ফেসবুকে কি ছেলেরা মেয়ে ফ্রেন্ড বা মেয়েরা ছেলে ফ্রেন্ড অ্যাড করতে পারবে ??

আজ আমি যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব তা

নিয়ে অনেক ভাই অনেক মত , অনেক যুক্তি দিয়ে থাকেন । আজ সেগুলো নিয়েই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ । এই আর্টিকেলকে আমি চারভাগে ভাগ করব।

-কুরান হাদিস থেকে কিছু আলোচনা

-বিভিন্ন যুক্তি ও তার খন্ডন

-কিছু বাস্তব উদাহরন

-শেষ কথা

কুরআন দিয়ে শুরু করলাম ।

আল্লাহ বলেন ,

 মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়। (আলে ইমরান ১৪ ) 

এখানে মোহগ্রস্ত করার বিষয় গুলোর প্রথমে এসেছে নারীর কথা ।

এরপর ইউসুফ (আ) এর ঘটনায় আসি । তার মালিকের স্ত্রী তাকে পথভ্রস্ট করতে চেয়েছিল ।

বলা আছে ,

 নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্নক। (ইউসুফ,২৮)

এছাড়া,

 হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। (আন নূর,২১) 

তোমরা যেনার নিকটেও যেওনা । (আল ইসরা,৩২)

এরপর কিছু হাদিস ।

হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ

মানুষের জন্যে তার যেনার অংশ লেখা হয়েছে, যা সে নিশ্চিতভাবেই পেয়ে যাবে। (সুতরাং) দুই চোখের যেনা হলো পরস্ত্রীর প্রতি নজর করা, দুই কানের যেনা হলো যৌন উত্তেজক কথা-বর্তা শ্রবণ করা, মুখের যেনা হলো পরস্ত্রীর সাথে রসালো কন্ঠে কথা বলা। হাতের যেনা হলো পরস্ত্রীকে স্পর্শ করা হাত দিয়ে ধরা এবং পায়ের যেনা হয়ে যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে পরস্ত্রীর কাছে গমন। অন্তরের ব্যাভিচার হলো হারাম বস্তু কামনা করা, আর লজ্জাস্থান এইসব কিছুরই (অন্যায় কাজের উদ্দেশ্যে) সত্যতা প্রমাণ করে কিংবা মিথ্যা সাব্যস্থ করে। (বুখারী ও মুসলিম)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় , যেনা মানে শুধু ব্যভিচার নয় । চোখ,হাত,পা, অন্তরের যেনার অংশ রয়েছে ।

‘যদি কোন কিছুর মধ্যে কুলক্ষণ থাকতো, তবে তা থাকতো ঘোড়া, স্ত্রীলোক এবং বাসগৃহের মধ্যে।'( সাহীহ বুখারি,খন্ড ৭, বুক নং ৬২, হাদিস নং ৩২)

‘পুরুষের জন্য মেয়ে অপেক্ষা বড় কোন ফেতনা আমি রেখে গেলাম না’ ( সাহীহ বুখারি,খন্ড ৭, বুক নং ৬২, হাদিস নং ৩২)

‘নারীদের থেকে সতর্ক থাক কারন ইসরায়েলবাসীর প্রথম ফেতনার কারন ছিল নারী ।'(মিশকাত আল মাসাবিহ, খন্ড ২, পৃষ্টা ৭০ , মুসলিম – ৪৯২৫).

‘যখন ছেলে এবং মেয়ে একাকী নির্জন স্থানে মিলিত হয় তখন তৃতীয়জন শায়তান ।’ ( আহমাদ , তিরমিযী )

এই হাদিসগুলো তুলে ধরার কারন হচ্ছে নারীদের ফেতনা সম্পর্কে ইসলাম কেমন সতর্ক করেছে তা বুঝানো ।

এবার আর্টিকেলের ২য় অংশ ।বিভিন্ন যুক্তি ও তার খন্ডন ।

১নং যুক্তিঃ

আমি মেয়েফ্রেন্ড অ্যাড করব কিন্তু যোগাযোগ করব না ।

জবাবঃ

হুম,ঠিক আছে । কিন্তু ভাই, আমরা যারা ইসলামকে মানি তারা কিন্তু কেউই খারাপ উদ্দেশ্যে মেয়েফ্রেন্ড অ্যাড করি না । সবাইভাবে যোগাযোগ তো করব না , কিন্তু শায়তান এই সুযোগটাই নেয় । আর শায়তানের ষড়যন্ত্র খুবই জটিল । আর আমরা যারা ইসলাম মানার চেষ্টা করি, শায়তান তাদেরকে ভাল কাজের মাধ্যমেই খারাপের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবে ।শুধু অ্যাড করলে কি হবে ? এরপর শুধু একটা কমেন্টের উত্তর দিলে কি হবে ? তারপর চ্যাটের মাধ্যমে ইসলামের একটা পয়েন্ট বুঝালে কি হবে ? এভাবে শুরু । তারপর চলতে থাকে…………

২নং যুক্তিঃ

মেয়েদের কি ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে না ?

জবাবঃ

এই যুক্তি যারা দেন তাদের বলব, আমরা ছেলেরা ইসলাম সম্পর্কে কতটুকু জানি যে আমাদের থেকে তাদের দ্বীন শিখতে হবে । ধরলাম ,একজন মেয়ে অনলাইনে দ্বীন শিখতে চান । অনেক দ্বীনদার আপু আছেন ।তাদের সাথে ফ্রেন্ড হোক মেয়েরা । এছাড়া আল কাওসার , IOU,IERF,islamqa,islamhouse সহ অনেক সোর্স আছে । এছাড়া ইসলামিক লেকচার , pdf বুক তো আছেই । তাই এই যুক্তি যারা দেন তারা তো শায়তানকে খুশি করার প্রথম ধাপে আছেন ।

৩নং যুক্তিঃ

দাওয়াতের উদ্দেশ্যে অ্যাড করি ।

জবাবঃ

ফেসবুকে অসংখ্য জাহেল , ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া ছেলে আছে । ছেলেরা তাদের দাওয়াত দিন । আর মেয়েরা দেখুন , অসংখ্য মেয়ে আজ পথভ্রষ্ট । দ্বীনিমেয়েরা এইসব মেয়েদের দাওয়াত দিন । কিন্তু আফসোস , আপনারা তাদের খুজেই পাননা । দাওয়াত দিতে ধরে কেন জানি অনেক ছেলেরাই শুধু মেয়েদের দাওয়াহ দিতে উৎসাহিত হন ।

৪নং যুক্তিঃ

অনেকে বলেন , আপনি যদি আপনার ইমান নিয়ে কনফিডেন্স থাকেন তবে অ্যাড করবেন নতুবা নয় ।

জবাবঃ

এটা যারা বলেন তাদের বলবো ,আপনি আগে ইমান সম্পর্কে আপনার ধারনা ক্লিয়ার করুন ।পৃথিবীর এমন কেউ নেই যে তার ইমান নিয়ে কনফিডেন্স থাকতে পারে এমনকি সাহাবীরা (রা) পর্যন্ত সর্বদা সতর্ক থাকতেন , ফিতনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন । আর আপনারা বলছেন , আমরা যদি কনফিডেন্স থাকি ?? How funny!!

৫নং যুক্তিঃ

সরাসরি দলিল দেন , কোথায় বলা আছে মেয়ে ফ্রেন্ড অ্যাড করা যাবে না ।

জবাবঃ

এই যুক্তি যারা দেন তাদের মুর্খ ছাড়া আমি আর কিছুই বলব না । কেননা মহানবী (স) এর সময় ফেসবুক ছিল না । তাই ফেসবুকের কথা সরাসরি আসবে না এটাই স্বাভাবিক । আর আরেকটা কথা , ইসলাম ও কুরান হল সমগ্র বিশ্বের জন্য , সব সময়ের জন্য ।তাই সব পাপের কথা একটা একটা করে বলা হয়নি ,পাপের ধরনের কথা বলা হয়েছে । যেমন , যেনা ব্যভিচার হারাম । যেনা ব্যভিচার হল পাপের ধরন । এখন যতভাবে যেনা ব্যভিচার হোক না কেন তা হারাম । যেমন ফোন সেক্সের কথাকুরান হাদিসে কোথাও বলা নেই । তারমানে কি ফোনসেক্স জায়েজ? কোখনোই নয় ।এটা হারাম কারন তা যেনার ক্যাটাগরিতে পড়ে ।

৬নং যুক্তিঃ

আপনি কি মুফতি ? আপনি ফতোয়া দেবার কে ?

জবাবঃ

আমি ফতোয়া দিচ্ছি না । যারা ফতোয়া দিতে পারেন তাদের ফতোয়ার আলোকেই আমি বলছি । বিখ্যাত আলেম সালিহ আল মুনাজ্জিদের এই বিষয়ে ফতোয়া দেখুন               http://islamqa.info/en/169654

এছাড়া অসংখ্য মুফতির ফতোয়াও অনুরুপ ।

ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মানুষ যে বিপথে যেতে পারে তার অসংখ্য উদাহরন বিদ্যমান । 

আমি দু একটা উদাহরন তুলে ধরছি ।

http://islamweb.net/emainpage/index.php?page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=196371 এই ফতোয়াটা দেখুন । প্রশ্নকারী মহিলা একজন আলেমা ,দ্বীনের দাওয়া দেন । তিনি একটা বই কেনার জন্য অনলাইনে একজন পরপুরুষের সাথে কথা বলেছিলেন । পরবর্তিতে শায়তানের ধোকায় কিভাবে তিনি সেই ছেলের সাথে অবৈধ্য সম্পর্কে জড়ান ।

এছাড়া দুই সন্তানের জননী , তিনিও emotionally involved হয়ে পরেছিলেন । http://islamqa.info/en/12608 এইফতোয়া দেখুন ।এরকম অসংখ্য উদাহরন আছে ।

বর্তমানে ফেসবুকে দ্বীনি ভাই বোনদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ছেলেমেয়েদের দ্বীনি প্রেম,দ্বীনি চ্যাট ।

এতটুকু পড়ার পর অনেকেই বলবেন , এটা তো চ্যাটের কুফল । হুম , চ্যাটের কুফল । কিন্তু ভাই আপনি যখন মেয়ে ফ্রেন্ড অ্যাড করবেন তখন সে মাঝে মাঝে আপনার পোস্টে কমেন্ট করবে । এভাবে বার বার তার নাম দেখা , তার সাথে কথা বলা আপনাকে ধীরে ধীরে শায়তানের পথের দিকেই ধাবিত করার চেষ্টা করবে ।

আর কুরানে তো বলাই হয়েছে,

তোমরা যেনার নিকটেও যেও না , তোমরা শায়তানের পদাঙ্ক অনুসরন কর না ।

আর ছেলে ফ্রেন্ড মেয়ে ফ্রেন্ড অ্যাড এই সকল ফিতনার দরজাকেই খুলে দেয় । তাই আপনি যদি অধিক সতর্ক থাকতে চান তবে অ্যাড না করায় উত্তম হবে । আর এটাই সর্বোচ্চ তাকওয়ার দাবি ।

আমি জানি , এই পোস্ট পড়ার পর অনেক ভাই অনেক কথা বলবেন  । তাদের বলব , যারা মানতে চায় তাদের জন্য একটা দলিলই যথেষ্ট , আর যারা মানতে চায় না তাদের হাজারটা দলিল দিলেও তারা মানবে না ।তাই যারা মানতে চান মানবেন আর যারা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে মানতে চান না তারা দয়া করে ত্যানা পেচাবেন না ।কারন We believe that , Our duty is to convey , not to convert.

Youtube Video Link : দ্বীনী ভাই নাম দিয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলা কি জায়েজ?

[ দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন অথবা কপি পেস্ট করে প্রচার করুন । আমার অনুমতি লাগবে না ।]

সার্বিক কৃতজ্ঞতাঃ ফাওজুল আহসান আবির

 

Share: