জানাযার স্বলাত – ড.আসাদুল্লাহ গালিব

জানাযার স্বলাত
সূত্র :: স্বলাতুর রাসূল (ﷺ)
ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব

হুকুম; ওয়াজিব সমূহ; সুন্নাত সমূহ; ফযীলত;
§ কাতার দাঁড়ানো
§ ইমামত; জানাযার স্বলাতের বিবরণ
§ জানাযার পূর্বে করণীয়; জানাযা বিষয়ে সতর্কতা
§ জানাযার দো‘আ
§ জানাযার দো‘আর আদব
§ মৃত্যুকালীন সময়ে করণীয়
§ মৃত্যুর পরে দো‘আ সমূহ এবং করণীয়
§ মৃত্যুর পরে বর্জনীয়
§ মৃত্যু পরবর্তী করণীয় সমূহ
¨ মাইয়েতের গোসল
¨ কাফন
¨ জানাযা
¨ জানাযা বহন
¨ দাফন
§ কবরে নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ
§ কবরে প্রচলিত শিরক সমূহ
§ মৃত্যুর পরে প্রচলিত বিদ‘আত সমূহ
§ কবরে আলোকসজ্জা করা
§ জানাযা বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্য সমূহ
¨ কবর ও লাশ বিষয়ে
¨ মৃতের ক্বাযা স্বলাত ও ছিয়াম
¨ গর্ভচ্যুত শিশুর জানাযা
¨ মৃতের প্রতি আদব; প্রতিবেশীদের কর্তব্য
¨ মৃতের জন্য করণীয়
¨ তিনটি ছাদাক্বা
¨ গায়েবানা জানাযা
¨ কবর যিয়ারত
¨ যিয়ারতের আদব

জানাযার স্বলাত (صلاة الجنازة) জানাযার স্বলাত হুকুম : প্রত্যেক মুসলিম আহলে ক্বিবলার উপর জানাযার স্বলাত ‘ফরযে কেফায়াহ’।[1] অর্থাৎ মুসলিমদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। না পড়লে সবাই দায়ী হবে। স্বলাত হিসাবে অন্যান্য স্বলাতের ন্যায় ওযূ, ক্বিবলা, সতর ঢাকা ইত্যাদি স্বলাতে জানাযার শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। তবে পার্থক্য এই যে, জানাযার স্বলাতে কোন রুকূ-সিজদা বা বৈঠক নেই এবং এ স্বলাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্ত নেই। বরং দিনে-রাতে সকল সময় এমনকি নিষিদ্ধ তিন সময়েও পড়া যায়।[2]

ওয়াজিব সমূহ : ছয়টি : (১) দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করা

(২) চার তাকবীর দেওয়া

(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা

(৪) দরূদ পাঠ করা

(৫) মাইয়েতের জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করা

(৬) সালাম ফিরানো।

সুন্নাত সমূহ : পাঁচটি : (১) জামা‘আত সহকারে স্বলাত আদায় করা

(২) কমপক্ষে তিনটি কাতার হওয়া

(৩) ইমাম বা একাকী মুছল্লীর জন্য পুরুষের মাথা ও মেয়েদের কোমর বরাবর দাঁড়ানো

(৪) ফাতিহা ব্যতীত অন্য একটি সূরা এবং হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করা

(৫) স্বলাত শেষে জানাযা উঠানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা। [3]

বাকী সবই ‘মুস্তাহাব’। যদি ভুলক্রমে তিন তাকবীর হয়ে যায়, তবে পুনরায় ইমাম চতুর্থ তাকবীর দিবেন। যদি মুক্তাদীর কোন তাকবীর ছুটে যায়, তবে শেষে তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর যদি না দেয় তাতেও দোষ নেই।[4]

ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় কোন জানাযায় শরীক হ’ল এবং দাফন শেষে ফিরে এলো, সে ব্যক্তি দুই ‘ক্বীরাত’ সমপরিমাণ নেকী পেল। প্রতি ‘ক্বীরাত’ ওহোদ পাহাড়ের সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র জানাযা পড়ে ফিরে এলো, সে এক ‘ক্বীরাত’ পরিমাণ নেকী পেল’। [5]

কাতার দাঁড়ানো : ইমামের পিছনে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে কাতার দিবে।[6] এ সময় জামার হাতাগুলো খুলে দিবে ও টাখনুর উপরে কাপড় রাখবে।[7] জুতা-স্যান্ডেল খোলার প্রয়োজন নেই। যদি তাতে নাপাকী থাকে, তবে তা মাটিতে ঘষে নিলেই যথেষ্ট হবে। [8] এ সময় জুতা-স্যান্ডেল থেকে পা বের করে তার উপরে দাঁড়ানো স্রেফ বোকামি। মাইয়েতকে উত্তর মাথা করে ক্বিবলার দিকে সামনে রাখবে।[9] যদি মাইয়েত পুরুষ হন, তবে ইমাম মাইয়েতের মাথা বরাবর দাঁড়াবেন। আর যদি মহিলা হন, তবে মাইয়েতের কোমর বরাবর দাঁড়াবেন।[10] মাইয়েত একত্রে একাধিক হ’লে এবং পুরুষ ও নারী হ’লে পুরুষের লাশ ইমামের কাছাকাছি সম্মুখে রাখবে। অতঃপর মহিলার লাশ থাকবে। যদি শিশু ও মহিলা হয়, তাহ’লে শিশুর লাশ প্রথমে ও মহিলার লাশ পরে থাকবে।

ইমামের পিছনে তিনটি কাতার দেওয়া মুস্তাহাব।[11] ১ম কাতারে ইমামের কাছাকাছি মাইয়েতের উত্তরাধিকারীগণ ও দ্বীনদার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ দাঁড়াবেন। চারজন হ’লে ইমামের পিছনে দু’জন দু’জন করে দাঁড়াবেন।[12] ইমাম ব্যতীত একজন পুরুষ ও একজন মহিলা মুক্তাদী হ’লে ইমামের পিছনে পুরুষ ও তার পিছনে মহিলা দাঁড়াবেন। মুক্তাদী একজন হ’লে তিনি ইমামের পিছনে দাঁড়াবেন। কোন লোক না পেলে একাকী জানাযা পড়বেন।[13] তবে শিরক ও বিদ‘আতী আক্বীদা ও আ‘মাল মুক্ত দ্বীনদার মুছল্লীর সংখ্যা জানাযায় যত বেশী হবে, মাইয়েতের জন্য তা তত বেশী উপকারী হবে এবং তাদের দো‘আ কবুল করা হবে’।[14]

ইমামত : মাইয়েত কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে অছিয়ত করে গেলে তিনিই জানাযা পড়াবেন। নইলে ‘আমীর’ বা তাঁর প্রতিনিধি অথবা মাইয়েতের কোন যোগ্য নিকটাত্মীয়, নতুবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মুত্তাক্বী আলেম জানাযায় ইমামতি করবেন। মৃত ব্যক্তি দু’জন ব্যক্তির নামেও অছিয়ত করে যেতে পারেন। [15]

জানাযার স্বলাতের বিবরণ (صفة صلاة الجنازة) : জানাযার স্বলাতে চার তাকবীর দিবে। পাঁচ থেকে নয় তাকবীর পর্যন্ত প্রমাণিত আছে। তবে চার তাকবীরের হাদীছ সমূহ অধিকতর ছহীহ ও সংখ্যায় অধিক। মুক্তাদী ইমামের পিছে পিছে তাকবীর বলবে।[16] প্রথমে মনে মনে জানাযার নিয়ত করে সরবে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধবে। এ সময় ‘ছানা’ পড়বে না।[17] নাভির নীচে হাত বাঁধার হাদীছ সর্বসম্মতভাবে ‘যঈফ’।[18] আনাস, ইবনে ওমর, ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ সকল তাকবীরেই হাত উঠাতেন।[19] অতঃপর আ‘ঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে। [20] তারপর ২য় তাকবীর দিবে ও দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করবে, যা আত্তাহিইয়াতু-র পরে পড়া হয়। তারপর ৩য় তাকবীর দিবে ও নিম্নোক্ত দো‘আ সমূহ পড়বে। দো‘আ পাঠ শেষে ৪র্থ তাকবীর দিয়ে প্রথমে ডাইনে ও পরে বামে সালাম ফিরাবে। ডাইনে একবার মাত্র সালাম ফিরানোও জায়েয আছে। [21]

জানাযার স্বলাত সরবে ও নীরবে পড়া যায়।[22] ইমাম সরবে পড়লে মুক্তাদীগণ আ‘ঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ কেবল সূরায়ে ফাতিহা চুপে চুপে পড়বে এবং পরে দরূদ ও অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়বে। তবে ইমাম নীরবে পড়লে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা এবং অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়বে।

জানাযার পূর্বে করণীয় :জানাযার পূর্বে মৃতের জন্য প্রথম করণীয় হ’ল তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা। এজন্য তার সকল সম্পদ বিক্রি করে হ’লেও তা করতে হবে। যদি তার কিছুই না থাকে, তাহ’লে তার নিকটাত্মীয়, সমাজ, সংগঠন বা সরকার সে দায়িত্ব বহন করবে’।[23]

জানাযা বিষয়ে সতর্কতা : মহাপাপী কোন মুসলিম যেমন কোন ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, চোর-দস্যু-সন্ত্রাসী, আত্মঘাতি, জারজ সন্তান, কবর ও মূর্তি পূজারী, মুশরিক ও বিদ‘আতী যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে কুফরী ঘোষণা করে, আমানতের খেয়ানতকারী প্রভৃতি লোকদের জানাযা কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও পরহেযগার আলেমগণ পড়বেন না। তবে সাধারণ লোকেরা পড়বেন। [24]

ঋণগ্রস্ত, আত্মহত্যাকারী ও বায়তুল মাল বা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারীর জানাযা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে পড়েননি, বরং অন্যকে পড়তে বলেন।[25] ‘এটি ছিল তাঁর পক্ষ থেকে অন্যকে আদব শিখানোর জন্য’। [26]

(১) খায়বার কিংবা হোনায়েন-এর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জনৈক সাথী বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে। লোকেরা তার উচ্চ প্রশংসা করলে রাসূল (ﷺ) বললেন, ঐ ব্যক্তি জাহান্নামের অধিবাসী। তখন একজন গোপনে তার পিছু নিল। দেখা গেল যে, ঐ ব্যক্তি যুদ্ধের এক পর্যায়ে আহত হ’ল। অতঃপর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজের অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করল। তখন লোকটি ছুটে এসে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সবাইকে ডেকে বললেন, সত্যিকারের মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। মনে রেখ অনেক লোক জান্নাতী আ‘মাল করে। কিন্তু মৃত্যুকালে জাহান্নামী হয়ে যায়। আবার অনেকে জাহান্নামের আ‘মাল করে, কিন্তু মৃত্যুকালে জান্নাতী হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন إِنَّ اللهَ يُؤَيِّدُ هَذَا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এই দ্বীনকে সাহায্য করেন অনেক পাপী লোকের মাধ্যমে’।[27]

আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়াবান’ (নিসা ৪/২৯)।

(২) খায়বার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথীদের মধ্যে একজন নিহত হ’লে তিনি বলেন, صَلُّوْا عَلَى صَاحِبِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়’। এতে তাদের মন খারাপ হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বললেন, إِنَّ صَاحِبَكُمْ غَلَّ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ ‘তোমাদের সাথীটি আল্লাহর রাস্তায় খেয়ানত করেছে’। পরে অনুসন্ধানে তার থলিতে ইহুদীদের কণ্ঠহারের একটি ছিদ্রযুক্ত ছোট পাথরের লকেট(خَرَزٌ) পাওয়া গেল (যা গণীমতের মাল ছিল)। যার মূল্য দুই দিরহামেরও কম। [28]

(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে হাদিয়া হিসাবে পাঠানো গোলাম মিদ‘আম (مِدْعَم) খায়বার যুদ্ধে নিহত হ’লে লোকেরা তার জান্নাতের সুসংবাদ বলতে থাকলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাগতঃস্বরে বলেন, কখনোই না। আল্লাহর কসম! গণীমতের মাল থেকে যে চাদরটি সে চুরি করেছে, তা তাকে আগুনে পোড়াবে’। [29]

(৪) অন্য হাদীছে এসেছে, ‘মুমিনের নফ্স তার ঋণের সাথে লটকানো থাকে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তার ঋণ পারিশোধ করা হয়’। [30]

(৫) যারা শরীক ফাঁকি দেয় কিংবা শক্তির জোরে বা ছল-চাতুরী করে অন্যের জমি ও সম্পদ আত্মসাৎ করে, তাদের জানাযা কোন পরহেযগার আলেমের পড়া উচিৎ নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّهُ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرْضِيْنَ ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারু জমি দখল করে, ক্বিয়ামতের দিন সাত তবক যমীন তার গলায় বেড়ীরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে’।[31] অন্য বর্ণনায় এসেছে, مَنْ أَخَذَ أَرْضًا بِغَيْرِ حَقِّهَا كُلِّفَ أَنْ يَّحْمِلَ تُرَابَهَا الْمَحْشَرَ ‘…তাকে ক্বিয়ামতের দিন ঐ মাটির বোঝা মাথায় বহন করে চলতে বাধ্য করা হবে’।[32]

উপরোক্ত ব্যক্তিগণ কবীরা গোনাহগার। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে স্বলাত তরককারী ব্যক্তিকে হাদীছে ‘কাফির’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। [33] তাহ’লে কিভাবে তার জানাযা পড়া যেতে পারে? আল্লাহ আমাদের হেদায়াত করুন- আমীন!

জানাযার দো‘আ (دعاء الجنازة) : অনেকগুলি দো‘আর মধ্যে নিম্নের দো‘আটি সুপরিচিত।-

1- اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اَللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيْمَانِ، اَللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُ-

(১) উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির লিহাইয়েনা ওয়া মাইয়েতেনা ওয়া শা-হেদেনা ওয়া গা-য়েবেনা ওয়া ছাগীরেনা ওয়া কাবীরেনা ওয়া যাকারেনা ওয়া উন্ছা-না, আল্লা-হুম্মা মান আই্য়াইতাহূ মিন্না ফাআহ্য়িহী ‘আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ্ফায়তাহূ মিন্না ফাতাওফ্ফাহূ ‘আলাল ঈমান। আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহূ ওয়া লা তাফ্তিন্না বা‘দাহূ।

অনূবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত এবং (এই জানাযায়) উপস্থিত-অনুপস্থিত আমাদের ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সকলকে আপনি ক্ষমা করুন। যাকে আপনি বাঁচিয়ে রাখবেন, তাকে ইসলামের উপরে বাঁচিয়ে রাখুন এবং যাকে মারতে চান, তাকে ঈমানের হালতে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! এই মাইয়েতের (জন্য দো‘আ করার) উত্তম প্রতিদান হ’তে আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার পরে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন না’।[34]

(২) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দো‘আ যা প্রথমটির সাথে যোগ করে পড়া যায় বিশেষভাবে মাইয়েতের উদ্দেশ্যে। যেমন-

2- اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ وَوَسِّعْ مَدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّيْ الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهِ وَأَهْلاً خَيْرًا مِّنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِّنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির লা-হূ ওয়ারহামহু ওয়া ‘আ-ফিহি ওয়া‘ফু ‘আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহূ ওয়া ওয়াস্সি‘ মাদ্খালাহূ; ওয়াগ্সিলহু বিলমা-এ ওয়াছ্ছালজে ওয়াল বারাদে; ওয়া নাক্বক্বিহি মিনাল খাত্বা-য়া কামা ইউনাক্বক্বাছ্ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্ দানাসি; ওয়া আবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খায়রাম মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খায়রাম মিন যাওজিহী; ওয়া আদখিল্হুল জান্নাতা ওয়া আ‘ইয্হু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরে ওয়া মিন ‘আযা-বিন না-রে ।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি এই মাইয়েতকে ক্ষমা করুন। তাকে অনুগ্রহ করুন। তাকে নিরাপদে রাখুন এবং তার গোনাহ মাফ করুন। আপনি তাকে সম্মানজনক আতিথেয়তা প্রদান করুন। তার বাসস্থান প্রশস্ত করুন। আপনি তাকে পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা ধৌত করুন এবং তাকে পাপ হ’তে এমনভাবে মুক্ত করুন, যেমনভাবে সাদা কাপড় ময়লা হ’তে ছাফ করা হয়। আপনি তাকে দুনিয়ার গৃহের বদলে উত্তম গৃহ দান করুন। তার দুনিয়ার পরিবারের চাইতে উত্তম পরিবার এবং দুনিয়ার জোড়ার চাইতে উত্তম জোড়া দান করুন। তাকে আপনি জান্নাতে দাখিল করুন এবং তাকে কবরের আযাব হ’তে ও জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’।[35]

3- اَللَّهُمَّ إِنَّ فُلاَنَ بْنَ فُلاَنٍ فِيْ ذِمَّتِكَ وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ، وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَارْحَمْهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرالرَّحِيْمُ-

(৩) উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলা-নাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা ওয়া হাবলি জিওয়া-রিকা; ফাক্বিহী মিন ফিৎনাতিল ক্বাবরি ওয়া ‘আযা-বিন্না-রি; ওয়া আন্তা আহলুল ওয়াফা-ই ওয়াল হাক্বক্বি। আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম ।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! অমুকের পুত্র অমুক আপনার যিম্মায় ও আপনার তত্ত্বাবধানে আবদ্ধ। অতএব আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা ও জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও সত্যের মালিক। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন ও তাকে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।[36]

4- اَللَّهُمَّ عَبْدُكَ وَابْنُ أَمَتِكَ احْتَاجَ إِلَى رَحْمَتِكَ، وَأَنْتَ غَنِيٌّ عَنْ عَذَابِهِ، إِنْ كَانَ مُحْسِنًا فَزِدْ فِي حَسَنَاتِهِ، وَإِنْ كَانَ مُسِيْئًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ-

(৪) উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ‘আব্দুকা ওয়া ইবনু আমাতিকা, ইহতা-জা ইলা রহমাতিকা ওয়া আনতা গানিইয়ুন ‘আন ‘আযা-বিহী। ইন কা-না মুহসিনান ফাযিদ ফী হাসানা-তিহী; ওয়া ইন কা-না মুসীআন, ফাতাজা-ওয়ায ‘আনহু।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! মাইয়েত আপনার বান্দা এবং সে আপনার এক বান্দীর সন্তান। সে আপনার রহমতের ভিখারী। আপনি তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য নন। অতএব যদি সে সৎকর্মশীল হয়, তাহ’লে তার নেকী বাড়িয়ে দিন। আর যদি অন্যায়কারী হয়, তাহ’লে তাকে আপনি ক্ষমা করে দিন’।[37]

(৫) মাইয়েত শিশু হ’লে সূরা ফাতিহা, দরূদ ও জানাযার ১ম দো‘আটি পাঠের পর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে-

5- اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا سَلَفًا وَّ فَرَطًا وَّ ذُخْرًا وَّ أَجْرًا ، رواه البخاريُّ تعليقًا-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ‘আলহু লানা সালাফাওঁ ওয়া ফারাত্বাওঁ ওয়া যুখ্রাওঁ ওয়া আজরান’। ‘লানা’-এর সাথে ‘ওয়া লে আবাওয়াইহে’ (এবং তার পিতা-মাতার জন্য) যোগ করে বলা যেতে পারে।[38]

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি এই শিশুকে আমাদের জন্য (এবং তার পিতা-মাতার জন্য) পূর্বগামী, অগ্রগামী এবং আখেরাতের পুঁজি ও পুরস্কার হিসাবে গণ্য করুন’! [39]

জানাযার দো‘আর আদব (آداب دعاء الجنازة) : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوْا لَهُ الدُّعَاءَ – ‘যখন তোমরা জানাযার স্বলাত আদায় করবে, তখন মাইয়তের জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করবে’।[40] অতএব মাইয়েত ভাল-মন্দ যাই-ই হৌক না কেন, তার জন্য খোলা মনে দো‘আ করতে হবে। কবুল করা বা না করার মালিক আল্লাহ। ছাহেবে ‘আওন বলেন, অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মৃতের জন্য নির্দিষ্ট কোন দো‘আ নেই। বরং যেকোন প্রার্থনা করা যেতে পারে। শাওকানীও সেকথা বলেন। তবে তিনি বলেন যে, হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করাই উত্তম। এই সময় সর্বনাম সমূহ পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কেননা ‘মাইয়েত’ এখানে উদ্দেশ্য। ‘মাইয়েত’ (مَيِّتٌ) আরবী শব্দ, যা স্ত্রী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গে ব্যবহৃত হয়।[41]

মৃত্যুকালীন সময়ে করণীয় (الأعمال عند من حضره الموت) (ক) তালক্বীন করানো : ‘তালক্বীন’ (التلقين) অর্থ: কথা বুঝানো বা দ্রুত মুখস্থ করে নেওয়া। মৃত্যুর আলামত দেখা গেলে রোগীর শিয়রে বসে তাকে কালেমায়ে ত্বাইয়িবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ানো উচিত।[42] যাতে সে দ্রুত মুখস্থ বা স্মরণ করে নেয়। তাওয়াহ্‌য়ীদের স্বীকৃতিবাচক এই কালেমাই তাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছা্ঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (অর্থ : নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত), সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[43] জমহূর বিদ্বানগণ কেবল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। কেননা হাদীছে কেবল এতটুকুই এসেছে।[44]

তালক্বীনের অর্থ মৃত্যুমুখী ব্যক্তিকে কেবল কালেমা শুনানো নয়। বরং তাকে কালেমা পড়ানোর চেষ্টা করা। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জনৈক আনছার রোগীকে দেখতে গেলেন ও বললেন, হে মামু! আপনি পড়ুন লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ। তিনি বললেন যে, আমাকে এখতিয়ার দিন, আমি নিজেই পড়ি…। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ’।[45] কিন্তু কালেমা পড়ানোর জন্য চাপাচাপি করা উচিত নয়। তাতে মুখ দিয়ে বেফাস কথা বের হয়ে যেতে পারে। একবার বলানোর পরে দ্বিতীয়বার চেষ্টা না করা উচিত। যাতে এই কালেমাই তার শেষ বাক্য হয়। এই সময় তাকে ক্বিবলামুখী করার জন্য উত্তর দিকে মাথা করে বিছানা ঠিক করে দেওয়া সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। খ্যাতনামা তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে ক্বিবলামুখী করে বিছানা ঘুরিয়ে দিলে হুঁশ ফেরার পর তিনি পুনরায় পূর্বের ন্যায় শয়ন করেন ও বলেন, মাইয়েত কি মুসলিম নয়? [46] এই সময় মাইয়েতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার হাদীছ ‘যঈফ’।[47]

মৃত্যুর পরে দো‘আ সমূহ এবং করণীয় :

(১) মৃত্যু হওয়ার পরে উপস্থিত সকলে এবং যারা শুনবেন তারা প্রত্যেকে إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ‘ইন্না লিল্লা-হে ওয়া ইন্না ইলাইহে রা-জে‘ঊন’ (অর্থ : ‘আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’) পাঠ করবে এবং আল্লাহ-নির্ধারিত তাক্বদীরের উপরে ছবর করবে ও সন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর (২) মৃতের চোখ দু’টি বন্ধ করে দিবে। [48] সারা দেহ ও মুখমন্ডল কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে।[49] তবে (হজ্জ বা ওমরাহ কালে) ‘মুহরিম’ ব্যক্তির মুখ ও মাথা খোলা থাকবে। কেননা তিনি ক্বিয়ামতের দিন ‘তালবিয়া’ পাঠ করতে করতে উঠবেন। [50]

(৩) এই সময় মাইয়েতের নিকটতম ব্যক্তি এই দো‘আ পড়বে : اَللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا ‘আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুছীবাতী ওয়া আখলিফ্লী খায়রাম মিনহা’ (অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের পারিতোষিক দান কর এবং আমাকে এর উত্তম প্রতিদান দাও’)।[51]

(৪) এসময় মৃতের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া যেতে পারে। যা আবু সালামাহ (রাঃ)-এর জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাঠ করেছিলেন,

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّيْنَ وَاخْلُفْهُ فِيْ عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ، وَافْسَحْ لَهُ فِيْ قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়ীনা ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীনা, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রববাল ‘আ-লামীন; ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাওভির লাহু ফীহি।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং সুপথপ্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। পিছনে যাদেরকে তিনি ছেড়ে গেলেন, তাদের মধ্যে আপনিই তার প্রতিনিধি হউন। হে বিশ্ব চরাচরের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন। আপনি তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং সেটিকে তার জন্য আলোকিত করে দিন’। [52]

(৫) এই সময় মৃতের মাগফেরাতের জন্য দো‘আ করা ও তার সদগুণাবলী বর্ণনা করা উচিত। কেননা তাতে ফেরেশতাগণ ‘আমীন’ বলেন ও তার জন্য ওগুলি ওয়াজিব হয়ে যায়’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[53] একটি বর্ণনায় এসেছে যে, ৪, ৩ এমনকি ২ জন নেককার মুমিন ব্যক্তিও যদি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম সাক্ষ্য দেয়, তাতেই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।[54] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোন মুসলিম মারা গেলে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের চারজন যদি তার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত কিছুই জানে না, তাহ’লে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষ্য কবুল করলাম এবং আমি তার ঐসব গোনাহ মাফ করে দিলাম, যেগুলি তোমরা জানো না’। [55] উল্লেখ্য যে, জানাযার সময় মাইয়েত সম্পর্কে উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘ভাল’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার রেওয়াজটি নিন্দনীয় বিদ‘আত।[56]

(৬) দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে এবং মৃতের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা নিবে, যদি তার সমস্ত মাল দিয়েও হয়। কিছু না থাকলে বা কেউ না থাকলে বা ঋণ মাফ না করলে সমাজ বা রাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করবে।[57]

মৃত্যুর পরে বর্জনীয় : (১) উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা।[58]

(২) বাজারে, মিনারে (মাইকে) ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা। [59]

(৩) অতিরঞ্জিত শোক প্রকাশ ও বিলাপধ্বনি করা। মুখ ও বুক চাপড়ানো। মেয়েদের মাথার কাপড় ফেলা ও বুকের কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি।[60] ছাহাবী হোযায়ফা (রাঃ) অছিয়ত করে বলেন, আমি মারা যাওয়ার পরে কাউকে সংবাদ দিয়ো না। আমার ভয় হয় এটা না‘ঈ বা শোক সংবাদ হবে কি-না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ থেকে নিষেধ করেছেন’। অন্যান্য ছাহাবী থেকেও এধরনের অছিয়ত বহু রয়েছে। [61] সেকারণ ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেকের উচিত এভাবে অছিয়ত করে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুর পরে কোন প্রকার বিদ‘আত না করা হয়।[62]

(৪) মৃতের জন্য তিনদিন পর্যন্ত শোক প্রকাশের অনুমতি রয়েছে, তার বেশী নয়। [63]

(৫) দাফনে দেরী করা এবং জানাযা করে বা না করে নিকটাত্মীয় আসার অপেক্ষায় লাশ বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া সম্পূর্ণরূপে সুন্নাত বিরোধী কাজ। (৬) মৃত্যুর পরপরই বাড়ীতে এবং জানাযাকালে ও কবরস্থানে ছাদাক্বা বিতরণ করা নাজায়েয। [64]

মৃত্যু পরবর্তী করণীয় সমূহ (الأعمال بعد الموت) মৃত্যুর পর পাঁচটি কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। যথা গোসল, কাফন, জানাযা, জানাযা বহন ও দাফন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُوْنَهَا إِلَيْهِ، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُوْنَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ ‘তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর। কেননা যদি মৃত ব্যক্তি পুণ্যবান হয়, তবে তোমরা ‘ভাল’-কে দ্রুত কবরে সমর্পণ কর। আর যদি অন্যরূপ হয়, তাহ’লে ‘মন্দ’-কে দ্রুত তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দাও’। [65]

(১) মাইয়েতের গোসল (غسل الميت) :

(ক) গোসল ও কাফন-দাফনের ছওয়াব : উক্ত কাজ সমূহে অশেষ ছওয়াব রয়েছে দু’টি শর্তে। এক- যদি তিনি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করেন এবং বিনিময়ে দুনিয়াবী কিছুই গ্রহণ না করেন’ (কাহফ ১৮/১১০)। দুই- যদি তিনি মাইয়েতের কোন অপসন্দীয় বিষয় গোপন রাখেন।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করালো। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখলো, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’। [66]

(খ) হুকুম: মাইয়েতের দ্রুত গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া সুন্নাত।[67] গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পূর্ণ শালীনতা ও পরহেযগারীর সাথে কুলপাতা দেওয়া পানি বা সুগন্ধি সাবান দিয়ে সুন্দরভাবে গোসল করাবে। সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন। পুরুষ পুরুষকে ও মহিলা মহিলা মাইয়েতকে গোসল দিবেন। তবে মহিলাগণ শিশুকে গোসল দিতে পারবেন। [68] স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে বিনা দ্বিধায় গোসল করাবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলেন, ‘যদি আমার পূর্বে তুমি মারা যাও, তাহ’লে আমি তোমাকে গোসল দেব, কাফন পরাব, জানাযা পড়াব ও দাফন করব’। [69] হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) এবং হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে তাঁর স্বামী হযরত আলী (রাঃ) গোসল দিয়েছিলেন।[70] ধর্মযুদ্ধে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না। [71] পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে’।[72]

(গ) গোসলের পদ্ধতি : ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গ সমূহ প্রথমে ধৌত করবে। ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে। পূর্ণ পর্দার সাথে মাইয়েতের দেহ থেকে পরনের কাপড় খুলে নেবে। গোসলের সময় লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না বা খালি হাতে স্পর্শ করবে না। তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় সমস্ত দেহে পানি ঢালবে। গোসল শেষে কর্পূর বা কোন সুগন্ধি লাগাবে। মাইয়েত মহিলা হ’লে চুল খুলে দেবে। অতঃপর বেণী করে তিনটি ভাগে পিছন দিকে ছড়িয়ে দেবে। [73]

(২) কাফন (التكفين) : সাদা, সুতী ও সাধারণ মানের পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেওয়া কর্তব্য। তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে। কেননা জীবিত মানুষ নতুন কাপড়ের অধিক মুখাপেক্ষী। পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি মাথা হ’তে পা ঢাকার মত বড় চাদর ও দু’টি ছোট কাপড়। অর্থাৎ একটি লেফাফা বা বড় চাদর। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা। বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে। শহীদকে তার পরিহিত পোষাকে এবং মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে। কাফনের কাপড়ের অভাব ঘটলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে। কাফনের পরে তিনবার সুগন্ধি ছিটাবে। তবে মুহরিমের কাফনে সুগন্ধি ছিটানো যাবে না।[74] মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ না থাকলে কিংবা তাতে কাফনের ব্যবস্থা না হ’লে কেউ দান করবে অথবা বায়তুল মাল থেকে বা সরকারী তহবিল থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।[75] মহিলাদের জন্য প্রচলিত পাঁচটি কাপড়ের হাদীছ ‘যঈফ’। [76]

(৩) জানাযা (الجنازة) : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মসজিদের বাইরের নির্দিষ্ট স্থানে অধিকাংশ সময় জানাযা পড়াতেন।[77] তবে প্রয়োজনে মসজিদেও জায়েয আছে। সুহায়েল বিন বায়যা (রাঃ) ও তার ভাইয়ের জানাযা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মসজিদের মধ্যে পড়েছিলেন।[78] হযরত আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর জানাযা মসজিদের মধ্যে হয়েছিল। [79] মেয়েরাও পর্দার মধ্যে জানাযায় শরীক হ’তে পারেন। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন (রাঃ) মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন।[80] মহিলাগণ একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন। গোরস্থানের মধ্যে জানাযা না করা উচিত।[81] সেখানে কোন মসজিদও নির্মাণ করা যাবে না।[82] তবে কেউ জানাযা না পেলে পরে যেকোন দিন গিয়ে কবরে একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন।[83] উল্লেখ্য যে, লাশ পচে গেলে এবং দুর্গন্ধে কাছে দাঁড়ানো সম্ভব না হ’লে দাফন করার পরে কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে জানাযা পড়া যাবে।[84] একই ব্যক্তি বিশেষ কারণে একাধিক বার জানাযার স্বলাত আদায় করতে পারেন বা ইমামতি করতে পারেন।[85]

জ্ঞাতব্য : (ক) বর্তমান যুগে অনেকে দাফনের পরপরই পুনরায় হাত তুলে দলবদ্ধভাবে দো‘আ করেন। কেউ একই দিনে বা দু’একদিন পরে আত্মীয়-স্বজন ডেকে এনে মৃতের বাড়ীতে দো‘আর অনুষ্ঠান করেন। এগুলি নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। জানা আবশ্যক যে, জানাযার স্বলাতই হ’ল মৃতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এটা ব্যতীত মুসলিম মাইয়েতের জন্য পৃথক কোন দো‘আর অনুষ্ঠান ইসলামী শরী‘আতে নেই।

(খ) জানাযার পরে বা দাফনের পূর্বে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে করুণ সুরে বিউগল বাজানো সহ যা কিছু করা হয়, সবটাই বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে মৃতের উপর বিলাপধ্বনি করা হয়, কবরে ও ক্বিয়ামতের দিন এজন্য তাকে আযাব দেওয়া হবে’।[86] আর এটা নিঃসন্দেহে ঐ মাইয়েতের জন্য, যে এসব কাজ সমর্থন করে এবং এসব না করার জন্য মৃত্যুর আগে অছিয়ত না করে যায়।[87]

(৪) জানাযা বহন (حمل الجنازة) : জানাযা কাঁধে বহন করা সুন্নাত।[88] এ সময় মাথা সম্মুখ দিকে রাখবে। [89] মৃতের পরিবারের লোকেরা ও নিকটাত্মীয়গণ এর প্রথম হকদার। এ দায়িত্ব কেবল পুরুষদের, মেয়েদের নয়। জানাযার পিছে পিছে মেয়েদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নয়। এই সময় সরবে কান্নাকাটি করা যাবে না। ধূপ-ধুনা ইত্যাদি অগ্নিযুক্ত সুগন্ধি বহন করা যাবে না। সরবে যিকর, তাকবীর ও তেলাওয়াত বা অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না। বরং মৃত্যুর চিন্তা করতে করতে চুপচাপ ভাবগম্ভীরভাবে মধ্যম গতিতে মাইয়েতের পিছে পিছে কবরের দিকে এগিয়ে যাবে। চলা অবস্থায় রাস্তায় (বিনা প্রয়োজনে) বসা যাবে না।[90] মাইয়েতের পিছনে কাছাকাছি চলাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে সম্মুখে ও ডাইনে-বামে চলা যাবে। কেউ গাড়ীতে গেলে তাকে পিছে পিছেই যেতে হবে।[91] কোন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি বা মুরববী আলেম জানাযায় যোগদানে সক্ষম না হ’লে মাইয়েতকে তাঁর সামনে এনে রাখা যাবে। যাতে তিনি একাকী হ’লেও জানাযা পড়তে পারেন। যারা জানাযার পিছনে চলবেন, তাদের ওযূ অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব। তবে আবশ্যিক নয়।

