সালাতের সবচে বড় এবং কমন ত্রুটি কোনটি?

লেখকঃ শায়েখ আহমদ উল্লাহ

সালাতের সবচে বড় এবং কমন ত্রুটি কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো বলবেন খুশু’ বা মনোযোগের অভাব। অথচ মনোযোগ সালাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও ফরজ কিংবা বিশুদ্ধতার পূর্বশর্ত নয়। সালাতের সবচেয়ে বড় এবং কমন ত্রুটি হলো ‘ত্বমানীনাহ’ বা খুজু’ না থাকা। ‘ত্বমানীনাহ’ বা খুজু’ হলো প্রতিটি রুকন, উঠাবসা এবং তাসবীহ-তিলাওয়াত ও দু’য়ায় পরিপূর্ণ ধীরস্থীরতা অবলম্বন করা। অন্যভাবে বলা যায়, ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে যথানিয়মে প্রতিটি কাজ করা; তাড়াহুড়ো না করা। এটি সালাতের বিশুদ্ধতার জন্য আবশ্যক।

সালাতে ভুলে বা যে কোন কারণে অন্য মনষ্ক হয়ে যাওয়া দোষের নয়, দোষের হলো সে অবস্থায় স্থির থাকা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাতেও শিশুর কান্না কিংবা অন্য কোন দিকে মনযোগ গিয়েছিলো। কিন্তু একটি বারের জন্যও তাঁর সালাতের রুকন বা রুকু-সাজদা কিংবা তিলাওয়াত ইত্যাদিতে তাড়াহুড়োর ইতিহাস নাই। যুদ্ধাবস্থায় পালা করে এক রাকাত এক রাকাত করে জামাতে সালাত আদায়ের নির্দেশ করা হয়েছে। তবুও তাড়াহুড়ো করে সালাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সহীহ বুখারীর বিখ্যাত এক হাদীসে তিনি দ্রুততার সাথে সালাত আদায় করা এক ব্যক্তিতে বলেছিলেন, ‘তুমি সালাতই আদায় করোনি! সুতরাং পূনরায় সালাত আদায় কর’। একই কারণে তিনি তাকে তিন তিন বার পূনরায় সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন! লোকটির সমস্যা ছিল সালাতে ‘ত্বমানীনাহ’ বা খুজু’ ছিল না। যা সালাতের অপরিহার্য বিষয়।

হুযাইফা (রা:) এক ব্যক্তিকে ‘ত্বমানীনাহ’ বা খুজু’ বিহীন সালাত আদায় করতে দেখে প্রশ্ন করলেন-তুমি কতোদিন এভাবে সালাত আদায় করছো? লোকটি বললো-৪০বছর যাবত। তিনি তখন বললেন-যদি তুমি এই সালাতে অটল থেকে মারা যাও তবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ধর্মের ওপর তোমার মৃত্যু হলো না! (সুনানে নাসাঈ)

খোলাসা কথা হলো, সালাতে খুশু বা মনোযোগ না থাকলে সালাতের সওয়াবে ঘাটতি হয় কিন্তু বাতিল হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে খুজু বা প্রতিটি রোকন যথাভাবে আদায় না করলে সালাতই হবে না! সুতরাং আমরা খুশু বা মনোযোগ নিয়ে যতোটা চিন্তিত থাকি, ‘খুজু বা ত্বমানীনাহ’র প্রতি তার চেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। কারণ মন সব সময় নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অথচ শরীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আপনি নিজের সাধ্যের কাজটুকু করুন। অপরটি আল্লাহ সহজ করে দিবেন।

সৌভাগ্যবান সে, যে সময় থাকতে নিজের সংশোধন করে নিতে পারলো। একটা সময় হয়তো আসবে, তখন ইচ্ছা থাকলেও আর আল্লাহকে মনভরে যথানিয়মে রুকু সাজদা করতে পারবো না। আল্লাহ আমাদেরকে শুদ্ধরূপে সালাত আদায়ের তাউফীক দান করুন।

Share: