বিষন্ন হবেন না : কারণ, অসুস্থতা জীবের সাময়িক অবস্থা মাত্র; পাপ মাফ করা হবে; ঋণ পরিশোধ (করা) হবে; বন্দী মুক্তি পাবে; আপনার প্রিয় প্রবাসী ব্যক্তি ফিরে আসবে; পাপী অনুতপ্ত হবে এবং গরীবরা ধনী হবে।
দুঃখিত হবেন না : এজন্য যে, আপনি কি দেখতে পান না যে, কিভাবে কালো মেঘ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এবং প্রচণ্ড ঝঞ্চা বায়ু কিভাবে প্রশমিত হয়ে যায়? আপনার কষ্টের পরেই শান্তি আসবে এবং আপনার ভবিষৎ উজ্জ্বল হবে।
দুশ্চিন্তা করবেন না : কারণ সূর্যের উষ্ণ কিরণ প্রচুর ছায়ায় দূর হয়ে যাবে, দুপুর-রোদের তৃষ্ণা শীতল পানিতে মিটে যাবে, ক্ষুধার জ্বালা উষ্ণ খাবারে মিটে যাবে এবং নিদ্রাহীনের উদ্বিগ্নতা গভীর ঘুমে দূর হয়ে যাবে বা উদ্বিগ্ন ব্যক্তির অনিদ্রার পর গভীর ঘুম আসবে। স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধারের পর অসুস্থ ব্যক্তি যাতনার কথা শীঘ্রই ভুলে যাবে। আপনার কর্তব্য শুধু অল্প সময়ের জন্য সহ্য করা এবং কয়েক মুহুর্তের জন্য ধৈর্যশীল হয়ে থাকা।
আলী ইবনে জাবলা বলেছেন-
সম্ভবত : একটি উদ্ধারের পথ পাওয়া যাবে,
সম্ভবত : আমরা সম্ভাবনার দ্বারা সান্তনা পাব।
সুতরাং তোমার মনকে দমন করে যে দুশ্চিন্তা তার মোকাবেলায় তুমি হতাশ হয়ে যেয়ো না, কারণ, মানুষ যখন সব আশা হারিয়ে ফেলে তখন সবচেয়ে নিকটবর্তী সত্তা (আল্লাহ) উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে আসবেন।
আল্লাহ আপনার জন্য যা পছন্দ করেছেন আপনিও আপনার জন্য তা পছন্দ করুন। তিনি যদি আপনাকে দাঁড়াতে বলে তবে আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন এবং তিনি যদি আপনাকে বসতে বলে তবে আপনি বসে থাকুন। তিনি যদি আপনাকে দরিদ্র বানিয়ে থাকেন, তবে ধৈর্য প্রদর্শন করুন। আর তিনি যদি আপনাকে ধনী বানিয়ে থাকেন তবে কৃতজ্ঞ হোন। একথাগুলো বুঝে আসে একথার দ্বারা যে—
رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا ، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا ، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا
প্ৰভু হিসেবে আল্লাহকে, ধর্ম হিসেবে ইসলামকে এবং নবী হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মেনে নিয়েছি।”
এবং একজন আরব কবি বলেছেন-
لا تُدبِّرْ لك أمراً ٭ فأولوا التدبيرِ هلْكى
وارض عنا ان حكمنا ٭ نحنُ أولى بِك مِنكا
“তোমার জন্য কোন পরিকল্পনা করিও না, কেননা, পরিকল্পনাকারীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত; আর আমার হুকুমে রাজি হয়ে যাও। আমি পরিকল্পনার জন্য তোমার চেয়ে অধিক যোগ্য।”
মনঃক্ষুন্ন হবেন না : অন্যের কাজ কর্মকে উপেক্ষা করুন। তারা ক্ষতি করার, উপকার করার, জীবন-মৃত্যু, পুরস্কার বা শক্তি কোন কিছুই দেয়ার দাবি করতে পারে না।
ইব্রাহিম ইবনে আদহাম বলেছেন- “আমরা যে (ইবাদতের মধ্যে পরমানন্দের) জীবন যাপন করি তা যদি রাজা-বাদশাগণ জানতেন তবে তারা এ বিষয়ে আমাদের সাথে তরবারি দ্বারা যুদ্ধ করতেন।”
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন- “মাঝে মাঝে (মনের এমন অবস্থা হয় যে, তখন) আমি বলি, বেহেশতবাসীরা যদি এ অবস্থা উপলব্ধি করতে পারত তবে বাস্তবিকই তাদের জীবন চমৎকার হতো।”
তিনি অন্য (ঘটনার) সময় বলেছেন- “আল্লাহ্র জিকিরের ও আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের অনুভূতি পরমানন্দে আত্মা মাঝে মাঝে নেচে উঠে।”
জেলখানায় প্রবেশকালে প্রহরীরা যখন তার সামনের দরজা বন্ধ করছিল তখন তিনি আরোও বলেছেন-
“অতএব তাদের মাঝে একটি দেয়াল খাড়া করা হবে, তার একটি দরজা থাকবে। এর ভিতরে থাকবে রহমত এবং এর বাহিরে থাকবে শাস্তি।” (৫৭-সূরা আল হাদীদ: আয়াত-১৩)
জেলখানায় থাকাকালে তিনি বলেছিলেন-
“আমার শক্ররা আমার কী করতে পারবে। আমার অন্তরেই আমার বেহেশত আছে; আমি যেখানেই যাই আমার জান্নাত আমার সাথেই থাকে। আমার শক্ররা যদি আমাকে হত্যা করে। তবে আমি শহীদ হব। যদি তারা আমাকে আমার দেশ ত্যাগে বাধ্য করে তবে আমি পর্যটক হিসেবে বিদেশে যাব, আর যদি আমাকে বন্দী করে তারা আমাকে (আল্লাহর ইবাদত করার জন্য) নিরিবিলি পরিবেশের বন্দোবস্ত করে দেয়।”
একদা এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিলেন “যে আল্লাহকে হারিয়েছে সে কী পেয়েছে? আর যে আল্লাহকে পেয়েছে সে কিসের সন্ধান পেয়েছে? তারা কখনও সমান হতে পারে না। যে আল্লাহকে পেয়েছে সে সবকিছুই পেয়েছে আর যে আল্লাহকে হারিয়েছে সে সবকিছুই হারিয়েছে।”
অন্ধভাবে দুঃখ করবেন না, বরং আপনি যে জিনিসের জন্য দুঃখ করছেন অতি অবশ্যই তার মূল্য আপনাকে জানতে হবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لأَنْ أَقُولَ : سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ
“আমার নিকট ‘আল্লাহ কতই না পবিত্র: সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য: তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’ একথা বলা সূর্য যেসব জিনিসের উপর উদিত হয় তার চেয়েও বেশি প্রিয়।”
ধনী লোকদের অট্টালিকা-দালান-কোঠা-ঘর-বাড়ি এবং তাদের ধন-সম্পদ সম্বন্ধে আমাদের এক পূর্বসূরী বলেন, আমরা খাদ্য খাই তারাও খাদ্য খায়। আমরা পান করি তারাও পান করে। আমরা দর্শন করি তারাও দর্শন করে। আমাদেরকে হিসাব বা জবাব দেয়ার জন্য ডাকা হবে না তাদের মত করে। যেমন তাদেরকে কৈফিয়ত দেয়ার জন্য ডাকা হবে (কীভাবে তারা সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কীভাবে এগুলো খরচ করেছে?)
কবির ভাষায়-
“কবরে প্রথম রাত কবরবাসীকে খসরুর রাজ প্রসাদ ও সীজারের স্বর্ণ-ভাণ্ডারের কথা ভুলিয়ে দিবে।”
আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন-
“তোমরাতো (সম্পদ, সঙ্গী ও অন্য সবকিছু ছাড়া) ঠিক তেমনি একাকী আমার নিকটই এসেছ, যেমনি তোমাদেরকে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম।” (৬-সূরা আল আন’আম: ৯৪)
মু’মিনগণ বলেন“ইহা তো তাই যা আল্লাহ ও তার রাসূল আমাদেরকে অঙ্গীকার করেছিলেন এবং আল্লাহ ও তার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছিলেন।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-২২)
মুনাফিকরা বলে- “আল্লাহ ও তার রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-১২)
আপনার জীবন আপনার চিন্তারই ফসল। আপনি মনে মনে যা ভাবেন তা আপনার জীবনে এক অমোচনীর প্রভাব ফেলবে- তা এবার সুখপ্রদ চিন্তা হোক বা হতাশাব্যঞ্জক চিন্তাই হোক (অর্থাৎ— সুচিন্তায় সুপ্রভাব ও কুচিন্তায় কুপ্রভাব পড়বে। -বঙ্গানুবাদক)
একজন কবি বলেছেন-
لا يملا الهول قلبي قبل وقعته * ولا أضيق به ذرعا إذا وقعا
দুর্ঘটনা ঘটার আগেই আমার মন দুশ্চিন্তায় ভরে যায় না এবং যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি না।”
📚সংগ্রহঃ বইঃ
লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] লা-তাহযান – অনুচ্ছেদ সূচি ড. আয়িদ আল করনী!