বর্তমান যুগে কোন কোন স্থানে জানাযার জন্য গাড়ীতে করে লাশ বহন করতে দেখা যায়। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। নিতান্ত বাধ্য না হ’লে একাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা এটা ইহুদী-নাছারাদের অনুকরণ মাত্র। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, عُوْدُوا الْمَرِيْضَ وَاتَّبِعُوا الْجَنَائِزَ تُذَكِّرْكُمُ الْآخِرَةَ – ‘তোমরা রোগীর সেবা কর এবং জানাযার অনুগমন কর। তা তোমাদের আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেবে’।[92] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জানাযার সাথে ফেরেশতাগণ পায়ে হেঁটে চলেন এবং জানাযা শেষে তারা চলে যান। একারণে আমি বাহনে সওয়ার হইনি। এখন তাঁরা চলে গেছেন বিধায় সওয়ার হ’লাম’। [93]

(৫) দাফন (التدفين) : মুসলিম মাইয়েতকে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করতে হবে, ইহুদী-নাছারা ও কাফের-মুশরিকদের সাথে নয়। যাতে তারা মুসলিম যিয়ারতকারীদের দো‘আ লাভে উপকৃত হন। শিরক ও বিদ‘আতপন্থী ব্যক্তির পাশে ছহীহ হাদীছপন্থী মুসলিমের কবর দেওয়া উচিত নয়। হযরত জাবের (রাঃ) তাঁর পিতার লাশ অন্য মুসলিমের পাশ থেকে যাকে তিনি অপসন্দ করতেন, ৬ মাস পরে উঠিয়ে অন্যত্র দাফন করেছিলেন।[94] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তাঁর শয়ন কক্ষে দাফন করা হয়েছিল। এটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাছাড়া তাঁর পাশে তাঁর দুই মহান সাথীকে কবর দেওয়া হয়েছিল, যাতে কেউ পৃথকভাবে তাঁর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করতে না পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমগণ যেখানে শহীদ হবেন, সেখানেই কবরস্থ হবেন।[95] মুসলিম যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, সেখানকার মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা উচিত। তবে সঙ্গত কারণে অন্যত্র নেওয়া যাবে।[96]

কবর উত্তর-দক্ষিণে লম্বা, গভীর, প্রশস্ত, সুন্দর ও মধ্যস্থলে বিঘত খানেক উঁচু করে দু’দিকে ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক উঁচু করা নাজায়েয। ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবর জায়েয আছে। যাকে এদেশে যথাক্রমে ‘পাশখুলি’ ও ‘বাক্স কবর’ বলা হয়। তবে ‘লাহদ’ উত্তম। মাইয়েতকে কবরে নামানোর দায়িত্ব পুরুষদের। মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তীগণ ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিগণ এই দায়িত্ব পালন করবেন, যিনি পূর্বরাতে (বা দাফনের পূর্বে) স্ত্রী সহবাস করেননি। পায়ের দিক দিয়ে মোর্দা কবরে নামাবে (অসুবিধা হ’লে যেভাবে সুবিধা সেভাবে নামাবে)। মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে। এই সময় কাফনের কাপড়ের গিরাগুলি খুলে দেবে। [97]

কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ (অর্থ: ‘আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের দ্বীনের উপরে’) বলবে। ‘মিল্লাতে’-এর স্থলে ‘সুন্নাতে’ বলা যাবে। এই সময় কোন সুগন্ধি বা গোলাপ পানি ছিটানো বিদ‘আত। [98] কবর বন্ধ করার পরে উপস্থিত সকলে (বিসমিল্লাহ বলে) তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দেবে।[99] এ সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ (ত্বোয়াহা ২০/৫৫) পড়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। [100] অনুরূপভাবে আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বা-নি ওয়া মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরে… পড়ার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।[101]

দাফন চলাকালীন সময়ে কবরের নিকটে বসে কবর আযাব, জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন ও জান্নাতের সুসংবাদের উপরে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে আলোচনা করবে। এই সময় প্রত্যেকে দু’তিনবার করে পড়বে- اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে কবরের আযাব হ’তে পানাহ চাই)।[102]

দাফনের পরে মাইয়েতের ‘তাছবীত’ (التثبيت) অর্থাৎ মুনকার ও নাকীর (দু’জন অপরিচিত ফেরেশতা)-এর সওয়ালের জওয়াব দানের সময় যেন তিনি দৃঢ় থাকতে পারেন, সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে সকলের দো‘আ করা উচিত। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ وَسَلُوا اللهَ لَهُ التَّثْبِيْتَ فَإِنَّهُ اَلْآنَ يُسْأَلُ ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে জিজ্ঞাসিত হবে’। [103] অতএব এ সময় প্রত্যেকের নিম্নোক্ত ভাবে দো‘আ করা উচিত। যেমন,

(১) اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَثَبِّتْهُ ‘আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ ওয়া ছাবিবতহু’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন ও তাকে দৃঢ় রাখুন’)।[104] অথবা

(২) اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ ‘আল্লা-হুম্মা ছাবিবতহু বিল ক্বাউলিছ ছা-বিত’ (হে আল্লাহ! আপনি তাকে কালেমা শাহাদাত দ্বারা সুদৃঢ় রাখুন)। এই সময় ঐ ব্যক্তি দো‘আর ভিখারী। আর জীবিত মুমিনের দো‘আ মৃত মুমিনের জন্য খুবই উপকারী। এই সময় মাইয়েতের তালক্বীনের উদ্দেশ্যে সকলের লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ পাঠের কোন দলীল নেই। যেটা শাফেঈ মাযহাবে ব্যাপকভাবে চালু আছে।[105]

(৩) পূর্বে বর্ণিত জানাযার ২ নং দো‘আটি এবং ৩ নং দো‘আটির শেষাংশটুকুও اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَارْحَمْهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرالرَّحِيْمُ (আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম) পড়া যায়। কিন্তু দাফনের পরে একজনের নেতৃত্বে সকলে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা ও সকলের সমস্বরে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।

কবরে নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ (المنهيات على القبور) : (১) কবর এক বিঘতের বেশী উঁচু করা, পাকা ও চুনকাম করা, সমাধি সৌধ নির্মাণ করা, গায়ে নাম লেখা, কবরের উপরে বসা, কবরের দিকে ফিরে স্বলাত আদায় করা। [106] (২) ধুয়ে-মুছে সুন্দর করা, কবরে মসজিদ নির্মাণ করা, সেখানে মেলা বসানো, ওরস করা ও কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করা।[107] (৩) কবরের নিকটে গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি যবেহ করা। জাহেলী যুগে দানশীল ও নেককার ব্যক্তিদের কবরের পাশে এগুলি করা হ’ত।[108] (৪) কবরে ফুল দেওয়া, গেলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টাঙ্গানো ইত্যাদি।[109] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ দেননি’।[110] এগুলি স্পষ্টভাবে কবরপূজার শামিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন,

عَنْ أَبِى الْهَيَّاجِ الأَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِى عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ: أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ-

‘তুমি কোন মূর্তিকে ছেড় না নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত এবং কোন উঁচু কবরকে ছেড় না মাটি সমান না করা পর্যন্ত’। [111]

(ক) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রার্থনা করেছেন, اَللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُّعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে ইবাদতের স্থানে পরিণত করো না। আল্লাহর গযব কঠোরতর হয় ঐ জাতির উপরে, যারা তাদের নবীর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করে।[112]

(খ) আজকাল কবরকে ‘মাযার’ বলা হচ্ছে। যার অর্থ: পবিত্র সফরের স্থান। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে গেছেন, ‘(নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে) তিনটি স্থান ব্যতীত সফর করা যাবে না, মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ’।[113] তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেন, لاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا ‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করো না’।[114]

(গ) মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তিনি উম্মতকে সাবধান করে বলেন,لاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ – ‘সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে সিজদার স্থানে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে যাচ্ছি’।[115]

(ঘ) কবরে মসজিদ নির্মাণকারী ও সেখানে মৃতব্যক্তির ছবি, মূর্তি ও প্রতিকৃতি স্থাপনকারীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘এরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকটে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে গণ্য হবে’। [116]

(ঙ) কবরের বদলে কোন গৃহে বা রাস্তার ধারে বা কোন বিশেষ স্থানে মৃতের পূর্ণদেহী বা আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করে বা স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা পরিষ্কারভাবে মূর্তিপূজার শামিল। যা স্পষ্ট শিরক এবং যা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

উল্লেখ্য যে, মাথাসহ আবক্ষ ছবি ও মূর্তি পুরা মূর্তির শামিল, যা সর্বদা নিষিদ্ধ।[117]

কবরে প্রচলিত শিরক সমূহ (الشركيات المروجة على القبور) (১) কবরে সিজদা করা (২) সেদিকে ফিরে স্বলাত আদায় করা (৩) সেখানে বসা ও আল্লাহর কাছে সুফারিশের জন্য তার নিকট প্রার্থনা করা (৪) সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা (৫) কবরবাসীর নিকটে কিছু কামনা করা (৬) তার অসীলায় মুক্তি প্রার্থনা করা (৭) তাকে খুশী করার জন্য কবরে নযর-নেয়ায ও টাকা-পয়সা দেওয়া (৮) সেখানে মানত করা (৯) ছাগল-মোরগ ইত্যাদি হাজত দেওয়া (১০) সেখানে বার্ষিক ওরস ইত্যাদি করা (১১) মাযারে নযর-নেয়ায না দিলে মৃত পীরের বদ দো‘আয় ধ্বংস হয়ে যাবে, এই ধারণা পোষণ করা (১২) সেখানে নযর-মানত করলে পরীক্ষায় বা মামলায় বা কোন বিপদে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করা (১৩) খুশীর কোন কাজে মৃত পীরের মাযারে শুকরিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা না দিলে পীরের বদ দো‘আ লাগবে, এমন ধারণা করা (১৪) নদী ও সাগরের মালিকানা খিযির (আঃ)-এর মনে করে তাকে খুশী করার জন্য সাগরে বা নদীতে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা নিক্ষেপ করা (১৫) মৃত পীরের পোষা কুমীর, কচ্ছপ, গজাল মাছ, কবুতর ইত্যাদিকে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও ক্ষমতাশালী মনে করা (১৬) এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত পীর কবরে জীবিত আছেন ও ভক্তদের ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন (১৭) তিনি ভক্তের ডাক শোনেন এবং তার জন্য আল্লাহর নিকট সুফারিশ করেন (১৮) বিপদে কবরস্থ পীরকে ডাকা ও তার কবরে গিয়ে কান্নাকাটি করা (১৯) খুশীতে ও নাখুশীতে পীরের কবরে পয়সা দেওয়া (২০) কবরস্থ ব্যক্তি খুশী হবেন ভেবে তার কবরে সৌধ নির্মাণ করা, তার সৌন্দর্য বর্ধন করা ও সেখানে সর্বদা আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করা (২১) কবর আযাব মাফ হবে মনে করে পীরের কবরের কাছাকাছি কবরস্থ হওয়া (২২) কবরস্থানের পাশ দিয়ে কোন মুত্তাক্বী আলেম হেঁটে গেলে ঐ কবরবাসীদের চল্লিশ দিনের গোর আযাব মাফ হয় বলে বিশ্বাস রাখা (২৩) কবরে বা ছবি ও প্রতিকৃতিতে বা স্মৃতিসৌধে বা বিশেষ কোন স্থানে ফুলের মালা দিয়ে বা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে বা স্যালুট জানিয়ে মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা অথবা একই উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে মীলাদ ও কুরআনখানী করা ইত্যাদি।

জানা আবশ্যক যে, মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য শয়তান সর্বদা পিছনে লেগে থাকে। এজন্য সে অনেক সময় নিজেই মানুষের রূপ ধারণ করে অথবা অন্য মানুষের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য হাছিল করে। যেমন হঠাৎ করে শুনা যায় অমুক স্থানে স্বপ্নে পাওয়া শিকড়ে বা তাবীযে মানুষের সব রোগ ভাল হয়ে যাচ্ছে। অমুক দুধের বাচ্চা কিংবা পুরুষ বা মহিলার ফুঁক দানের মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যাধি ভাল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে চোখের সামনে চিকিৎসা শেষে তখনই সুস্থ হয়ে রোগী বাড়ী ফিরছে। অতঃপর দু’পাঁচ মাস দৈনিক লাখো মানুষের ভিড় জমিয়ে মানুষের ঈমান হরণ করে কথিত ঐ অলৌকিক চিকিৎসক হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এগুলি সবই শয়তানী কারসাজি। সাময়িকভাবে এরূপ করার ক্ষমতা আল্লাহ ইবলীসকে দিয়েছেন।[118] তবে জীবিত শয়তানের ধোঁকার জাল ছিন্ন হ’লেও মৃত পীর পূজার শয়তানী ধোঁকার জাল বিস্তৃত থাকে যুগের পর যুগ ধরে। যেখান থেকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই কেবল কদাচিৎ বেরিয়ে আসতে পারেন।

আল্লাহ বলেন, يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُوْرًا ‘শয়তান তাদের মিথ্যা ওয়াদা দেয় ও আশার বাণী শুনায়। অথচ শয়তান তাদেরকে প্রতারণা ব্যতীত কোনই প্রতিশ্রুতি দেয় না’ (নিসা ৪/১২০)। কিন্তু শত প্রতারণার জাল বিছিয়েও শয়তান আল্লাহর কোন মুখলেছ বান্দাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না (হিজর ১৫/৪০)।

পৃথিবীর প্রাচীনতম শিরক হ’ল মৃত মানুষের পূজা। যা নূহ (আঃ)-এর যুগে শুরু হয়। অথচ তাওয়াহ্‌য়ীদের মূল শিক্ষা ছিল মানুষকে মানুষের পূজা হ’তে মুক্ত করে সরাসরি আল্লাহর দাসত্বের অধীনে স্বাধীন মানুষে পরিণত করা। কিন্তু মৃত সৎ লোকের অসীলায় আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা ও পরকালে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার ভিত্তিহীন ধারণার উপর ভর করে শয়তানের কুমন্ত্রণায় নূহ (আঃ)-এর সমাজে প্রথম শিরকের সূচনা হয়। যা মুর্তিপূজা, কবরপূজা, স্থানপূজা, ছবি ও প্রতিকৃতি পূজা ইত্যাদি আকারে যুগে যুগে মানব সমাজে চালু রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, إِنْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِنْ يَدْعُوْنَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَرِيْدًا ‘আল্লাহকে ছেড়ে এরা নারীদের আহবান করে। বরং এরা বিদ্রোহী শয়তানকে আহবান করে’ (নিসা ৪/১১৭)। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, مَعَ كُلِّ صَنَمٍ جِنِّيَّةٌ ‘প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে’।[119] মক্কা বিজয়ের পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশে খালেদ ইবনু ওয়ালীদ বিখ্যাত ‘উয্যা’ মূর্তি ধ্বংস করার সময় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা ঘোর কৃষ্ণবর্ণ বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট একটা নগ্ন নারী জিনকে দ্বিখন্ডিত করেন। [120] এরা অলক্ষ্যে থেকে মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে এবং তাদেরকে মূর্তিপূজা, কবরপূজা, স্থানপূজা ও সৃষ্টি পূজার প্রতি প্রলুব্ধ করে। অথচ এই শিরক থেকে তওবা না করার কারণেই নূহ (আঃ)-এর কওমকে আল্লাহ সমূলে ধ্বংস করেছিলেন। এ যুগেও যদি আমরা এই মহাপাপ থেকে তওবা না করি, তাহ’লে আমরাও আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহ বলেন,

أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنَ الْقُرُوْنِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لاَ يَرْجِعُوْنَ- وَإِنْ كُلٌّ لَّمَّا جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ- (يـس 31-32)-

‘তারা কি দেখে না যে, তাদের পূর্বের কত সম্প্রদায়কে আমরা ধ্বংস করেছি, যারা তাদের নিকটে আর ফিরে আসবে না’। ‘আর অবশ্যই তাদের সকলকে আমাদের নিকট উপস্থিত করা হবে’ (ইয়াসীন ৩৬/৩১-৩২)। অন্যত্র তিনি বলেন,

إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ- (المائدة 72)-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করল, আল্লাহ তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর সেখানে মুশরিকদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না’ (মায়েদাহ ৫/৭২)। তিনি আরও বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ- (النساء 48، 116) – ‘আল্লাহ কখনোই শিরকের গোনাহ মাফ করেন না। এতদ্ব্যতীত বান্দার যেকোন গোনাহ তিনি মাফ করে থাকেন, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)।

মৃত্যুর পরে প্রচলিত বিদ‘আত সমূহ (البدع المروجة بعد الموت) (১) মৃত্যুর আগে বা পরে মাইয়েতকে ক্বিবলার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া (২) মাইয়েতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন বা কুরআন তেলাওয়াত করা (তালখীছ ৯৬, ৯৭)। ( ৩) মাইয়েতের নখ কাটা ও গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ করা (৯৭) (৪) কাঠি দিয়ে (বা নির্দিষ্ট সংখ্যক নিম কাঠি দিয়ে) দাঁত খিলাল করানো (৫) নাক-কান-গুপ্তাঙ্গ প্রভৃতি স্থানে তুলা ভরা (৯৭) (৬) দাফন না করা পর্যন্ত পরিবারের লোকদের না খেয়ে থাকা (৯৭) ৭) বাড়ীতে বা কবরস্থানে এই সময় ছাদাক্বা বিলি করা (৯৯, ১০৩) (৮) চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, কাপড় ছেঁড়া, মাথা ন্যাড়া করা, দাড়ি-গোঁফ না মুন্ডানো ইত্যাদি (১৮, ৯৭) (৯) তিন দিনের অধিক (সপ্তাহ, মাস, ছয় মাস ব্যাপী) শোক পালন করা (১৫, ৭৩) কেবল স্ত্রী ব্যতীত। কেননা তিনি ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবেন (১০) কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের জন্য দো‘আ করা (৪৮) (১১) শোক দিবস (শোকের মাস ইত্যাদি) পালন করা, শোকসভা করা ও এজন্য খানাপিনার বা (কাঙ্গালী ভোজের) আয়োজন করা ইত্যাদি (৭৩-৭৪) (১২) মসজিদের মিনারে বা বাজারে মাইকে অলি-গলিতে ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা (১৯, ৯৮) (১৩) কবরের উপরে খাদ্য ও পানীয় রেখে দেওয়া। যাতে লোকেরা তা নিয়ে যায় (১০৩) (১৪) মৃতের কক্ষে তিন রাত, সাত রাত (বা ৪০ রাত) ব্যাপী আলো জ্বেলে রাখা (৯৮) (১৫) কাফনের কাপড়ের উপরে কুরআনের আয়াত ও দো‘আ-কালেমা ইত্যাদি লেখা (৯৯) (১৬) এই ধারণা করা যে, মাইয়েত জান্নাতী হ’লে ওযনে হালকা হয় ও দ্রুত কবরের দিকে যেতে চায় (৯৯) (১৭) মাইয়েতকে দূরবর্তী নেককার লোকদের গোরস্থানে নিয়ে দাফন করা (৯৯) (১৮) জানাযার পিছে পিছে উচ্চৈঃস্বরে যিকর ও তেলাওয়াত করতে থাকা (১০০) (১৯) জানাযা শুরুর প্রাক্কালে মাইয়েত কেমন ছিলেন বলে লোকদের কাছ থেকে সমস্বরে সাক্ষ্য নেওয়া (১০১) (২০) জানাযার স্বলাতের আগে বা দাফনের পরে তার শোকগাথা বর্ণনা করা (১০০) (২১) জুতা পাক থাকা সত্ত্বেও জানাযার স্বলাতে জুতা খুলে দাঁড়ানো (১০১)। (২২) কবরে মাইয়েতের উপরে গোলাপ পানি ছিটানো (১০২) (২৩) কবরের উপরে মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ও পায়ের দিক থেকে মাথার দিকে পানি ছিটানো। অতঃপর অবশিষ্ট পানিটুকু কবরের মাঝখানে ঢালা (১০৩) (২৪) তিন মুঠি মাটি দেওয়ার সময় প্রথম মুঠিতে ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম’ দ্বিতীয় মুঠিতে ‘ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম’ এবং তৃতীয় মুঠিতে ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ বলা (ত্বোয়াহা ৫৫; ১০২) (২৫) অথবা ‘আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বান’…. পাঠ করা (ইবনু মাজাহ হা/১৫৫৩, ‘যঈফ’)। (২৬) কবরে মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে ফাতিহা ও পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাক্বারাহর শুরুর অংশ পড়া (১০২) (২৭) সূরায়ে ফাতিহা, ক্বদর, কাফেরূণ, নছর, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই সাতটি সূরা পাঠ করে দাফনের সময় বিশেষ দো‘আ পড়া (১০২) (২৮) কবরের কাছে বসে কুরআন তেলাওয়াত ও খতম করা (১০৪)(২৯) কবরের উপরে শামিয়ানা টাঙ্গানো (১০৪) (৩০) নির্দিষ্ট ভাবে প্রতি জুম‘আয় কিংবা সোম ও বৃহস্পতিবারে পিতা-মাতার কবর যেয়ারত করা (১০৫) (৩১) এতদ্ব্যতীত আশূরা, শবে মে‘রাজ, শবেবরাত, রামাযান ও দুই ঈদে বিশেষভাবে কবর যেয়ারত করা (৩২) কবরের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ানো ও সূরায়ে ফাতিহা ১ বার, ইখলাছ ১১ বার কিংবা সূরা ইয়াসীন ১ বার পড়া (১০৫)। (৩৩) কুরআন পাঠকারীকে উত্তম খানা-পিনা ও টাকা-পয়সা দেওয়া বা এ বিষয়ে অছিয়ত করে যাওয়া (১০৪, ১০৬) (৩৪) কবরকে সুন্দর করা (১০৭)। (৩৫) কবরে রুমাল, কাপড় ইত্যাদি বরকত মনে করে নিক্ষেপ করা (১০৮) । (৩৬) কবরে চুম্বন করা (১০৮)। (৩৭) কবরের গায়ে মৃতের নাম ও মৃত্যুর তারিখ লেখা (১০৯)। (৩৮) কবরের গায়ে বরকত মনে করে হাত লাগানো এবং পেট ও পিঠ ঠেকানো (১০৮)। (৩৯) ত্রিশ পারা কুরআন (বা সূরা ইয়াসীন) পড়ে এর ছওয়াব সমূহ মৃতের নামে বখশে দেয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘কুরআনখানী’ বলে। (৪০) কাফেরূণ, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই চারটি ‘কুল’ সূরার প্রতিটি ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কুলখানী’ বলে। (৪১) কালেমা ত্বাইয়িবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কালেমাখানী’ বলে। (৪২) ১ম, ৩য়, ৭ম (বা ১০ম দিনে) বা ৪০ দিনে চেহলাম বা চল্লিশার অনুষ্ঠান করা (৪৩) ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা (১০৩) (৪৪) যারা কবর খনন করে ও দাফনের কাজে সাহায্য করে, তাদেরকে মৃতের বাড়ী দাওয়াত দিয়ে বিশেষ খানার ব্যবস্থা করা। যাকে এদেশে ‘হাত ধোয়া খানা’ বলা হয় (৪৫) আযান শুনে নেকী পাবে বা গোর আযাব মাফ হবে ভেবে মসজিদের পাশে কবর দেওয়া (৪৬) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ফাতিহা’ পাঠ করা (২০) (৪৭) কাফন-দাফনের কাজকে নেকীর কাজ না ভেবে পয়সার বিনিময়ে কাজ করা (৪৮) মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে আলো জ্বেলে ও মাইক লাগিয়ে রাত্রি ব্যাপী উচ্চৈঃস্বরে কুরআন খতম করা (৪৯) মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা (১০৪, ১০৬) (৫০) স্বলাত, ক্বিরাআত ও অন্যান্য দৈহিক ইবাদত সমূহের নেকী মৃতদের জন্য হাদিয়া দেওয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘ছওয়াব রেসানী’ বলা হয় (৫১) আ‘মাল সমূহের ছওয়াব রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে (বা অন্যান্য নেককার মৃত ব্যক্তিদের নামে) বখশে দেওয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘ঈছালে ছওয়াব’ বলা হয় (৫২) নেককার লোকদের কবরে গিয়ে দো‘আ করলে তা কবুল হয়, এই ধারণা করা (১০৮)।

(৫৩) মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় বলে ধারণা করা (৫৪) জানাযার সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহরানা মাফ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা (৫৫) ঐ সময় মৃতের ক্বাযা স্বলাত সমূহের বা উমরী ক্বাযার কাফফারা স্বরূপ টাকা আদায় করা (৫৬) মৃত্যুর পরপরই ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে চাউল ও টাকা-পয়সা বিতরণ করা (৫৭) দাফনের পরে কবরস্থানে মহিষ বা গবাদি-পশু যবহ করে গরীবদের মধ্যে গোশত বিতরণ করা (৫৮) লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনবার নামানো (৫৯) কবরে মাথার কাছে ‘মক্কার মাটি’ নামক আরবীতে ‘আল্লাহ’ লেখা মাটির ঢেলা রাখা (৬০) মাইয়েতের মুখে ও কপালে আতর দিয়ে ‘আল্লাহ’ লেখা (৬১) কবরে মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি দেওয়া (৬২) পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাতের সময় বদনায় পানি দিয়ে যাওয়া এই নিয়তে যে, মৃতের রূহ এসে ওযূ করে স্বলাত আদায় করে যাবে (৬৩) মৃতের ঘরে ৪০ দিন যাবৎ বিশেষ লৌহজাত দ্রব্য রাখা (৬৪) মৃত্যুর ২০দিন পর রুটি বিলি করা ও ৪০ দিন পর বড় ধরনের ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা (৬৫) মৃতের বিছানা ও খাট ইত্যাদি ৭দিন পর্যন্ত একইভাবে রাখা (৬৬) মৃতের পরকালীন মুক্তির জন্য তার বাড়ীতে মীলাদ বা ওয়ায মাহফিল করা (৬৭) নববর্ষ, শবেবরাত ইত্যাদিতে কোন বুযর্গ ব্যক্তিকে ডেকে মৃতের কবর যিয়ারত করিয়ে নেওয়া ও তাকে বিশেষ সম্মানী প্রদান করা (৬৮) শবেবরাতে ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মৃত স্বামীর রূহের আগমন অপেক্ষায় তার পরিত্যক্ত কক্ষে বা অন্যত্রে সারা রাত জেগে বসে থাকা ও ইবাদত-বন্দেগী করা (৬৯) ঈছালে ছওয়াবের অনুষ্ঠান করা (৭০) নিজের কোন একটি বা একাধিক সমস্যা সমাধানের নিয়তে কবরের গায়ে বা পাশের কোন গাছের ডালে বিশেষ ধরনের সুতা বা ইটখন্ড ঝুলিয়ে রাখা। (৭১) মাযার থেকে ফিরে আসার সময় কবরের দিকে মুখ করে বেরিয়ে আসা (৭২) মৃত্যুর আগেই কবর তৈরী করা (১০৪) (৭৩) কবরে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্ত্ত সমূহ রাখা এই ধারণায় যে, সেগুলি তার কাজে আসবে (৭৪) কবরে কা‘বা গৃহের কিংবা কোন পীরের কবরের গেলাফের অংশ কিংবা তাবীয লিখে দাফন করা এই ধারণায় যে, এগুলি তাকে কবর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবে (৭৫) কবরে ‘ওরস’ উপলক্ষে বা অন্য সময়ে রান্না করা খিচুড়ী বা তৈরী করা রুটি বা মিষ্টি ‘তাবাররুক’ নাম দিয়ে বরকতের খাদ্য মনে করে ভক্ষণ করা (৭৬) আজমীরে খাজাবাবার কবরে টাকা পাঠানো বা অন্য কোন পীর বাবার কবরে গরু-ছাগল, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য হাদিয়া পাঠানো (৭৭) কবরের মধ্যবর্তী স্থানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে মৃতের জন্য দো‘আ পড়া (৭৮) কবরের উপরে একটি বা চার কোণে চারটি কাঁচা খেজুরের ডাল পোতা বা কোন গাছ লাগানো এই ধারণা করে যে, এর প্রভাবে কবর আযাব হালকা হবে।

(৭৯) খাটিয়া ও মাইয়েত ঢাকার কাপড় খুব সুন্দর করা (৯৯) (৮০) কালেমা ও পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখিত কালো কাপড় দিয়ে খাটিয়া ঢাকা। (৮১) মৃতের প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় পৃথক পৃথক দো‘আ পড়া (৯৮) (৮২) জানাযা বহনের সাথে সাথে ছাদাক্বা বিতরণ করা এবং লোকদের কোল্ড ড্রিংকস পান করানো (৯৯) (৮৩) লাশের নিকট ভিড় করা (৯৯) (৮৪) মৃতের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বা অন্য কোন উপলক্ষে দিনভর উচ্চৈঃস্বরে তার বক্তৃতা বা কুরআনের ক্যাসেট বাজানো (৮৫) বিশেষ কোন নেককার ব্যক্তির কবর থাকার কারণে জনপদের লোকেরা রূযিপ্রাপ্ত হয় ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয় বলে ধারণা পোষণ করা (১০৬)।

(৮৬) জানাযা শুরুর পূর্বে ইমামের পক্ষ থেকে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে উচ্চৈঃস্বরে ‘নিয়ত’ বলে দেওয়া (৮৭) ইমাম ও মুক্তাদীর ‘ছানা’ পড়া (১০১)। (৮৮) সূরা ফাতিহা ও একটি সূরা ছাড়াই জানাযার স্বলাত আদায় করা (১০১)। (৮৯) জানাযা শেষ হবার পরেই সেখানে দাঁড়িয়ে অথবা দাফন শেষে একজনের নেতৃত্বে সকলে দু’হাত তুলে দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা। (৯০) জানাযার সময়ে সকলকে মৃতের বাড়ীতে কুলখানির অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া।

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলি ছাড়াও মৃত ব্যক্তি ও কবরকে কেন্দ্র করে হাযারো রকমের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ উপমহাদেশে মুসলিম সমাজে চালু আছে। অতএব প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হবে এসকল শিরক ও বিদ‘আতী কর্মকান্ড হ’তে দূরে থাকা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।- আমীন!!

জানা আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’টি কবরের উপরে যে খেজুরের দু’টি কাঁচা চেরা ডাল পুঁতেছিলেন, সেটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাঁর বা কোন ছাহাবীর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এমন কোন আ‘মাল করার নযীর নেই বুরাইদা আসলামী (রাঃ) ব্যতীত। কেননা তিনি এটার জন্য অছিয়ত করেছিলেন (বুখারী)। অতএব এটা স্পষ্ট যে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নেক আমলের কারণেই কবর আযাব মাফ হ’তে পারে। ফুল দেওয়া বা কাঁচা ডাল পোতার কারণে নয়। কেননা এসবের কোন প্রভাব মাইয়েতের উপর পড়ে না। যেমন আব্দুর রহমান (রাঃ)-এর কবরের উপর তাঁবু খাটানো দেখে ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওটাকে হটিয়ে ফেল হে বৎস! কেননা ওটা তার আমলের উপরে ছায়া করছে বা বাধা সৃষ্টি করছে।[121]

কবরে আলোকসজ্জা করা : কবরে বাতি দেওয়া নিষেধের হাদীছটি যঈফ।[122] তবে এটি কয়েকটি কারণে নিকৃষ্টতম বিদ‘আত। (১) এটি নবাবিষ্কৃত বিষয়, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল না (২) এটি অগ্নি উপাসক মজূসীদের অনুকরণ (৩)এতে স্রেফ মালের অপচয় হয়, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ (৪) একে আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের মাধ্যম বলে ধারণা করা হয়।[123] যা ভিত্তিহীন ও ইসলাম বিরোধী আক্বীদা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ ‘প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’। [124] আল্লাহ বলেন,

قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِيْنَ أَعْمَالاً، اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا-

‘আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে খবর দিব? দুনিয়ার জীবনে যাদের সমস্ত আ‘মাল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আ‘মাল করে যাচ্ছে’ (কাহ্ফ ১৮/১০৩-৪)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ، متفق عليه- ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[125] ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, إِنَّ كُلَّ مَا لَمْ يَكُنْ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ دِيْنًا لَمْ يَكُنِ الْيَوْمَ دِيْنًا- ‘নিশ্চয়ই যে সকল বস্ত্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর ছাহাবীগণের সময়ে দ্বীন হিসাবে গণ্য ছিল না, এ যুগে তা দ্বীন হিসাবে গণ্য হবে না’।[126]

জানাযা বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্য সমূহ (معلومات أخرى فى الجنازة)

(১) কবর ও লাশ বিষয়ে (فى القبر والميت) : (ক) সাগরবক্ষে মৃত্যুবরণ করলে এবং স্থলভাগ না পাওয়া গেলে গোসল, কাফন ও জানাযা শেষে কবরে শোয়ানোর দো‘আ পড়ে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দিবে। [127]

(খ) কবরে যতদিন মুমিনের লাশের কোন অংশ বাকী থাকবে, ততদিন তাকে সম্মান করতে হবে। সেখানে পুনরায় কবর দেওয়া যাবে না। যদি লাশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ও মাটি হয়ে যায়, তাহ’লে সেখানে পুনরায় দাফন করা যাবে ও সাধারণ মাটির ন্যায় সেখানে সবকিছু করা যাবে। কিন্তু তাই বলে কোন সাধারণ অজুহাতে কবরের সম্মান হানিকর কোন কিছু নির্মাণ করা যাবে না।[128]

(গ) কবর খুঁড়তে গিয়ে যদি প্রথম দিকেই মৃত ব্যক্তির হাড় পাওয়া যায়, তাহ’লে কবর খনন বন্ধ করবে। কিন্তু যদি খনন শেষে পাওয়া যায়, তবে হাড়টিকে কবরের একপাশে রেখেই সেখানে নতুন লাশের কবর দিবে। কেননা এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করা জায়েয আছে।[129]

(ঘ) যদি বিনা জানাযায় কারু দাফন হয়ে যায় অথবা জানাযা করে দাফন হ’লেও যদি কেউ পরে জানাযা পড়তে চান, তাহ’লে কবরকে সামনে করে জানাযার স্বলাত আদায় করা যাবে। [130] (ঙ) যদি কোন গর্ভবতী মহিলা মারা যান এবং তার পেটে জীবিত বাচ্চা আছে বলে অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিশ্চিত হন, তাহ’লে পেট কেটে বাচ্চা বের করে আনা জায়েয আছে।[131] (চ) শারঈ ওযর বশতঃ যরূরী কারণে কবর পুনঃখনন, লাশ উত্তোলন ও স্থানান্তর করা জায়েয আছে।[132]

(২) মৃতের ক্বাযা স্বলাত ও ছিয়াম (قضاء الصلاة والصيام عن الميت) : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একজনের ছিয়াম ও স্বলাত অন্যজনে করতে পারেনা।[133] কারণ এগুলি দৈহিক ইবাদত, যা নিজেকেই করতে হয়। এগুলি জীবদ্দশায় যেমন অন্যের দ্বারা সম্ভব নয়, মৃতের পরেও তেমনি সম্ভব নয় এবং এগুলির ছওয়াবও অন্যকে দেওয়া যায় না কেবলমাত্র দো‘আ, ছাদাক্বা ও হজ্জ ব্যতীত।[134]

আল্লাহ বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلاَّ مَا سَعَى ‘মানুষ সেটাই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে’ (নাজম ৫৩/৩৯)। অবশ্য মানতের ছিয়াম থাকলে উত্তরাধিকারীগণ তা রাখতে পারেন।[135] অথবা প্রতি ছিয়ামের বদলে একজন মিসকীন খাওয়াবেন কিংবা এক মুদ (৬২৫ গ্রাম) গম (বা চাউল) মিসকীনকে দিবেন,[136] যদি তা মাইয়েতের রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশে সংকুলান হয়। নইলে তা পূরণ করা ওয়ারিছের জন্য ওয়াজিব নয়।[137] জানাযাকালে মৃতের ক্বাযা স্বলাতের কাফফারা স্বরূপ টাকা-পয়সা দান করা সম্পূর্ণরূপে একটি বিদ‘আতী প্রথা মাত্র।

(৩) গর্ভচ্যুত শিশুর জানাযা (الصلاة علي السقط) : (ক) বাচ্চা যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে ক্রন্দন করে বা হাঁচি দেয় বা এমন আচরণ করে যাতে তার জীবন ছিল বলে বুঝা যায়, অতঃপর মারা যায়। তবে তার জানাযা পড়তে হবে। ‘এসময় তার মুসলিম বাপ-মায়ের প্রতি ক্ষমা ও অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে হবে’।[138] অর্থাৎ সূরা ফাতিহা, দরূদ ও জানাযার ১ম দো‘আটি পাঠের পর শিশুর জন্য বর্ণিত ৫ম দো‘আটি পাঠ শেষে বলবে, ‘আল্লা-হুম্মাগফির লি আবাওয়াইহে ওয়ারহামহুম’ (হে আল্লাহ! তুমি তার পিতামাতাকে ক্ষমা কর এবং তাদের উপর রহম কর)।

(খ) যদি বাচ্চা চার মাসের আগেই গর্ভচ্যুত হয়, তাহ’লে তাকে গোসল বা জানাযা কিছুই করতে হবে না। বরং কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করবে। (গ) চার মাসের পরের কোন সন্তান যদি মৃত ভূমিষ্ঠ হয়, তবে তারও জানাযা করার প্রয়োজন নেই। কেননা হাদীছে বাচ্চার ‘চীৎকার করার’ কথা এসেছে।[139] গর্ভচ্যুত সন্তানের জানাযা করতে হবে মর্মের ‘আম ছহীহ হাদীছের [140] ভিত্তিতে একদল বিদ্বান গর্ভচ্যুত মৃত সন্তানের জানাযা করার জন্য বলেন। জবাবে শাওকানী বলেন, মায়ের গর্ভে চার মাস অতিক্রম করাটাই শিশুর জীবনের প্রমাণ নয়, বরং ভূমিষ্ট হওয়ার পর কান্নাটাই তার জীবনের প্রমাণ হিসাবে গণ্য হবে। ইমাম মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও জমহূর বিদ্বানগণ সেকথা বলেন।[141]

(৪) মৃতের প্রতি আদব (احترام الميت) : (ক) মৃতের প্রতি সাধ্যমত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। হাদীছে মৃতের হাড্ডি ভাঙ্গাকে জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সাথে তুলনা করা হয়েছে।[142] অন্য হাদীছে মৃতের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। [143] অতএব যরূরী রাষ্ট্রীয় নির্দেশ ব্যতীত মৃতদেহ কাটাছেঁড়া বা পোষ্ট মর্টেম করা গুরুতর অন্যায়। আজকাল পোষ্ট মর্টেম-এর বিষয়টি অনেকটা সস্তা হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও লাশের প্রতি সেখানে অসম্মান করা হয় বলে শোনা যায়। যা থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবশ্যই বিরত থাকা কর্তব্য।

(খ) মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, لاَ تَسُبُّوا الْأَمْوَاتَ فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قَدَّمُوْا ‘তোমরা মৃতদের গালি দিয়ো না। কেননা তারা তাদের অগ্রিম পেশকৃত অর্জনের প্রতি ধাবিত হয়েছে’।[144] তবে ঐ ব্যক্তি যদি ফাসিক ও বিদ‘আতী হয়, তবে তা থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে। নতুবা বিরত থাকতে হবে।[145] কেননা সুন্দর মুসলিমের পরিচয় হ’ল অনর্থক বিষয় সমূহ হ’তে বিরত থাকা।[146] তাছাড়া ‘সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলী থেকে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার’ জন্য হাদীছে নির্দেশ এসেছে। [147]

(৫) প্রতিবেশীদের কর্তব্য (لزوميات الجيران) : মৃত্যুর পরে মৃতের প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয়দের কর্তব্য হ’ল, মৃতের পরিবারের লোকদেরকে (কমপক্ষে) একটি দিন ও রাত পেট ভরে খাওয়ানো। জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব (রাঃ) শহীদ হ’লে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার প্রতিবেশীদেরকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতদ্ব্যতীত বন্ধু-বান্ধব ও সকল হিতাকাংখীর কর্তব্য হ’ল মৃতের উত্তরাধিকারীদের সান্ত্বনা প্রদান করা ও তার বাচ্চাদের মাথায় সহানুভূতির হাত বুলানো।[148] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে তিন দিনের বেশী কান্নাকাটি করতে নিষেধ করেন।[149] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃতের বাড়ীতে গিয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দিতেন। নিজের সন্তানহারা কন্যা যয়নব (রাঃ)-কে দেওয়া সর্বোত্তম সান্ত্বনা বাক্য হিসাবে বর্ণিত হাদীছটি নিম্নরূপ :

إِنَّ ِللهِ مَا أَخَذَ وَ ِللهِ مَا أَعْطَى وَكُلُّ شَيْئٍِ عِنْدَهُ إِلَى أجَلٍ مُّسَمَّى فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ

উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি মা আখাযা ওয়া লিল্লা-হি মা আ‘ত্বা; ওয়া কুল্লু শাইয়িন ইনদাহূ ইলা আজালিম মুসাম্মা; ফালতাছবির ওয়াল তাহতাসিব ।

অনুবাদ : ‘নিশ্চয়ই সেটা আল্লাহর জন্য, যেটা তিনি নিয়েছেন এবং সেটাও আল্লাহর জন্য যেটা তিনি দিয়েছেন। প্রত্যেক বস্ত্ত তাঁর নিকটে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য। অতএব তুমি ছবর কর ও ছওয়াবের আকাংখা কর’।[150] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এটিই সর্বোত্তম হাদীছ।[151]

ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোন মুমিন ভাইয়ের বিপদে সান্ত্বনা প্রদান করল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন সবুজ রেশমের ঈর্ষণীয় জোড়া পরিধান করাবেন’।[152]

(৬) মৃতের জন্য করণীয় (الأعمال الحسنة للميت) : ১. আল্লাহ বলেন, إِنَّا نَحْنُ نُحْيِ الْمَوْتَى وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ ‘আমরা মৃতকে জীবিত করি এবং লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে ও যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমরা প্রত্যেক বস্ত্ত স্পষ্ট কিতাবে (অর্থাৎ স্ব স্ব আমলনামায়) সংরক্ষিত রাখি’।[153]

২. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ، رواه مسلم-

‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আ‘মাল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কেবল তিনটি আ‘মাল ব্যতীত : (ক) ছাদাক্বায়ে জারিয়া (খ) এমন ইল্ম যা থেকে কল্যাণ লাভ হয় এবং (গ) নেককার সন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে’।[154]

৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘বান্দা বলে আমার মাল, আমার মাল। অথচ তার মাল তিনটি: (ক) যেটা সে খায় অতঃপর শেষ হয়ে যায় (খ) যেটা সে পরিধান করে অতঃপর তা জীর্ণ হয়ে যায় (গ) যেটা সে ছাদাক্বা দেয় বা দান করে সেটা তার জন্য সঞ্চিত থাকে। বাকী সবকিছু চলে যায় এবং লোকদের জন্য সে ছেড়ে যায়’। [155]

৪. তিনি আরও বলেন, ‘মাইয়েতের সঙ্গে তিনজন যায়। দু’জন ফিরে আসে ও একজন থেকে যায়। তার পরিবার ও মাল ফিরে আসে। কেবল ‘আমল’ তার সাথে থেকে যায়’। [156]

৫. তিনি আরও বলেন, ‘আখেরাতের সুখ-সম্পদের তুলনায় দুনিয়া একটি মরা ছাগলের বাচ্চার চাইতেও তুচ্ছ’।[157]

৬. আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنَ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنَ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন সুখ সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শোনেনি, কোন হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি’। [158]

৭. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘জান্নাতের একটি চাবুক রাখার মত ক্ষুদ্রতম স্থান, সমস্ত পৃথিবী ও তার মধ্যকার সম্পদরাজি অপেক্ষা উত্তম’। [159]

তিনটি ছাদাক্বা (ثلاث صدقات) :

(১) ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ : ছাদাক্বার মধ্যে ঐ ছাদাক্বা উত্তম, যা ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ বা চলমান উপঢৌকন। যা সর্বদা জারি থাকে ও স্থায়ী নেকী দান করে। যেমন মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ ও পরিচালনা, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ, অনাবাদী জমিকে আবাদ করণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করণ, দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা ইত্যাদি।

(২) ইল্ম : ঐ ইল্ম উত্তম যা মানুষকে নির্ভেজাল তাওয়াহ্‌য়ীদ ও ছহীহ সুন্নাহর কল্যাণ পথ দেখায় এবং যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আত হ’তে বিরত রাখে। উক্ত উদ্দেশ্যে উচ্চতর ইসলামী গবেষণা খাতে সহযোগিতা প্রদান, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পরিচালনা। বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আ‘মাল সম্পন্ন বই ছাপানো ও বিতরণ করা এবং এজন্য অন্যান্য স্থায়ী প্রচার মাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।

(৩) নেককার সন্তান : সন্তান পিতা-মাতার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।[160] নেককার সন্তানের সকল নেক আমলের ছওয়াব তার পিতা-মাতা পাবেন, যদি তারা কাফের-মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ না করে থাকেন। মৃতের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হ’ল তার ইস্তেগফারের জন্য দো‘আ করা, তার জন্য ছাদাক্বা করা ও তার পক্ষ হ’তে হজ্জ করা।[161]… তবে এজন্য উত্তরাধিকারীকে প্রথমে নিজের ফরয হজ্জ আদায় করতে হবে। [162]

জানা আবশ্যক যে, ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ দু’ভাবে হতে পারে। এক- মৃত ব্যক্তি স্বীয় জীবদ্দশায় এটা করে যাবেন। এটি নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম। কারণ মানুষ সেটাই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে (নাজম ৫৩/৩৯)। দুই- মৃত্যুর পরে তার জন্য তার উত্তরাধিকারীগণ বা অন্যেরা যেটা করেন। সাইয়িদ রশীদ রিযা বলেন, দো‘আ, ছাদাক্বা (ও হজ্জ)-এর নেকী মৃত ব্যক্তি পাবে, এ বিষয়ে বিদ্বানগণ সকলে একমত। কেননা উক্ত বিষয়ে শরী‘আতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। [163]

আরেকটি বিষয় মনে রাখা আবশ্যক যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ছাদাক্বায়ে জারিয়াহর ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকে। অতএব যেখানে বা যাকে এটা দেওয়া হবে, তার গুরুত্ব ও স্থায়ী কল্যাণ বুঝে এটা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে সদা সতর্ক থাকতে হবে, যেন উক্ত ছাদাক্বা ধর্মের নামে কোন শিরক ও বিদ‘আতের পুষ্টি সাধনে ব্যয়িত না হয়। যা স্থায়ী নেকীর বদলে স্থায়ী গোনাহের কারণ হবে। ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে তার আয় ও ব্যয় দু’টিরই হিসাব দিতে হবে। [164] অতএব হে ছাদাক্বা দানকারী! সাবধান হৌন!!

(৭) গায়েবানা জানাযা (الصلاة على الغائب) : গায়েবানা জানাযা জায়েয আছে।[165] তবে সকলের জন্য ঢালাওভাবে এটা জায়েয নয় বলে ইমাম খাত্ত্বাবী, ইবনু আব্দিল বার্র, হাফেয যায়লাঈ, ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, শায়খ আলবানী প্রমুখ বিদ্বানগণ মত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য সমূহ সংক্ষেপে নিম্নরূপ :

গায়েবানা জানাযার জন্য হাবশার (আবিসিনিয়া) বাদশাহ আছহামা নাজ্জাশীর গায়েবানা জানাযা আদায়ের ঘটনাই হ’ল একমাত্র বিশুদ্ধ দলীল, যিনি ৯ম হিজরী সনে মারা যান। নাজ্জাশী খৃষ্টানদের বাদশাহ ছিলেন। কিন্তু নিজে মুসলিম ছিলেন। সেকারণ তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে গায়েবানা জানাযা আদায় করেন এবং বলেন, صَلُّوْا عَلَى أَخٍ لَّكُمْ مَاتَ بِغَيْرِ أَرْضِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা পড়। যিনি তোমাদের দেশ ব্যতীত অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন’।[166] ইমাম আবুদাঊদ নাজ্জাশী বিষয়ক হাদীছের বর্ণনায় অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে, باب في الصلاة على المسلم يموت في بلاد الشرك ‘মুশরিক দেশে মৃত্যুবরণকারী মুসলিমের জানাযা’ অনুচ্ছেদ। এতে বুঝা যায় যে, মুশরিক বা অমুসলিম দেশে মুত্যু হওয়ার কারণে যদি কোন মুসলিমের জানাযা হয়নি বলে নিশ্চিত ধারণা হয়, তাহ’লে সেক্ষেত্রে ঐ মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে।

এ সম্পর্কে দ্বিতীয় দলীল হিসাবে মু‘আবিয়া বিন মু‘আবিয়া লায়ছী আল-মুযানী (রাঃ)-এর গায়েবানা জানাযা পড়ার কথা বলা হয়। মদীনায় তাঁর মৃত্যু হ’লে তাবূকের যুদ্ধে অবস্থানকালে জিব্রীল মারফত এই সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর গায়েবানা জানাযা পড়েন।[167] ইবনু আব্দিল বার্র ও ইবনু হাজার প্রমুখ বলেন যে, হাদীছটি ‘ছহীহ’ নয়। দ্বিতীয়ত : এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, জিব্রীল (আঃ) স্বীয় পাখার ঝাপটায় সব পর্দা উঠিয়ে দেন ও জানাযা উঁচু করে ধরেন। তাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানাযা দেখতে পান ও স্বলাত আদায় করেন (حتى نظر إليه وصلي عليه)। ফলে সেটা আর গায়েবানা থাকে না। সেকারণ ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন যে, এই হাদীছ দ্বারা গায়েবানা জানাযার দলীল গ্রহণ বাতিল যোগ্য’।

ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, যদি গায়েবানা জানাযা জায়েয হ’ত, তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিশ্চয়ই নিজের ছাহাবীদের গায়েবানা জানাযা আদায় করতেন (যাদের জানাযায় তিনি শরীক হ’তে পারেননি)। অনুরূপ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুসলিমেরা তাদের প্রিয় চার খলীফার গায়েবানা জানাযা পড়ত। কিন্তু এরূপ কথা কারু থেকে কখনো বর্ণিত হয়নি’। [168]

পরিশেষে বলা যায় যে, গায়েবানা জানাযা নিঃসন্দেহে জায়েয ঐসব ক্ষেত্রে, যাদের জানাযা হয়নি বলে জানা যায়। কিন্তু যাদের জানাযা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা না পড়ায় কোন দোষ নেই। বিশেষ করে আজকাল যেখানে গায়েবানা জানাযা নোংরা রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরও বেশী হুঁশিয়ার হওয়া কর্তব্য।

(৮) কবর যিয়ারত (زيارة القبور) : কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। এর দ্বারা মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। কবর আযাবের ভীতি সঞ্চারিত হয়। হৃদয় বিগলিত হয়। চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়। অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকীর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরকালীন মুক্তির প্রেরণা সৃষ্টি হয়। উপরোক্ত উদ্দেশ্যেই কেবল কবর যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নইলে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। নারী-পুরুষ সবার জন্য এই অনুমতি রয়েছে। তবে ঐসব নারীদের জন্য লা‘নত করা হয়েছে, যারা কবর যিয়ারতের সময় সরবে কান্নাকাটি ও বিলাপ ধ্বনি করে।

যিয়ারতের সময় এমন কাজ করা যাবে না, যা করলে আল্লাহ নাখোশ হন। যেমন : লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা দুনিয়াবী স্বার্থে যিয়ারত করা, সেখানে ফুল দেওয়া, কবরবাসীর নিকটে কিছু কামনা করা, সেখানে বসা, স্বলাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসীলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-ছাদাক্বা ও মানত করা, গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি ‘হাজত’ দেওয়া বা কুরবানী করা প্রভৃতি।

সকল প্রকারের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী আ‘মাল থেকে মুক্ত মন নিয়ে কেবল মৃতের জন্য দো‘আ এবং আখেরাতকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করতে হবে। নইলে ঐ যিয়ারত গোনাহের কারণ হবে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কোথাও সফর করা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ও নেকী হাছিলের জন্য কা‘বা গৃহ, বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও মসজিদে নববী ব্যতীত অন্যত্র সফর করতে নিষেধ করেছেন।[169] তাই শুধুমাত্র রাসূল (ﷺ)-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় যাওয়া নাজায়েয। তবে মসজিদে নববীতে স্বলাত আদায়ের নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে কেউ মদীনায় গেলে তিনি রাসূল (ﷺ)-এর কবর যিয়ারত করতে পারেন। অতএব হজ্জের সময় যারা মদীনা হয়ে মক্কায় যান, তাদের নিয়ত হ’তে হবে মসজিদে নববীতে স্বলাত আদায়ের অশেষ নেকী হাছিল করা।

বর্তমানে যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের ও পীরদের কবর যেয়ারত করা হচ্ছে এবং মৃত পীরের অসীলায় ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির আশায় মানুষ যেভাবে বার্ষিক ওরস ও অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন মাযারে ছুটছে, তাদের সাবধান হওয়া উচিত যে, এর মাধ্যমে তারা দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিই হারাচ্ছেন। কেননা আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)-এর আদেশের বিরোধিতা করলে কেবল আল্লাহর ক্রোধ লাভ হয় ও তাঁর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হ’তে হয়।

যিয়ারতের আদব ( آداب الزيارة ) : এই সময় নিজের মৃত্যু ও আখেরাতকে স্মরণ করবে এবং কবরবাসীদের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে খালেছ মনে নিম্নোক্ত দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। দো‘আর সময় একাকী দু’হাত উঠানো যাবে। বাক্বী‘ গারক্বাদ গোরস্থানে দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করার সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একাকী তিন বার হাত উঠিয়েছিলেন। [170] এই সময় স্রেফ দো‘আ ব্যতীত স্বলাত, তেলাওয়াত, যিকর-আযকার, দান-ছাদাক্বা কিছুই করা জায়েয নয়।

১ম দো‘আ : এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আয়েশা (রাঃ)-কে শিক্ষা দিয়েছিলেন।-

اَلسَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَيَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَآءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ-

উচ্চারণ : আস্সালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইয়ারহামুল্লা-হুল মুস্তাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুস্তা’খিরীনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা লা-হেকূনা।

অনুবাদ : মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আমাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহরহম করুন! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি’।[171]

২য় দো‘আ : এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।-

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ، نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ-

উচ্চারণ : আস্সালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা লা-হেকূনা। নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়া লাকুমুল ‘আ-ফিয়াতা’।

অনুবাদ : মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি। আমাদের ও আপনাদের জন্য আমরা আল্লাহর নিকটে মঙ্গল কামনা করছি’।[172]

৩য় দো‘আ :

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُمْ-

উচ্চারণ : আসসালামু ‘আলায়কুম দা-রা ক্বাওমিন মু’মিনীনা, ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হেকূনা; আল্লা-হুম্মাগফিরলাহুম।

অনুবাদ : মুমিন কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি। হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। [173]

তিরমিযী বর্ণিত ‘আসসালামু ‘আলায়কুম ইয়া আহলাল কুবূরে! ইয়াগফিরুল্লা-হু লানা ওয়া লাকুম’ বলে প্রসিদ্ধ হাদীছটি ‘যঈফ’। [174]

জ্ঞাতব্য : কাফির-মুশরিক বাপ-মায়ের কবর যিয়ারত করা যাবে। ক্রন্দন করা যাবে। কেননা এর মাধ্যমে মৃত্যুকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সালাম করা যাবে না। তাদের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তাঁর মায়ের কবর যিয়ারতের জন্য অতটুকুই মাত্র অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[175]

সূত্র :: স্বলাতুর রাসূল (ﷺ)

আসাদুল্লাহ আল গালিব

টীকা :: [এখানে সব টিকা দেওয়া হই নাই পরবর্তীতে তা সংযুক্ত করা হবে।]

[1] . ইবনু মাজাহ হা/১৫২৬ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৬, ‘আহলে ক্বিবলার উপর স্বলাত’ অনুচ্ছেদ-৩১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭১, ২৭৯-৮০।

[2] . ইবনু মাজাহ হা/১৫১৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২-৮৩, ২৭১।

[3] . ইবনুন নাজ্জার আল-ফুতূহী, শারহুল মুনতাহা (বৈরূত : দার খিযর ১৪১৯/১৯৯৮) ৩/৫৫-৬৭; নাসাঈ হা/১৯৮৭, ৮৯।

[4] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭৭।

[5] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫১, ‘স্বলাত’ অধ্যায়-৪, ‘জানাযার স্বলাত’ অনুচ্ছেদ-৫।

[6] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫২, ৫৭, ৫৮; আবুদাঊদ হা/৬৬২। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর লাশ তাঁর শয়ন কক্ষেই রাখা হয়েছিল।।

 

>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<

Share: