বোমা বিস্ফোরণে আত্মহনন প্রসঙ্গে সালেহ আল-ফাওযান
প্রশ্ন: বোমা বিস্ফোরন বা আত্মহনন কি ইসলাম প্রচারের কোন বৈধ মাধ্যম?
উত্তর: (ইংরেজী হতে অনুবাদ: আবূ মু’আয সুহাইল বিন সুলতান)
আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূল (ﷺ) এর সুন্নাহর প্রতি দাওয়াতের ধারণা পোষণ করে যারা এই ধরণের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে খোদ তাদেরকেই ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া জরুরী। এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে একজন ব্যক্তি বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করে ও ধ্বংসাত্মক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে একই সাথে ইসলাম প্রসারের কাজ করতে পারে? এটা দ্বীনের দাওয়াত বা প্রচার নয়; বরং দ্বীন ইসলাম বিনষ্টকারী ও দ্বীনের প্রতি ঘৃণা উদ্রেককারী কর্ম।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) কি এভাবেই দ্বীন প্রচার করেছেন? যখন তিনি মক্কায় ছিলেন, এমন একটি দিনও কি ছিলো, তিনি বা তাঁর সাহাবাগণের কেউ কোন কিছু ধ্বংস করেছিলেন বা কোন ধ্বংসাত্মক কর্ম করেছিলেন? অবশ্যই না, বরং তিনি এর সম্পূর্ণ বিপরীতটাই করেছিলেন; তিনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাথে সুন্দরভাবে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছিলেন। তিনি লোকজনকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাঁর সাথে যোগ দিতে এবং তাঁর এই কাজে সহযোগিতা করতে। তিনি কখনও কোন ধ্বংসাত্মক কাজ পরিচালনা করেন নি। এধরণের কাজ যেমন মুসলিমদের ব্যাপক ক্ষতির কারণ তেমনি মুসলিম বিদ্বেষীদেরও আনন্দের বিষয়।
তাই এহেন কাজ কখনও ইসলামে অনুমোদনযোগ্য নয়। বরং এই দাওয়াত শয়তানের দিকে, এই ডাক জাহান্নামের আগুণের দিকে।
ফেরাউন ও তার বাহিনী সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنصَرُونَ [٢٨:٤١]
“আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত। কেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না”। (সূরাহ কাসাস ২৮:৪১)
তিনি আরও বলেনঃ
أُولَٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ
“তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে”। (সূরাহ বাক্বারাহ ২: ২২১)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- নিশ্চয়ই রাসূল (সঃ) বলেন:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ يَتَّبِعُهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ يَتَّبِعُهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ”
‘‘যে ব্যক্তি হেদায়েতের দিকে আহবান করে, তার এই পরিমাণ ছাওয়াব হয়, যে পরিমাণ ছাওয়াব তাকে অনুসরণ করে অন্যরা পেয়ে থাকে এবং তা তাদের ছাওয়াব থেকে বিন্দু পরিমাণও কমানো হয় না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথে ডাঁকে, তারও এই পরিমাণ পাপ হতে থাকে, যে পরিমাণ তাঁকে অনুসরণ করে অন্যেরা পেয়ে থাকে এবং তা তাদের পাপ থেকে বিন্দু পরিমাণও কমানো হয় না।’’ (মুসলিম)
অতএব নিশ্চিতভাবে এটাই হতে পারে যে এই ধরণের ধ্বংসাত্মক আহ্বান শুধুই আগুণের দিকে, সত্যের দিকে নয়।
(সমাপ্ত) [Source: Abdurrahman.org]
গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৩৯/ জ্ঞান (كتاب العلم عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ২৬৭৪/২৬৭৫
পরিচ্ছদঃ ১৫. সৎপথে বা ভ্রান্তপথে ডাকার ফলাফল
২৬৭৪। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি হিদায়াতের পথে আহবান করে তাহলে সে তার অনুসারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে অনুসরণকারীদের সাওয়াব থেকে মোটেও কম করা হবে না। আর বিপথের দিকে আহবানকারী ব্যক্তি তার অনুসারীদের পাপের সমপরিমাণ পাপের অংশীদার হবে, তবে তাদের (অনুসরণকারীদের) পাপ থেকে মোটেই কমানো হবে না । সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২০৬), মুসলিম। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
২৬৭৫। জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ ভালো কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে সে তার নিজের সাওয়াবও পাবে এবং তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে তাদের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। আবার কেউ মন্দ কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে তার উপর নিজের গুনাহ্ বর্তাবে উপরন্তু তার অনুসারীদের সম-পরিমাণ গুনাহর অংশীদারীও হবে, কিন্তু তাতে অনুসরণকারীদের গুনাহর পরিমাণ একটুও কমানো হবে না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২০৩), মুসলিম।
হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ)-এর বরাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একাধিক সূত্রে একই রকম বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি আল-মুনযির ইবনু জারীর ইবনু আবদুল্লাহ হতে তার বাবা হতে এই সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত আছে। উবাইদুল্লাহ ইবনু জারীর হতে তার বাবার বরাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতেও তা বর্ণিত হয়েছে।
>>>>>Special Courtesy:- dararqam.com<<<<<