছেন তা মুহাদ্দিছগণের নিকট বিতর্কিত, যে পূর্বের আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে।

(২) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ صَلَّى رَسُوْلُ اللهِ صَلاَةً فَلَمَّا قَضَاهَا قَالَ هَلْ قَرَأَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مَعِىْ بِشَىْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ أَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنِّىْ أَقُوْلُ مَا لِىْ أُنَازِعُُ الْقُرْآنَ إِذَا أَسْرَرْتُ بِقِرَاءَتِى فَاقْرَءُوْا مَعِىْ وَإِذَا جَهَرْتُ بِقِرَاءَتِىْ فَلاَ يَقْرَأَنَّ مَعِىْ أَحَدٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) একদা কোন এক স্বলাত আদায় করে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আমার সঙ্গে কুরআনের কিছু অংশ পড়েছে? জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি পড়েছি। তখন তিনি বললেন, কুরআনের সাথে আমার ঝগড়া করা উচিত নয়। যখন আমি নীরবে ক্বিরাআত পড়ব তখন তোমরা আমার সঙ্গে পড়বে আর যখন স্বরবে পড়ব তখন তোমরা আমার সঙ্গে কেউ পড়বে না।[4]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মুনকার। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, যাকারিয়া নামক ব্যক্তি এককভাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছে। সে অস্বীকৃত রাবী ও পরিত্যক্ত।[5] ইমাম বায়হাক্বী বলেন, এই বর্ণনার সনদে ভুল রয়েছে।[6] ইয়াকূব ইবনে সুফিয়ান বলেন, নিঃসন্দেহে এটা ভুল।[7]

(৩) عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ يُصَلِّى بِالنَّاسِ وَرَجُلٌ يَقْرَأُ خَلْفَهُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ مَنْ ذَا الَّذِىْ يُخَالِجُنِىْ سُوْرَتِىْ فَنَهَاهُمْ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الإِمَامِ.

(৩) ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা মুছল্লীদের সাথে স্বলাত পড়ছিলেন, আর জনৈক ব্যক্তি তার পিছনে ক্বিরাআত পড়ছিল। যখন তিনি স্বলাত শেষ করলেন তখন বললেন, কোন্ ব্যক্তি সূরা পড়ে আমার সাথে দ্বন্দ্ব করল? অতঃপর তিনি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়তে নিষেধ করলেন।[8]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ ও মুনকার। ইমাম দারাকুৎনী ও বায়হাক্বী উভয়ে হাদীছটি বর্ণনা করে দুর্বল বলেছেন। এর সনদে হাজ্জাজ নামে একজন রাবী আছে। তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় না।[9]

(৪) عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ قَرَأَ خَلْفَ الْإِمَامِ مُلِئَ فُوْهُ نارًا.

(৪) যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত করবে তার মুখে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে।[10]

তাহক্বীক্ব : ডাহা মিথ্যা বর্ণনা। মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী বলেন, ‘এর সনদে মামূন বিন আহমাদ আল-হারভী আছে। সে বড় মিথ্যুক। জাল হাদীছ বর্ণনাকারী’।[11]

(5) قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَدِدْتُ أَنَّ الَّذِىْ يَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ فِىْ فِيْهِ حَجَرٌ.

(৫) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, আমার ইচ্ছা করে ঐ ব্যক্তির মুখে পাথর মারতে, যে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করে।[12]

তাহকবীক্ব : উক্ত বর্ণনা মুনকার, সহিহ নয়।[13] কারণ নিম্নের হাদীছটি তার প্রমাণ-

عَنْ يَزِيْدَ بْنِ شَرِيْكٍ أَنَّهُ سَأَلَ عُمَرَ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قُلْتُ وَإِنْ كُنْتَ أَنْتَ؟ قَالَ وَإِنْ كُنْتُ أَنَا قُلْتُ وَإِنْ جَهَرْتَ؟ قَالَ وَإِنْ جَهَرْتُ.

একদা ইয়াযীদ ইবনু শারীক ওমর (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ কর। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হৌন? তিনি বললেন, যদিও আমি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদিও আমি জোরে ক্বিরআত পাঠ করি।[14]

(৬) قَالَ ابْنُ مَسْعُوْدٍ وَدِدْتُ أَنَّ الَّذِىْ يَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ مُلِئَ فُوْهُ تُرَابًا.

(৬) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ে তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করতে আমার ইচ্ছা করে।[15] আসওয়াদ থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।[16] অন্য বর্ণনায় আবর্জনা মারার কথা রয়েছে।[17]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[18] ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এটি মুরসাল। এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না।[19]

(7) عَنْ سَعْدٍ قَالَ وَدِدْتُ أَنَّ الَّذِىْ يَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ فِىْ فِيْهِ جَمْرَةً.

(৭) সা‘দ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করে আমার ইচ্ছা হয় তার মুখে আগুনের অঙ্গার ছুড়ে মারতে।[20]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ ও মুনকার।[21] ইমাম বুখারী বলেন, এর সনদে ইবনু নাজ্জার নামে অপরিচিত রাবী আছে।[22]

(8) عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ قَيْسٍ قَالَ لَأَنْ أَعُضَّ عَلَى جَمْرَةٍ أَحَبَّ إِلَّى مِنْ أَنْ أَقْرَأَ خَلْفَ الْإِمَامِ.

(৮) আলক্বামা বিন কায়েস বলেন, আমার নিকট জ্বলন্ত অঙ্গার কামড়ে ধরা অধিক উত্তম, ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ার চেয়ে।[23] আসওয়াদ থেকেও অনুরূপ একটি বর্ণনা আছে।[24]

তাহক্বীক্ব : এর সনদ যঈফ ও ত্রুটিপূর্ণ।[25] বুকাইর ইবনু আমের নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[26]

(9) قَالَ حَمَّادٌ وَدِدْتُ أَنَّ الَّذِىْ يَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ مُلِئَ فُوْهُ سُكْرًا.

(৯) হাম্মাদ বলেন, আমার ইচ্ছা হয় ঐ ব্যক্তির মুখে মদ নিক্ষেপ করি, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ে।[27]

তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইমাম বুখারী বলেন, এ সমস্ত বর্ণনা যাদের নামে বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের পরষ্পরের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি।[28]

(১০) عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلاَنَ قَالَ قَالَ عَلِىٌّ مَنْ قَرَأَ مَعَ الْإِمَامِ فَلَيْسَ عَلَى الْفِطْرَةِ.

(১০) আলী (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ক্বিরাআত পাঠ করে সে (ইসলামের) ফিতরাতের উপর নেই।[29]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি সহিহ নয়। ইমাম বুখারী বলেন, এই হাদীছ সহিহ নয়। কারণ মুখতার অপরিচিত। সে তার পিতা থেকে শুনেছে কি-না তা জানা যায় না।[30] ইবনু হিববান তাকে বাতিল বলেছেন।[31]

জ্ঞাতব্য : উক্ত বর্ণনাগুলো ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার বিরুদ্ধে পেশ করা হয়। যদিও তাতে সূরা ফাতিহার কথা নেই। জেহরী স্বলাতে সূরা ফাতিহার পরের সাধারণ ক্বিরাআত পড়ার কথা বলা হয়েছে,[32] যা প্রকৃতপক্ষেই নিষিদ্ধ। এটা সহিহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।[33] এর পক্ষে অনেক সহিহ আছারও আছে। অতএব এগুলো ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার বিরুদ্ধে পেশ করা অন্যায়।

(11) عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ مَنْ قَرَأَ خَلْفَ الْإِمَامِ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ.

(১১) যায়েদ বিন ছাবিত বলেন, যে ইমামের পিছনে কিছু পড়বে তার স্বলাত হবে না।[34]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা।[35] এর সনদে আহমাদ ইবনু আলী ইবনু সালমান মারূযী নামে একজন রাবী আছে। সে হাদীছ জাল করত। ইবনু হিববান বলেন, এই হাদীছের কোন ভিত্তি নইে।[36]

(১২) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ صَلَّى رَكْعَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَلَمْ يُصَلِّ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ وَرَاءَ الإِمَامِ.

(১২) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি এক রাক‘আত স্বলাত আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা.পড়ল না তার স্বলাত হবে না। তবে ইমামের পিছনে থাকলে হবে।[37]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, এটা বাতিল বর্ণনা। মালেক থেকে বর্ণিত হয়নি।[38] মূলতঃ ‘তবে ইমামের পিছনে থাকলে হবে’ এই অংশটুকু ত্রুটিপূর্ণ।[39] তাছাড়া বর্ণনাটি মাওকূফ। উল্লেখ্য যে, মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে বর্ণনাটিকে রাসূল (ﷺ)-এর নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা প্রতারণার শামিল।[40]

(13) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِىِّ تَكْفِيْكَ قِرَاءَةُ الْإِمَامِ خَافَتَ أَوْ جَهَرَ.

(১৩) ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইমামের ক্বিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট। ইমাম আস্তে পড়ুন আর জোরে পড়ুন।[41]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর মধ্যে আছেম নামে একজন রাবী আছে। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, সে নির্ভরযোগ্য নয়।[42]

(14) عَنِ الْحَارِثِ قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِىِّ أَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ أَوْ أُنْصِتُ؟ قَالَ بَلْ أَنْصِتْ فَإِنَّهُ يَكْفِيْكَ .

(১৪) হারেছ থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করল আমি কি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত করব না চুপ থাকব? তিনি বললেন, চুপ থাক। ঐ ক্বিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট।[43]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, গাস্সান নামক ব্যক্তি দুর্বল। অনুরূপ কায়স ও মুহাম্মাদ বিন সালেম উভয়েই যঈফ।[44]

(১৫) قَالَ الشَّعْبِىُّ أَدْرَكْتُ سَبْعِيْنَ بَدْرِيَّا كُلُّهُمْ يَمْنَعُوْنَ عَنِ الْقِرَأَةِ خَلْفَ الْإِمَامِ.

(১৫) শা‘বী (রহঃ) বলেন, আমি ৭০ জন বদরী ছাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছি তারা প্রত্যেকেই ইমামের পিছনে কিরাআত পড়তে নিষেধ করতেন।[45]

তাহক্বীক্ব : ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। উক্ত বর্ণনার কোন সনদ পাওয়া যায় না।

সুধী পাঠক! উক্ত বর্ণনাগুলোর অবস্থা পরিষ্কার। এগুলো নির্ভরযোগ্য কোন হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি। মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ, ত্বাহাবী প্রভৃতির মধ্যে এসেছে। এ ধরনের ভিত্তিহীন বর্ণনা আরো আছে।[46] তবে রাসূল (ﷺ) থেকে কোন সহিহ বর্ণনা নেই। সুতরাং এ সমস্ত বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না। মূলতঃ এই সমস্ত বিরোধের জন্ম হয়েছে ইরাকের কূফাতে। ইমাম তিরমিযী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক মন্তব্য করেন, أَنَا أَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ وَالنَّاسُ يَقْرَءُوْنَ إِلَّا قَوْمًا مِنْ الْكُوفِيِّيْنَ ‘আমি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করি এবং অন্য মানুষেরাও করে। কিন্তু কূফাবাসী করে না’।[47] এগুলো পাঠকের সামনে পেশ করার কারণ হল, এই উদ্ভট বর্ণনাগুলো দ্বারা সাধারণ মুছল্লীদেরকে ধোঁকা দেয়া হয়। অতএব মুছল্লীদেরকে সাবধান থাকতে হবে।

জ্ঞাতব্য : ইবনু ওমর ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) জেহরী স্বলাতে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করতেন না মর্মে কিছু আছার বর্ণিত হয়েছে।[48] যেগুলোকে কেউ কেউ বিশুদ্ধ বলেছেন।[49] তবে বহু ছাহাবী থেকে ইমামের পিছনে সরাসরি সূরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে অনেক সহিহ আছার আছে। যেমন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ।

عَنْ يَزِيْدَ بْنِ شَرِيْكٍ أَنَّهُ سَأَلَ عُمَرَ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قُلْتُ وَإِنْ كُنْتَ أَنْتَ؟ قَالَ وَإِنْ كُنْتُ أَنَا قُلْتُ وَإِنْ جَهَرْتَ؟ قَالَ وَإِنْ جَهَرْتُ.

ইয়াযীদ ইবনু শারীক একদা ওমর (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ কর। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হোন? তিনি বললেন, আমিও যদি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদিও আমি জোরে ক্বিরআত পাঠ করি।[50]

রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমামের পিছনে মুক্তাদী শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সুতরাং সেদিকেই ফিরে যেতে হবে।

[1]. আবুদাঊদ হা/৮২৬, ১/১২০ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩১২, ১/৭১ পৃঃ; নাসাঈ হা/৯১৯।
[2]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম হা/৬৮, পৃঃ ৭১; তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৮।
[3]. ঐ, তালখীছুল হাবীর, ১/২৪৬।
[4]. দারাকুৎনী হা/১২৮০।
[5]. দারাকুৎনী تفرد به زكريا الوقاد وهو منكر الحديث متروك।
[6]. বায়হাক্বী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম হা/২৮২, পৃঃ ৩২১- غلط فى إسناده।
[7]. هذا خطأ لاشك فيه ولا اوتياب -তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ২৮৯।
[8]. দারাকুৎনী হা/১২৫৩, ১/৩২৬; বায়হাক্বী, কুবরা হা/৩০২২, ২/১৬২।
[9]. দারাকুৎনী হা/১২৫৩, ১/৩২৬-لَمْ يَقُلْ هَكَذَا غَيْرُ حَجَّاجٍ وَخَالَفَهُ أَصْحَابُ قَتَادَةَ مِنْهُمْ شُعْبَةُ وَسَعِيدٌ وَغَيْرُهُمَا فَلَمْ يَذْكُرُوا أَنَّهُ نَهَاهُمْ عَنِ الْقِرَاءَةِ. وَحَجَّاجٌ لاَ يُحْتَجُّ بِهِ.।
[10]. ইবনু হিববান, কিতাবুয যু‘আফা; ইবনু হাজার, আদ-দিরাইয়া ফী তাখরীজি আহাদীছিল হেদায়াহ, পৃঃ ১/১৬৫ পৃঃ; ইবনু তাহের, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৯৩।
[11]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৯, ২/৪১-فِيْهِ مَأْمُوْنُ بْنُ أَحْمَدَ الْهَرُوِىُّ دَجَّالٌ يَرْوِى الْمَوْضُوْعَاتِ।
[12]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৮০৬।
[13]. আত-তামহীদ ১১/৫০ পৃঃ – فمنقطع لا يصح ولا نقله ثقة
[14]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩০৪৭; সনদ সহিহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[15]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৭৮৯; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৮০৭-৯; ইরওয়া হা/৫০৩।
[16]. মালেক মুওয়াত্ত্বা হা/১২৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৮০৬; ত্বাহাবী হা/১৩১০।
[17]. বায়হাক্বী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ৪৫৩।
[18]. ইরওয়াউল গালীল ২/২৮১ পৃঃ।
[19]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০-وهذا مرسل لا يحتج به।
[20]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৭৮২; ইরওয়াউল গালীল ২/২৮১ পৃঃ।
[21]. ইরওয়াউল গালীল ২/২৮১ পৃঃ।
[22]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০-وهذا مرسل وابن بجاد لم يعرف ولا سمي ولا يجوز لأحد أن يقول في في القارئ خلف الإمام جمرة لأن الجمرة من عذاب الله وقال النبي صلى الله عليه وسلم لا تعذبوا بعذاب الله ولا ينبغي لأحد أن يتوهم ذلك عن سعد مع إرساله وضعفه।
[23]. মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ হা/১২৩; শারহু মা‘আনিল আছার হা/৩১১৫; ইরওয়াউল গালীল ২/২৮১ পৃঃ।
[24]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৭৮৫।
[25]. ইরওয়াউল গালীল ২/২৮১ পৃঃ।
[26]. তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ, ১/২০০ পৃঃ।
[27]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০; বায়হাক্বী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ৪৫৩।
[28]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০- لا يعرف لهذا الإسناد سماع بعضهم من بعض ولا يصح مثله।
[29]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ২/১৩৯; হা/২৮০১; দারাকুৎনী হা/১২৭০; ইরওয়াউল গালীল ২/২৮৩ পৃঃ; মাযহাবী বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৭০।
[30]. ইরওয়াউল গালীল ২/২৮২ পৃঃ।-لا يصح لأنه لا يعرف المختار ولا يدرى أنه سمعه من ابيه ام لا.
[31].لا يصح إسناده وقال ابن حبان في كتاب الضعفاء هذا يرويه ابن أبي ليلى الأنصاري وهو باطل ويكفي في بطلانه إجماع المسلمين وعبد الله بن أبي ليلى هذا رجل مجهول -তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ ১/১৯১ পৃঃ।
[32]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০।- فلو ثبت الخبران كلاهما لكان هذا مستثنى من الأول لقوله لا يقرأن إلا بأم الكتاب وقوله من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة جملة وقوله إلا بأم القرآن مستثنى من الجملة
[33]. সহিহ ইবনে হিববান হা/১৮৪১, তাহক্বীক্ব আলবানী, সনদ সহিহ লিগায়রিহী; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫; সহিহ মুসলিম হা/৮৭৮, ১/১৬৯-৭০; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ, হা/৭৬৬; আবুদাঊদ হা/৭৯৩, সনদ সহিহ।
[34]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৮০৯, ১/৪১৩ পৃঃ; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৮০২; মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ হা/১২৮।
[35]. ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৩; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯৩।
[36]. আল-মাজরূহীন ১/১৫১ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯৩-এর আলোচনা দ্রঃ।
[37]. ক্বাযী আবুল হাসান খালাঈ, আল-ফাওয়াইদ ১/৪৭ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩১৩, ১/৭১ পৃঃ; নবীজীর স. স্বলাত, পৃঃ ১৭১; মাযাহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৬৭।
[38]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৯১, ২/৫৭ هذا باطل لا يصح عن مالك
[39]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৯১। আলবানী বলেন, – قلت والحديث صحيح بدون قوله إلا وراء الإمام ।
[40]. ঐ, পৃঃ ২৬৭।
[41]. দারকুৎনী হা/১২৬।
[42]. ইরওয়াউল গালীল ২/২৭৫ পৃঃ عاصم ليس بالقوي।
[43]. দারাকুৎনী হা/১২৫।
[44]. দারাকুৎনী হা/১২৫; ইরওয়াউল গালীল ২/২৭৬ পৃঃ تفرد به غسان وهو ضعيف وقيس ومحمد بن سالم ضعيفان।
[45]. রূহুল মা‘আনী ৯/১৫২; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৭০।
[46]. ত্বাহাবী হা/১৩১৬; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৭০।
[47]. তিরমিযী ১/৭১ পৃঃ।
[48]. মাজমাউয যওয়ায়েদ ২/১১০-১১১; ত্বাহাবী ১০৭; মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ, পৃঃ ৪৫; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/৩৭৬; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৬৯; মালেক মুওয়াত্ত্বা, ১ম খন্ড হা/২৮৩; ত্বাহাবী পৃঃ ১২৯; নবীজীর স. স্বলাত, পৃঃ ১৭০; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৬৯।
[49]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[50]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩০৪৭; সনদ সহিহ, সিলাসলা যঈফাহ হা/৯৯২-এর আলোচনা দ্রঃ।

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার সহিহ হাদীছ সমূহ :

ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয। কারণ কেউ স্বলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করলে তার স্বলাত হয় না।

(1) عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

(১) উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার স্বলাত হয় না’।[1] ইমাম বুখারী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করার পূর্বে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, بَابُ وُجُوْبِ الْقِرَاءَةِ لِلْإِمَامِ وَالْمَأْمُوْمِ فِى الصَّلَوَاتِ كُلِّهَا فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ وَمَا يُجْهَرُ فِيْهَا وَمَا يُخَافَتُ ‘প্রত্যেক স্বলাতে ইমাম-মুক্তাদী উভয়ের জন্য ক্বিরা‘আত (সূরা ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফর অবস্থায় হোক, জেহরী স্বলাতে হোক বা সের্রী স্বলাতে হোক’।[2]

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ পেশ করে ব্যাখ্যা দেয়া হয় যে, এই হাদীছ একাকী স্বলাতের জন্য। অথচ উক্ত দাবী সঠিক নয়; বরং বিভ্রান্তিকর। দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলে জামা‘আতে স্বলাত আদায়ের সময় যোহর ও আছর স্বলাতে এবং মাগরিবের শেষ রাক‘আতে ও এশার স্বলাতের শেষ দুই রাক‘আতেও কি সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না? কারণ মুক্তাদী তো একাকী নয়, ইমামের সাথে আছে? অথচ যোহর ও আছরের স্বলাতে মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা সহ অন্য সূরাও পাঠ করতে পারবে মর্মে সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[3]

তাছাড়া একাকী বলতে মৌলিক কোন স্বলাত আছে কি? ফরয স্বলাত তো জামা‘আতেই পড়তে হবে। এমনকি কোথাও দুইজন থাকলেও জামা‘আত করে স্বলাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[4] কখনো কখনো ফরয স্বলাত একাকী পড়া হয়। তাহলে ঐ হাদীছটি কি শুধু কখনো কখনো একাকী স্বলাতের জন্য প্রযোজ্য? না শুধু নফল স্বলাতের জন্য? আর নফল স্বলাত তো কেউ না পড়লেও পারে। তাহলে উক্ত হাদীছের ব্যাপারে এ ধরনের দাবী কিভাবে যথার্থ হতে পারে? এ জন্য ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য প্রায় সকল মুহাদ্দিছ জামা‘আতে পড়ার পক্ষেই উক্ত হাদীছ পেশ করেছেন।[5] অতএব উক্ত হাদীছ জামা‘আত ও একাকী উভয় অবস্থার সাথেই সম্পৃক্ত।

(2) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ مَنْ صَلَّى صَلاَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهْىَ خِدَاجٌ ثَلاَثًا غَيْرُ تَمَامٍ فَقِيْلَ لأَبِىْ هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِىْ نَفْسِكَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ قَالَ اللهُ تَعَالىَ قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ قَالَ اللهُ حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ قَالَ اللهُ تَعَالى أََثْنَى عَلَىَّ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ قَالَ مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ قَالَ هَذَا بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ قَالَ هذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ.

(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন স্বলাত আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার স্বলাত অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। তখন আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে থাকি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি চুপে চুপে পড়। কেননা আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি স্বলাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য সেই অংশ যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময়, পরম দয়ালু)। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’ (যিনি বিচার দিবসের মালিক) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি)। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার জন্য আর প্রার্থনা বান্দার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে, যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, ছিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম, গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায য-ল্লীন (আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চেয়েছে তা তার জন্য’।[6] (আমীন)।

উক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম-মুক্তাদী সকলেই সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সূরা ফাতিহা শুধু ইমামের জন্য নয়। কারণ আল্লাহর বান্দা শুধু ইমাম নন, মুক্তাদীও আল্লাহর বান্দা। আর আবু হুরায়রাহ (রাঃ) সেটা বুঝানোর জন্যই উক্ত হাদীছ পেশ করেছেন। অতএব ইমামের পিছনে মুক্তাদীও সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

(3) عَن رِفَاعَةَ بْنِ رَافعٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ فَصَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ فَقَالَ النَّبِيُّ أَعِدْ صَلَاتَكَ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَقَالَ عَلِّمْنِىْ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَيْفَ أُصَلِّي؟ قَالَ إِذَا تَوَجَّهَتَ إِلَى الْقِبْلَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ وَمَا شَاءَ اللهُ أَنْ تَقْرَأَ..

(৩) রিফা‘আ বিন রাফে‘ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে আসল এবং স্বলাত আদায় করল। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-কে সালাম দিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি স্বলাত ফিরিয়ে পড়। নিশ্চয় তুমি স্বলাত আদায় করনি। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে স্বলাত শিক্ষা দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি ক্বিবলামুখী হবে তখন তাকবীর দিবে। অতঃপর সূরা ফাতিহা পড়বে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আরো কিছু অংশ পাঠ করবে..। [7]

[1]. সহিহ বুখারী হা/৭৫৬, ১/১০৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২০, ২/১০৯ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৫; সহিহ মুসলিম ১/১৬৯ পৃঃ, মুসলিম হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ৯০৬, ৯০৭ (ইফাবা হা/৭৫৮, ৭৫৯, ৭৬০, ৭৬২); মিশকাত পৃঃ ৭৮, হা/৮২২ ও ৮২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৫, ৭৬৬, ২/২৭২ পৃঃ, ‘স্বলাতে ক্বিরআত পাঠ করা’ অনুচ্ছেদ।
[2]. সহিহ বুখারী ১/১০৪ পৃঃ, হা/৭৫৬-এর অনুচ্ছেদ দ্রঃ।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ সহিহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬।
[4]. বুখারী হা/৬৫৮, ১/৯০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬২৫, ২/৬২ পৃঃ); মুসলিম হা/১৫৭০, ১/২৩৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪০৭); তিরমিযী হা/২০৫; মিশকাত হা/৬৮২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩১, ২/২০৭ পৃঃ, ‘আযানের সংশ্লিষ্ট’ অনুচ্ছেদ।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/৮৩৭।
[6]. সহিহ মুসলিম হা/৯০৪, ১/১৬৯-৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৬২), ‘স্বলাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ।
[7]. আবুদাঊদ হা/৮৫৯, ১/১২৫ পৃঃ; মিশকাত হা/৮০৪, পৃঃ ৭৬; সহিহ ইবনে হিববান হা/১৭৮৪, সনদ সহিহ।

অপব্যাখ্যা ও তার জবাব :

(এক) জেহরী ও সের্রী কোন স্বলাতেই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। দলীল হিসাবে নিম্নের আয়াত ও কিছু হাদীছ পেশ করা হয়।

(ক) আল্লাহ বলেন, وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهُ وَأَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ ‘আর যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। তোমাদের উপর রহম করা হবে’ (আ‘রাফ ২০৪)। আরো বলা হয় যে, স্বলাতে কুরআন পাঠ করার বিরুদ্ধেই উক্ত আয়াত নাযিল হয়।

পর্যালোচনা : মূলতঃ উক্ত আয়াতে তাদের কোন দলীল নেই। বরং তারা অপব্যাখ্যা করে এর হুকুম লংঘন করে থাকে। কারণ কুরআন পাঠ করার সময় চুপ থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে বলা হয়েছে। কিন্তু যোহর ও আছরের স্বলাতে এবং মাগরিবের শেষ রাক‘আতে ও এশার শেষ দুই রাক‘আতে ইমাম কুরআন পাঠ করেন না। অথচ তখনও তারা সূরা ফাতিহা পাঠ করে না।

দ্বিতীয়তঃ সূরা ফাতিহা উক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই উক্ত আয়াতের আমল বিদ্যমান। কারণ সূরা ফাতিহার পর ইমাম যা-ই তেলাওয়াত করুন মুক্তাদী তার সাথে পাঠ করে না, যদি ইমাম ছোট্ট কোন সূরাও পাঠ করেন। বরং মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে থাকে। তাছাড়া উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর। আর তিনিই সূরা ফাতিহাকে এর হুকুম থেকে পৃথক করেছেন এবং চুপে চুপে পাঠ করতে বলেছেন।[1] আর এটা আল্লাহর নির্দেশেই হয়েছে।[2] এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়াতের হুকুম ব্যাপক। সর্বাবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।[3]

তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলাও সূরা ফাতিহাকে কুরআন থেকে পৃথক করে উল্লেখ করেছেন। রাসূল (ﷺ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, وَلَقَدْ آَتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآَنَ الْعَظِيْمَ ‘আমি আপনাকে মাছানী থেকে সাতটি আয়াত এবং মহান গ্রন্থ আল-কুরআন দান করেছি’ (সূরা হিজর ৮৭)। সুতরাং সূরা ফাতিহা ও কুরআন পৃথক বিষয়। যেমন ভূমিকা মূল গ্রন্থ থেকে পৃথক। এটি কুরআনের ভূমিকা। ভূমিকা যেমন একটি গ্রন্থের অধ্যায় হতে পারে কিন্তু মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তেমনি সূরা ফাতিহা কুরআনের ভূমিকা। আর ‘ফাতিহা’ অর্থও ভূমিকা। অতএব ক্বিরাআত বলতে সূরা ফাতিহা নয়। যেমন ইমাম বুখারী (রহঃ) পরিষ্কারভাবে দাবী করেছেন।[4] অনুরূপ ইবনুল মুনযিরও বলেছেন।[5]

(খ) যোহর ও আছরের স্বলাতে সূরা ফাতিহা না পড়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ইমামের আগেই যদি মুক্তাদীর ক্বিরাআত পড়া হয়ে যায়, তাহলে ইমামের অনুসরণ করা হবে না। তাছাড়া ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে কোন প্রমাণ ছাড়াই জোরপূর্বক লেখা হয়েছে, فَاسْتَمِعُوْا لَهُ وَأَنْصِتُوْا ‘শব্দ দুটি সুস্পষ্টভাবে একথার প্রমাণ করে যে, যদি ইমাম উচ্চ আওয়াজে কিরাত পড়ে তাহলে মুক্তাদীর কর্তব্য হচ্ছে, সে মনোযোগের সাথে উক্ত কিরাত শ্রবণ করবে। আর (দ্বিতীয় শব্দটি অর্থাৎ وَأَنْصِتُوْا (নীরব থাকবে) বলার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,) যদি ইমাম নিম্ন আওয়াজেও কিরাত পড়ে তাহলেও মুক্তাগীন (মুক্তাদীগণ) নীরবই থাকবে, কিছুই পড়বে না’।[6]

পর্যালোচনা : সুধী পাঠক! পবিত্র কুরআনের আয়াতটির কিভাবে উদ্ভট ব্যাখ্যা দেয়া হল তা কি লক্ষ্য করেছেন? মনে হল, আয়াতটা লেখকের উপরই নাযিল হয়েছে। তা না হলে এভাবে কেউ ব্যাখ্য দিতে পারেন? যেখানে শর্ত করা হয়েছে, কুরআন যখন তেলাওয়াত করা হবে তখন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং চুপ থাকতে হবে। এর মধ্যে কিভাবে যোহর ও আছর স্বলাত অন্তর্ভুক্ত হল? মূল কারণ হল, এই অপব্যাখ্যা ছাড়া তাদের জন্য অন্য কোন উপায় নেই। অথচ যোহর ও আছর স্বলাতে মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা তো পড়বেই তার সাথে অন্য সূরাও পড়তে পারে। উক্ত মর্মে সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كُنَّا نَقْرَأُ فِى الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ خَلْفَ الإِمَامِ فِى الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُوْرَةٍ وَفِى الأُخْرَيَيْنِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা যোহর ও আছর স্বলাতে প্রথম দুই রাক‘আতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করতাম। আর পরের দুই রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করতাম।[7]

ইমামের অনুসরণের যে দাবী করা হয়েছে, তাও অযৌক্তিক। কারণ রুকূ, সিজদা, তাশাহ্হুদ, দরূদ, দু‘আ মাছূরাহ সবই ইমাম-মুক্তাদী উভয়ে প্রত্যেক স্বলাতে পড়ে থাকে। সে ব্যাপারে কখনো প্রশ্ন আসে না যে, ইমাম আগে পড়লেন, না মুক্তাদী আগে পড়লেন। সমস্যা শুধু সূরা ফাতিহার ক্ষেত্রে। আরো দুঃখজনক হল, ফজর, মাগরিব কিংবা এশার স্বলাতের ক্বিরাআত চলাকালীন একজন মুক্তাদী স্বলাতে শরীক হয়ে প্রথমে নিয়ত বলে, তারপর জায়নামাজের দু‘আ পড়ে অতঃপর তাকবীর দিয়ে ছানা পড়ে থাকে। অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। তাহলে সূরা ফাতিহা কী অপরাধ করল? ক্বিরাআত অবস্থায় যদি সূরা ফাতিহা না পড়া যায় তাহলে উদ্ভট নিয়ত, জায়নামাজের ভিত্তিহীন দু‘আ ও ছানা পড়ার দলীল কোথায় পাওয়া গেল? অতএব যারা কোন স্বলাতেই, কোন রাক‘আতেই সূরা ফাতিহা পড়া জায়েয মনে করে না, তাদের জন্য উক্ত আয়াতে কোন দলীল নেই। তাদের দাবী কল্পনাপ্রসূত, উদ্ভট, মনগড়া ও অযৌক্তিক।

[1]. সহিহ ইবনে হিববান হা/১৮৪১, তাহক্বীক্ব আলবানী, সনদ সহিহ লিগায়রিহী; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫। মুহাক্কিক হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ।
[2]. নাজম ৩-৪; আবুদাঊদ হা/১৪৫।
[3]. মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/১২৫ পৃঃ।
[4]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০-فلو ثبت الخبران كلاهما لكان هذا مستثنى من الأول لقوله لا يقرأن إلا بأم الكتاب وقوله من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة جملة وقوله إلا بأم القرآن مستثنى من الجملة كقول النبي صلى الله عليه وسلم جعلت لي الأرض مسجدا وطهورا ثم قال في أحاديث أخرى إلا المقبرة وما استثناه من الأرض والمستثنى خارج من الجملة وكذلك فاتحة الكتاب خارج من قوله من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة مع انقطاعه.।
[5]. ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত্ব ৪/২২৪ পৃঃ হা/১২৭১-এর আলোচনা দ্রঃ- خاص واقع على ما سوى فاتحة الكتاب وكذلك تأويل قوله وإذا قرأ فأنصتوا بعد قراءة فاتحة الكتاب واحتج بعضهم بحديث عبادة وبأخبار رويت عن الصحابة।
[6]. ঐ, পৃঃ ২৬০-২৬১।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ সহিহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬।

(দুই) শুধু জেহরী স্বলাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। অনেক শীর্ষ বিদ্বান এই দাবী করেছেন। শায়খ আলবানী (রহঃ) জেহরী স্বলাতে সূরা ফাতিহা পড়ার বিষয়টিকে ‘মানসূখ’ বলেছেন।[1] সেই সাথে অনেক আছারকেও বিশুদ্ধ বলেছেন।[2] দলীল হিসাবে নিম্নের হাদীছ পেশ করা হয়েছে।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা জেহরী স্বলাতের সালাম ফিরিয়ে বললেন, এই মাত্র আমার সাথে তোমাদের কেউ ক্বিরাআত পড়ল কি? জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি পড়েছি। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাথে কুরআন নিয়ে ঝগড়া করতে চাই না। উক্ত কথা শুনার পর লোকেরা জেহরী স্বলাতে ক্বিরাআত পড়া হতে বিরত থাকল।[3] আরেকটি হাদীছ পেশ করা হয়-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوْا.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তার অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং যখন তিনি তাকবীর দিবেন, তখন তোমরা তাকবীর দাও আর যখন তিনি ক্বিরাআত পড়েন তখন চুপ থাক।[4]

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّهُ سَأَلَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ الإِمَامِ فَقَالَ لاَ قِرَاءَةَ مَعَ الإِمَامِ فِىْ شَىْءٍ وَزَعَمَ أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ (وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى) فَلَمْ يَسْجُدْ.

আত্বা ইবনু ইয়াসার একদা যায়েদ ইবনু ছাবেত (রাঃ)-কে ইমামের সাথে ক্বিরাআত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, কোন কিছুতে ইমামের সাথে ক্বিরাআত নেই। রাবী ধারণা করেন যে, তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট সূরা নাজম পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি সিজদা করেননি।[5]

পর্যালোচনা : (ক) উক্ত দলীলগুলোর প্রথমটিতে এসেছে, ‘লোকেরা ক্বিরাআত পড়া বন্ধ করে দিল’। উক্ত অংশ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম বুখারী প্রতিবাদ করেছেন যে, উক্ত অংশ যুহরীর পক্ষ থেকে সংযোজিত।[6] ইবনু হাজার আসক্বালানীও একই মত ব্যক্ত করেছেন।[7] যা আমরা যঈফ হাদীছের ধারাবাহিকতায় প্রথমে উল্লেখ করেছি। সুতরাং যে বর্ণনা নিয়ে শুরু থেকেই মতানৈক্য রয়েছে, তাকে শক্তিশালী দলীল হিসাবে কিভাবে গ্রহণ করা যাবে?

(খ) দ্বিতীয় হাদীছে বলা হয়েছে, ‘যখন ক্বিরাআত করবেন তখন তোমরা চুপ থাক’। এই অংশটুকু নিয়েও মুহাদ্দিছগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবুদাঊদ হাদীছটি দুই স্থানে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু উভয় স্থানেই প্রতিবাদ করেছেন।[8] যদিও ইমাম মুসলিম সহিহ বলেছেন।[9] তবে মতবিরোধ আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া ‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর ক্বিরাআত’ এই বর্ণনাটিও পেশ করা হয়। যদিও মুহাদ্দিছগণের প্রায় সকলেই যঈফ বলেছেন।[10]

(গ) উক্ত হাদীছগুলো ত্রুটিমুক্ত হিসাবে গ্রহণ করে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন্ ক্বিরাআত পড়ার সময় চুপ থাকতে হবে? স্বলাতে কোন্ ক্বিরাআত পাঠ করা সমস্যা? রাসূল (ﷺ) যে ক্বিরাআতের প্রতিবাদ করেছিলেন, তা কি সূরা ফাতিহা ছিল, না অন্য সূরা ছিল? উক্ত হাদীছে তা উল্লেখ নেই। এর জবাব কী হবে। এরপর আরেকটি বিষয় হল, শুধু কি জেহরী স্বলাতে ক্বিরাআত পড়লেই সমস্যা হয়, না সের্রী স্বলাতেও সমস্যা হয়? নিম্নের হাদীছটি কী সাক্ষ্য দেয়?

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى الظُّهْرَ فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَرَأَ خَلْفَهُ ( سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ أَيُّكُمْ قَرَأَ قَالُوْا رَجُلٌ قَالَ قَدْ عَرَفْتُ أَنَّ بَعْضَكُمْ خَالَجَنِيْهَا.

ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) একদা যোহরের স্বলাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি এসে তার পিছনে সূরা আ‘লা পাঠ করল। যখন তিনি স্বলাত শেষ করলেন তখন বললেন, তোমাদের কে তেলাওয়াত করল? তারা বলল, অমুক ব্যক্তি। রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি বুঝতে পারলাম, তোমাদের কেউ আমাকে এর দ্বারা বিরক্ত করল।[11]

সুধী পাঠক! ক্বিরাআত পড়া যদি সমস্যা হয় তবে নীরবে পঠিত স্বলাতেও সমস্যা হতে পারে। তখন যোহর ও আছরেও সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। কারণ উক্ত স্বলাত যোহরের স্বলাত ছিল। অথচ যোহর ও আছর স্বলাতে ছাহাবায়ে কেরাম সূরা ফাতিহা তো পড়তেনই ইমামের পিছনে অন্য সূরাও পাঠ করতেন।[12] মূল কথা তো এটাই যে, মুক্তাদীর সরবে ক্বিরাআত জেহরী স্বলাতের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সের্রী স্বলাতের জন্যও ক্ষতিকর। কিন্তু চুপে চুপে পড়লে কোন সমস্যা নেই। দ্বিতীয়তঃ উক্ত ছাহাবী নিঃসন্দেহে সূরা ফাতিহা না পড়ে সূরা আ‘লা পড়েননি। তাহলে হাদীছে সূরা ফাতিহার কথা উল্লেখ না করে শুধু সূরা আ‘লা পড়াকে দোষারোপ করা হল কেন? সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, সূরা ফাতিহা পড়ায় কোন দোষ নেই। তাই ক্বিরাআত বলতে যে সূরা ফাতিহা নয় তা পরিষ্কার। বরং অন্য সূরা পাঠ করা নিষেধ।

তাছাড়া যায়েদ ইবনু ছাবেত (রাঃ) থেকে যে আছার বর্ণিত হয়েছে, সেখান থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ক্বিরাআত বলতে সূরা ফাতিহা নয়। যেমন ইমাম নববী বলেন, ‘যায়েদের কথাই প্রমাণ বহন করে যে, সেটা সূরা ফাতিহার পরের সূরা যা জেহরী স্বলাতে পড়া হয়’।[13] তাছাড়া নিম্নের হাদীছটিও প্রমাণ করে যে, জেহরী স্বলাতেও সূরা ফাতিহা পড়া যাবে।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كُنَّا نَقْرَأُ فِى الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ خَلْفَ الإِمَامِ فِى الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ وَفِى الأُخْرَيَيْنِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা যোহর ও আছর স্বলাতে প্রথম দুই রাক‘আতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করতাম। আর পরের দুই রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করতাম।[14] নিঃসন্দেহে উক্ত হাদীছটির মুখ্য বিষয় হল, ইমামের পিছনে অন্য সূরা পাঠ করা। অর্থাৎ জেহরী স্বলাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া হত। তবে যোহর ও আছর স্বলাতে অন্য সূরাও পড়া হত।

[1]. ছিফাতু স্বলাতিন নাবী, পৃঃ ৯৮।
[2]. দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২।
[3]. আবুদাঊদ হা/৮২৬, ১/১২০ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩১২, ১/৭১ পৃঃ; নাসাঈ হা/৯১৯।
[4]. আবুদাঊদ হা/৬০৪, ১/৮৯ পৃঃ, ও হা/৯৭৩, ১/১৪০ পৃঃ; নাসাঈ হা/৯২১-৯২২; মিশকাত হা/৮২৭ ও ৮৫৭।
[5]. সহিহ মুসলিম হা/১৩২৬, ১/২১৫ পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২১।
[6]. বুখারী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম হা/৬৮, পৃঃ ৭১; তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৮।
[7]. ঐ, তালখীছুল হাবীর, ১/২৪৬।
[8]. আবুদাঊদ হা/৬০৪, ১/৮৯ পৃঃ, ও হা/৯৭৩, ১/১৪০ পৃঃ- قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهَذِهِ الزِّيَادَةُ «وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا» لَيْسَتْ بِمَحْفُوظَةٍ الْوَهَمُ عِنْدَنَا مِنْ أَبِى خَالِدٍ।
[9]. মুসলিম হা/৯৩২।
[10]. ইবনু মাজাহ হা/৮৫০; ফাৎহুল বারী হা/৭৫৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ, ২/২৮৩ পৃঃ। ইমাম বুখারী বলেন, هذا خبر لم يثبت عند أهل العلم من أهل الحجاز وأهل العراق وغيرهم لإرساله وانقطاعه -জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ২০।
[11]. আবুদাঊদ হা/৮২৮, ১/১২০ পৃঃ, সনদ সহিহ; বায়হাক্বী, ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম; ইরওয়া হা/৩৩২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ সহিহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬।
[13]. সহিহ মুসলিম শরহে নববীসহ হা/১৩২৬-এর আলোচনা দ্রঃ ১/২১৫-ان قول زيد محمول على قراءة السورة التي بعد الفاتحة في الصلاة الجهرية فان المأموم لا يشرع له قراءتها وهذا التأويل متعين।
[14]. ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ সহিহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬।

(তিন) জেহরী স্বলাতে চুপে চুপে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করলে সমস্যা নেই।

পর্যালোচনা : উক্ত দাবীই যথার্থ এবং এর পক্ষেই সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى بِأَصْحَابِهِ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَتَقْرَؤُوْنَ فِىْ صَلاَتِكُمْ خَلْفَ الإِمَامِ وَالإِمَامُ يَقْرَأُ؟ فَسَكَتُوْا فَقَالَهَا ثَلاَثَ مَرَاتٍ فَقَالَ قَائِلٌ أَوْ قَائِلُوْنَ إِنَّا لَنَفْعَلُ قَالَ فَلاَ تَفْعَلُوا لِيَقْرَأْ أَحَدُكُمْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِىْ نَفْسِهِ.

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) একদা তাঁর ছাহাবীদের নিয়ে স্বলাত আদায় করেন। যখন স্বলাত শেষ করলেন, তখন তাদের দিকে মুখ করলেন। অতঃপর বললেন, ইমাম ক্বিরাআত করা অবস্থায় তোমরা কি তোমাদের স্বলাতে ইমামের পিছনে ক্বিরআত পাঠ করলে? তারা চুপ থাকলেন। এভাবে তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাদের একজন বা সকলে বললেন, হ্যঁা আমরা পাঠ করেছি। তখন তিনি বললেন, তোমরা এমনটি কর না। নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। আলবানী বলেন, হাদীছটির সনদ সহিহ লিগায়রিহী।[1] মুহাক্কিক হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ।[2]

উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে বর্ণিত যে সমস্ত হাদীছকে আলবানী ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন, সেগুলোর থেকে এই হাদীছের পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটা হল, এই হাদীছে রাসূল (ﷺ) চুপে চুপে পড়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও নিম্নের দুইটি হাদীছও তাই প্রমাণ করে-

عَنْ يَزِيْدَ بْنِ شَرِيْكٍ أَنَّهُ سَأَلَ عُمَرَ عَنِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قُلْتُ وَإِنْ كُنْتَ أَنْتَ؟ قَالَ وَإِنْ كُنْتُ أَنَا قُلْتُ وَإِنْ جَهَرْتَ؟ قَالَ وَإِنْ جَهَرْتُ.

ইয়াযীদ ইবনু শারীক একদা ওমর (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ কর। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হৌন? তিনি বললেন, যদিও আমি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করেন? তিনি বললেন, যদিও আমি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করি।[3]

فَقِيْلَ لأَبِىْ هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِىْ نَفْسِكَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা তো ইমামের পিছনে থাকি। তখন কী করব? তিনি বললেন, চুপে চুপে পড়।[4] এছাড়া জনৈক যুবককে রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি স্বলাতে কী পড়? উত্তরে সে বলেছিল, আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাই। এটা মু‘আয (রাঃ)-এর ইমামতির ঘটনা সম্পর্কিত বিষয়।[5]

ওমর, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী যদি ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার কথা বলেন, তবে মানসূখ হওয়ার বিষয়টি কিভাবে সঙ্গত হতে পারে? অতএব জেহরী হোক বা সের্রী হোক প্রত্যেক স্বলাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণকে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।

সুধী পাঠক! পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরা হল, ‘সূরাতুল ফাতিহা’। আর এর মৌলিক আবেদন হল, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন’। এই মৌলিক প্রার্থনা হতে কোন মুছল্লী বিরত থাকতে পারে কি? এছাড়া উক্ত সূরার মাধ্যমে মুছল্লীরা প্রতিনিয়ত ইহুদী-খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। সেজন্য শেষে দু‘আ কবুলের জন্য উচ্চকণ্ঠে ‘আমীন’ বলে। আর এই আমীনের শব্দ শুনে ইহুদীরা সবচেয়ে বেশী হিংসা করে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মুছল্লী এক সঙ্গে স্বলাত আদায় করছে অথচ ইমাম ব্যতীত কোন মুছল্লী কোন রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। শেষে উচ্চকণ্ঠে আমীনও বলে না। তারা স্বলাতের ভিতরে উক্ত প্রার্থনা পরিত্যাগ করলেও স্বলাতের পরে প্রচলিত বিদ‘আতী মুনাজাত ছাড়তে চায় না। অন্যদিকে সূরা ফাতিহা পাঠের বিরুদ্ধে অসংখ্য জাল ও বানোয়াট বর্ণনা তৈরি করে মুছল্লীদেরকে প্রকৃত সত্যের আড়ালে রাখা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের শিকড় কি তাহলে এত গভীরে! আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

[1]. সহিহ ইবনে হিববান হা/১৮৪১ তাহক্বীক্ব আলবানী, সনদ সহিহ লিগায়রিহী; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫।
[2]. সহিহ ইবনে হিববান হা/১৮৪১।
[3]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩০৪৭; সনদ সহিহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[4]. সহিহ মুসলিম হা/৯০৪, ১/১৬৯-৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৬২), ‘স্বলাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ১/১১৬ পৃঃ, সনদ সহিহ।
[5]. আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ১/১১৬ পৃঃ, সনদ সহিহ।

Share: