মনের আগুন জ্বলে উঠে দু’কারণে- হয়তো আনন্দে নয়তো অন্তর্যাতনায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেন-
“অবশ্য আমাকে দুটি (তার একটি) বোকামীপ্রসূত (হায়! শব্দ) ও (অপরটি) পাপব্যঞ্জক (হুররে!) শব্দ উচ্চারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তার একটি (পাপব্যঞ্জক-হুররে) শব্দ বলা হয় নেয়ামত পেলে আর অপরটি (বোকামীপ্রসূত হয়! শব্দ) উচ্চারণ করা বিপদের সময়।”
মহান আল্লাহ বলেন,
لِّكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ
“যা আপনি পাননি, তার জন্য দুঃখ করবেন না। আর যা আপনাকে দেয়া হয়েছে তার জন্য ফুর্তি করবেন না।” (সূরা-৫৭ আল হাদীদ: আয়াত-২৩)
এ কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “অবশ্যই প্রথম আঘাতের সময়ই ধৈর্যের পরিচয় পাওয়া যায়।”
সুতরাং, আনন্দময় ও বিপদমুক্ত উভয় ঘটনার সময়ই যে লোক তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারই শান্তি, প্রশান্তি, সুখ, আরাম ও নিজের উপর বিজয়ের স্বাদ অর্জন করার কথা। আল্লাহ তায়ালা মানুষের পরিচয় দিয়েছেন যে, তারা বিজয়োল্লাসিত, দাম্ভিক, খিটখিটে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা তাদের খারাপ কিছু হলে অসন্তুষ্ট এবং তাদের কোন কল্যাণ হলে তারা কৃপণোচিত হয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন, ব্যতিক্রম হলো সময়েই মধ্যপন্থী। তারা সচ্ছলতার সময় কৃতজ্ঞ এবং অসচ্ছলতার সময় ধৈর্যশীল।
লাগামহীন আবেগ মর্মবেদনা ও অনিদ্রা সৃষ্টি করে মানুষকে শেষ করে দিতে পারে। কেউ যখন ক্রুব্ধ হয় তখন সে রাগে আগুন হয়ে যায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ধৈর্যহারা ও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। অপরপক্ষে,
যদি সে সুখী হয়, তবে সে পরোল্লসিত ও বন্য হয়ে যায়। আনন্দের ঘোরে সে আত্মভোলা হয়ে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে। সে যখন অন্যদের সঙ্গ ত্যাগ করে তখন সে তাদেরকে অবজ্ঞা করে, তাদের গুণাবলিকে ভুলে গিয়ে তাদের সৎগুণাবলিকে পদদলিত করে। অপরপক্ষে, সে অন্যদেরকে যখন ভালোবাসে তখন সে তাদেরকে পরম নিষ্কলঙ্ক কল্পনা করে। তাদেরকে সর্বপ্রকার সম্মান করতে কোনরূপ ক্রটি করে না।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
“যাকে তুমি ভালোবাস তাকে তুমি সংযত পরিমাণে ভালোবাস। কারণ, এমন দিন আসতে পারে যখন তুমি তাকে ঘৃণা করবে। আর যাকে তুমি ঘৃণা কর তাকে সংযত পরিমাণে ঘৃণা কর। কেননা, এমন দিন আসতে পারে তখন তুমি তাকে ভালোবাসবে।”
অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
“(হে আল্লাহ!) আমি আপনার নিকট ক্রুদ্ধ ও সন্তুষ্ট উভয়ই অবস্থায়ই মধ্যপন্থা কামনা করি।”
কেউ যখন তার আবেগের মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়, তখন সে তার মনকে দমন করতে পারে এবং যখন সে প্রতিটি বিষয়কে এর গুরুত্বানুসারে মেনে নেয় তখন সে প্রজ্ঞা ও সঠিক বুঝের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল।
মহান আল্লাহ বলেন-
“অবশ্যই আমি আমার নবী-রাসূলগণকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও মীজান (ন্যায়নীতি) অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষেরা ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” (সূরা-৫৭ আল হাদীদ: আয়াত-২৫)
বাস্তবিক, ইসলাম নীতি ও আচার-আচরণে এতটাই ভারসাম্যতা এনেছে, যতটা সে এনেছে জীবনের সরল, পবিত্র ও সত্য পথে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا
“এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী জাতি বানিয়েছি। (সূরা-২ বাকারা: আয়াত-১৪৩)
আমাদের আচার-আচরণ ও বিচার-আচার উভয় ক্ষেত্রেই ন্যায়পরায়ণ হওয়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে, ইসলাম সকল বিষয়ে সত্য ও ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এ ন্যায়নীতি বিচারকার্যে, কথা-বার্তায়, কাজ-কর্মে ও আচার-আচরণে, যা আমরা অবতীর্ণ কিতাব (কুরআন) থেকে শিখতে পারি।
মহান আল্লাহ বলেন-
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا
“এবং তোমার প্রতিপালকের কথা সত্য ও ন্যায়নীতিতে ভরপুর।” (সূরা-৬ আল আন’আম: আয়াত-১১৫)
?সংগ্রহঃ বইঃ
লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] লা-তাহযান – অনুচ্ছেদ সূচি ড. আয়িদ আল করনী!
***বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ শাহেদ কাজী সহিহ সুন্নাহ***