প্রশ্ন: স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে কি? এ সময় মোহরানার হুকুম কী?
উত্তর : স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। তবে স্ত্রী যেকোন সময়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাবার অধিকার রাখে। যাকে শরী‘আতে ‘খোলা’ বলে। এ সময় স্ত্রী তার মোহরানা স্বামীকে ফেরৎ দিবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ছাবেত ইবনু ক্বায়েসের স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসল এবং বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি ছাবেত ইবনে কায়েসের দ্বীনদারী এবং চাল-চলনের নিন্দা করি না, তবে আমি মুসলিম নারী হয়ে (তার অসুন্দর হবার কারণে) তার নাফরমানী করব, এটা চাই না। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, তুমি কি তার মোহর বাবত বাগান ফেরত দিবে? মহিলা বলল, হ্যাঁ দিব। নবী করীম (ছাঃ) ছাবেতকে বললেন, বাগান গ্রহণ কর এবং তাকে ‘খোলা’ হিসাবে এক তালাক প্রদান কর (বুখারী, মিশকাত হা/৩২৭৪)। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রী স্বামীকে সরাসরি তালাক দিতে পারে না, তবে তালাক নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। এমতাবস্থায় স্বামীকে মোহরানা ফেরত দিতে হবে। আর স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীর প্রাপ্য মোহর পূরণ করে দিতে হবে। অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি এখানে বিবেচ্য নয় (নাসাঈ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৩১৭ ‘লি‘আন’ অনুচ্ছেদ; বুলূগুল মারাম হা/১০৯৮-এর আলোচনা)।
২.প্রশ্ন: মোহরানা ছাড়া বিবাহ বৈধ কি? যে মোহরানা পরিশোধ করে না তার পরিণাম কী? জনৈক মুফাসসির বলেছেন, তারা হাশরের ময়দানে ব্যভিচারীদের লাইনে দাঁড়াবে। উক্ত বক্তব্যের দলীল জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: মোহরানা ছাড়া বিবাহ বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশীমনে দিয়ে দাও’ (নিসা ৪)। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে মোহরানা বাবদ লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। অতঃপর সেটাও না পাওয়ায় কুরআন শিক্ষা দেওয়ার শর্তে বিবাহ পড়িয়ে দেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২০২)। অতএব মোহরানা অপরিহার্য শর্ত। বরের সাধ্য অনুযায়ী মোহরানা ধার্য করবে। সেটা প্রথমেই পরিশোধ করা কর্তব্য। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা এবং পরে স্ত্রীর কাছে মাফ চাওয়া ধোঁকার শামিল। এছাড়া যারা মোহরানা আদায় করে না, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের স্ত্রীদের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বিবাহের সবচেয়ে বড় শর্ত হ’ল মোহর’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৪৩ ‘বিবাহ’ অধ্যায়-১৩, অনুচ্ছেদ-৩)। বিবাহের সময় মোহর ফাঁকি দেওয়ার নিয়ত থাকলে তো বিয়েই বৈধ হবে না। তবে প্রশ্নে বর্ণিত উক্ত মুফাসসিরের বক্তব্য ভিত্তিহীন।
৩.প্রশ্নঃ প্রায় মসজিদের ইমাম বলে থাকেন, ক্বিয়ামতের দিন মসজিদ ধ্বংস হবে না। মসজিদ প্রত্যেক মুছল্লীকে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
উত্তর : উক্ত বক্তব্যটি সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল এবং অবশিষ্ট থাকবে শুধু আপনার প্রতিপালকের মুখমন্ডল যিনি মহিমাময়, মহানুভব (রাহমান ২৭)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, আল্লাহ্র মুখমন্ডল ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল (ক্বাছাছ ৮৮)। সুতরাং নিঃসন্দেহে মসজিদসহ বিশ্বজগতের সবকিছুই সেদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে ক্বিয়ামতের দিন যমীন তাঁর উপরে কৃত ভাল-মন্দ সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিবে (যিলযাল ৪)। সে হিসাবে মসজিদের মাটি তার মুছল্লীদের ব্যাপারে সাক্ষী হবে।।