আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
:
আল্লাহ বলেন:— “আমরা (আল্লাহ) প্রত্যেক জাতিতে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো।” [সূরা নাহল : আয়াত ৩৬]
:
আল্লাহ কুরআনে এভাবে বহুস্থানে “তাগুত” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তো এখন প্রশ্ন হলো তাগুতটা কী? আসুন তাগুত সম্পর্কে জেনে নিই।
:
তাগুত শব্দটি দিয়ে অনেক অর্থ বুঝায়। এর অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারো ইবাদত করা বুঝায়। হতে পারে তা শয়তান, দেবদেবী, মূর্তি, সূর্য, নক্ষত্র, ফেরেশতা, মানুষ……ইত্যাদি ইত্যাদি যাদের ইবাদত করা হয় যা বাতিল, যা হলো তাগুত। একইভাবে সূফী, মাজার, শাসক, নেতা……ইত্যাদি যাদেরকে ভ্রান্তভাবে অনুসরণ করা হয়। তাগুত মানে মিথ্যা বিচারকও বুঝায় যে মিথ্যার সাথে বিচারকার্য করে থাকে।
এই পর্যন্ত দেয়া হলো তাকিউদ্দীন হিলালী ও মুহসিন খান (রহিমাহুমুল্লা-হ)-এর “The Noble Quran” থেকে।
:
এছাড়া সালাফী মানহাজের নির্ভরযোগ্য ইংলিশ ওয়েবসাইট থেকে তাগুত সম্পর্কে সালাফদের ও আহলুল ‘ইলমদের উক্তিসমূহ থেকে নিম্নে অল্পকিছু অনুবাদ করা হলো (সাথে কিঞ্চিত পরিমার্জিত),
:
——)()()()()(——
:
==> অনেক ‘আহলুল ‘ইলমদের লিখনিতে পাওয়া যায় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেই অনুযায়ী যে বিচারকার্য করে না, সে তাগুত। এছাড়া সত্য কথা হলো যে, তাগুত কাফেরদের দ্বারাও বোঝাতে পারে এবং মুসলিমদের মধ্যে যারা পথভ্রষ্টদের নেতা… তাদেরকেও বোঝাতে পারে।
:
==> ইমাম জাওহারী (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:— “ভবিষ্যতবাণী করে এমন লোক বা গণক, শয়তান এবং পথভ্রষ্টদের নেতা—এরাই তাগুত।” [মুখতারুস সিহাহ]
:
==> ইবনু মান্ধুর (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:— “আল্লাহর ছাড়া যারই ইবাদত করা হয় তারা এবং পথভ্রষ্টদের নেতারাই হলো তাগুত।” [লিসানুল আরব]
:
==> ইবনু মান্ধুর (রহিমাহুল্লা-হ) আরো বলেন — আবু ইসহাক্ব (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:—আল্লাহর ছাড়া যারই ইবাদত করা হয় তারাই তাগুত। আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়: জাদুকর, গণক এবং শয়তান। [লিসানুল আরব]
:
==> আশ শা’বী’, ‘আতা এবং মুজাহিদ (রহিমাহুমুল্লা-হ) বলেছেন:— জাদুকর, গণক, শয়তান, এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টদের নেতা। [লিসানুল আরব]
:
==> ইমাম মালেক (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:—“আল্লাহ ছাড়া যারই ইবাদত করা হয়।” [ইবনু আবি হাতিম: সনদ সহীহ]
:
==> ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন:— “তাগুত শব্দটি তুগিয়ান থেকে নেয়া হয়েছে এবং এটা হলো যে কোনো লিমিট ক্রস করা।” [জাদুল মাসীর]
:
==> “আমরা (আল্লাহ) প্রত্যেক জাতিতে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো”—এই আয়াতে তাগুতের ব্যখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবি (রহিমাহুল্লা-হ) বলেন— “অর্থাৎ সবকিছুই বর্জন করো আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়, যেমন শয়তান, গণক, দেবদেবী, এবং সবকিছু যা ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে।”
:
==> ইমাম শাওকানি (রহিমাহুল্লা-হ) ইমাম কুরতুবির মতো একই কথা বলেন যা আছে তাফসীর ফাতহুল ক্বাদীরে।
:
==> ইবনু হিশাম (রহিমাহুল্লা-হ) (রসূল (সল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিখ্যাত জীবনীর লেখক) বলেন:— “তাগুত— প্রত্যেকটি জিনিস যা সত্য থেকে পথভ্রষ্ট করে।” [আস-সিরাতুন নববিয়্যাহ]
:
==> শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লা-হ) তাগুত সম্পর্কে বলেন:— “এটি একটি আম টাইটেল যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত— শয়তান, দেবদেবী, গণক, দিরহাম, দিনার (মুদ্রার রূপ), এবং এগুলো ছাড়া আরো যা যা আছে।” [মাজমু’-উল-ফাতাওয়া]
:
==> শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ বিন উসায়মীন (রহিমাহুল্লা-হ) বলেন:— “এই বিষয়ে (তাগুত) যা যা বলা হয়েছে ইবনুল ক্বাইয়্যিম সেগুলোকে একত্রিত করেন— বান্দার দ্বারা যার সীমা অতিক্রম করা হয়— ফলো করার ক্ষেত্রে হোক অথবা ইবাদত করার ক্ষেত্রে হোক অথবা আনুগত্যের ক্ষেত্রে হোক।” [আল-ক্বওলুল মুফীদ]
:
==> শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রহিমাহুল্লা-হ) বলেন:— তাগুত রয়েছে অনেক। এদের মধ্যে প্রধান হলো ৫টি:— ১) ইবলিস শয়তান; ২) যার ইবাদত করা হয় এবং যে এতে সন্তুষ্ট থাকে; ৩) যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবি করে; ৪) এমন কেউ যে মানুষকে তার ইবাদত করতে আহবান করে; ৫) আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেগুলো ছাড়া অন্যকিছু দিয়ে যে বিচারকার্য চালায়।
এবং এগুলোর প্রমাণ হলো তাঁর কথা, যিনি মহান (আল্লাহ):— “দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ২৫৬]
আর এটিই হলো “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” — এর অর্থ। [আদ-দুরারুস সান্নিয়্যাহ]
:
==> তাগুত শব্দ দিয়ে যে শুধু বড় কুফরিই বুঝাবে সেটা জরুরী নয়, যা শাইখুল ইসলাম ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রহিমাহুল্লা-হ)-এর উক্তি থেকে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি আরো বলেন—তাগুত হলো অনেক এবং আমাদের কাছে একেবারে পরিষ্কার হলো পাঁচটি—১) প্রথমটি হলো শয়তান; ২) অত্যাচারী শাসক; ৩) যে ঘুষ খায়; ৪) যার ইবাদত করা হয় এবং যে এতে সন্তুষ্ট থাকে; ৫) যে ‘ইলম ছাড়া আমল করে। [আদ-দুরারুস সান্নিয়্যাহ]
:
==> কাজেই, ইমাম ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রহিমাহুল্লা-হ) পরিষ্কারভাবে তাগুতের প্রধানের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছেন—অত্যাচারী শাসক, যে ঘুষ খায়, এবং যে ‘ইলম অনুযায়ী আমল করে না— আর এগুলো হলো ছোট কুফরি। বস্তুত, আহলুল ‘ইলমদের ‘ইজমা অনুযায়ী যে ঘুষ খায় সে ইসলাম থেকে বহির্ভূত হয়ে যাওয়া কাফের নয়, যতক্ষণ না সে সেটাকে হালাল মনে করে। কাজেই, এথেকে বুঝা যায় যে, ইমাম ‘আব্দুল ওয়াহহাব এবং তার পূর্বের অন্যান্য ‘উলামারা “তাগুত” শব্দটিকে শুধুমাত্র কুফরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং এটি দিয়ে গোনাহগার মুসলিমদেরও বুঝায় অথবা অত্যাচারী শাসকদেরও বুঝায় অথবা তাকেও বুঝায় যে ‘ইলম অনুযায়ী আমল করে না অথবা ভ্রষ্টকারীকেও বুঝায় যে অন্যদের পথভ্রষ্ট করে, যেমন খাওয়ারিজ বা খারেজি মতবাদের প্রধানরা।
:
==> কাজেই, উপরিউক্ত সবগুলো বক্তব্য থেকে আমরা এই মর্মে উপনীত হতে পারি যে, তাগুত শব্দটির অন্তর্ভূক্ত হলো কাফেররা, পথভ্রষ্ট ও বিদআতের নেতা-প্রধানরা………এবং উপরে শুরু থেকে যা যা বলা হলো সবকয়টিই।
:
আল্লাহই সবচেয়ে উত্তম জানেন।
:
জাযা-কুমুল্লাহু খইরন।
Courtesy Brother Abu Tawha