কোন‬ সন্মানিত ব্যক্তিকে বা শ্বশুরকে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করা

কোন‬ সন্মানিত ব্যক্তিকে বা শ্বশুরকে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করায় কোন দোষ নেই। যেমন দোষ নেই নিজের ছেলে ছাড়া অন্য কোন স্নেহভাজনকে ‘বেটা’ বলে সম্বোধন করা। এ সম্বোধনের উদ্দেশ্য থাকে পিতার মত শ্রদ্ধা এবং পুত্রের মতো স্নেহ প্রকাশ। পিতৃতুল্যকে ‘পিতা’ বলা এবং পুত্রতুল্যকে ‘বেটা’ বলা, তদনুরূপ মাতৃতুল্যকে ‘মাতা’ বা ‘মা’ বলা এবং কন্যতুল্যকে ‘বেটি’ বলায় কোন বংশীয় সম্বন্ধ উদ্দিষ্ট থাকে না।

আল কোরআনে জন্মদাত্রী মা ছাড়া অন্য মহিলাকে ‘মা’ বলার কথা এসেছে। মহানবী (সঃ) এর স্ত্রীদেরকে মুমিনদের মা বলা হয়েছে।

নবী, বিশ্বাসীদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয় এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মা। (আহযাবঃ ৬)

অতঃপর তারা জখন ইউসুফের নিকট উপস্থিত হল, তখন সে তার পিতা মাতাকে নিজের কাছে স্থান দান করল এবং বলল, ‘আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন।’ (ইউসুফঃ ৯৯)

ইউসুফ তার পিতামাতাকে সিংহাসনে বসাল। (ইউসুফঃ ১০০ )

উক্ত আয়াতে ইউসুফ (রঃ) এর পিতামাতা বলে তার পিতা ও খালাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তার মায়ের ইন্তিকাল পূর্বেই হয়ে গিয়েছিল।

নিজ জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলার কথাও এসেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“ইয়াকুবের নিকট জখন মৃত্যু এসেছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে জখন নিজ পুত্র গণকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আমার (মৃত্যুর) পর তোমরা কিসের উপাসনা করবে?’ তারা তখন বলেছিল, ‘আমরা আপনার উপাস্য ও আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের উপাস্য, সেই অদ্বিতীয় উপাস্যের উপাসনা করব। আর আমরা তার কাছে আত্মসমর্পণকারী।’ (বাকারাহঃ ১৩৩)

এখানে পিতৃব্য, পিতামহ -প্রপিতামহকেও ‘পিতা’ বলেই আখ্যায়ন করা হয়েছে। আর বিদিত যে, ইসমাইল (আঃ) ইয়াকুব (আঃ) এর চাচা ছিলেন।

সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে যেভাবে সংগ্রাম করা উচিৎ; তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনটা আরোপ করেননি; এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ); তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এই গ্রন্থেও ; যাতে রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী সরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষী সরূপ হও মানব জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা জামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে অবলম্বন কর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি! (হাজ্জঃ ৭৮)

এখানে ইব্রাহিম (আঃ) কে মুসলিমদের ‘পিতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি উম্মাহর নিকট পিতৃতুল্য। যেমন আমাদের নবী (সঃ) ও বলেছেন,

“আমি তো তোমাদের পিতৃতুল্য, তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি…।” (আবু দাউদ)

সুতরাং তিনি আমাদের পিতৃতুল্য। তবে তিনি কারো পিতা নন অর্থাৎ জনক নন। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন, বরং সে আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (আহযাবঃ ৪০)

যেমন তার স্ত্রীগণ তোমাদের জননী না হয়েও ‘তোমাদের মাতা’। অনুরূপ তিনি তোমাদের জনক না হয়েও সন্মানে তোমাদের ‘পিতা’। কোন কোন কিরাতে এসেছে ,

“নবী বিশ্বাসীদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয় এবং এবং তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা স্বরূপ। আর সে তাদের পিতা স্বরূপ। (আজহাবঃ ৬, ইবনে কাসিরাঃ ৬/৩৮১, ফাতহুল কাদির ৪/৩৭২)

আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তাকে মহানবী (সঃ) বেটা বলে সম্বোধন করতেন। (মুসলিম ২১৫১) বরং ইমাম নওয়াবি স্নেহাস্পদদেরকে বেটা বলে সম্বোধন করা মুস্তাহাব বলেছেন।

মত কথা, পরস্পরের সম্বোধনে এই শ্রেণীর শ্রদ্ধা ও স্নেহ সূচক শব্দ ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই।

পক্ষান্তরে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “সবচেয়ে বড় মিথ্যারোপ হল সেই ব্যক্তির কাজ, যে পরের বাপকে নিজ বাপ বলে দাবি করে অথবা তার চক্ষুকে তা দেখায়, যা সে (বাস্তবে) দেখেনি। (অর্থাৎ স্বপ্ন দেখার মিথ্যা দাবি করে) অথবা আল্লাহর রাসুল (সঃ) যা বলেননি, তা তার প্রতি মিথ্যাভাবে আরোপ করে।” (বুখারি)

“যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে, অথচ সে জানে যে, সে তার বাপ নয়, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম।” (বুখারি ৬৭৬৬, ৬৭৬৭, মুসলিম ৬৩ নং, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ )

“যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে দাবী করে সে জানাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধই ৫০০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ ২/১৭১, ইবনে মাজাহ ২৬১১, সহিহুল জামে ৫৯৮৮ নং)

“যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে দাবী করে অথবা তার (স্বাধীনকারী) প্রভু ছাড়া অন্য প্রভুর প্রতি সম্বন্ধ জুড়ে, সে ব্যক্তির উপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অবিরাম অভিশাপ।” (আবু দাউদ, সহিহুল জামে ৫৯৮৭ নং)

এ_সবের_অর্থ সম্বোধনে বাপ বলা নয়। এ সবের অর্থ হল, নিজের বাপকে অস্বীকার করা এবং কোন স্বার্থে অন্য কোন পুরুষকে নিজের বাপ বলে দাবী করা। নিজের বংশকে অস্বীকার করে অন্য বংশের সূত্র জুড়ে নেওয়া। এই জন্য হাদিসে এসেছে, নবী (সঃ) বলেছেন, “অজ্ঞাত বংশের সম্বন্ধ দাবী করা অথবা ছোট বা নিচু হলে তা অস্বীকার করা মানুষের জন্য কুফুরি।” (আহমাদ প্রমুখ, সহিহুল জামে ৪৪৮৬ নং)