একই কাজ বারবার করতে হয় এমন নিয়ম মাফিক বা রুটিন অনুসারে যারা জীবনযাপন করেন, তারা প্রায় অলঙ্ঘনীয়ভাবে বিরক্তি ও ক্লান্তির শিকার হয়ে পড়বেন। বিশেষ করে এ কারণে যে, পরিবর্তনের অভাবে স্বভাবতই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ কারণেই সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ আমাদেরকে বিভিন্ন সাদা-কালো, ঠাণ্ডা-গরম, আলো-ছায়া ও টক-মিষ্টি দান করেছেন। আল্লাহ তার কিতাবে এই বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করেন-
“তাদের (মৌমাছিদের) পেট থেকে বিভিন্ন রঙের (মধুর) পানীয় বেরোয়।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-৬৯)
“তারা একই মূলে একাধিক বা এক মাথাওয়ালা খেজুর গাছ।” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-৪)
“আর বিভিন্ন স্বাদের শস্য, যয়তুন ও ডালিম (বর্ণে, আকারে ও স্বাদে) সদৃশ ও বিসদৃশ।” (৬-সূরা আল আন’আম: আয়াত-১৪১)
“আর পাহাড়ের মাঝে আছে সাদা-লাল বিচিত্র বর্ণের পথ।” (৩৫-সূরা ফাতির: আয়াত-২৭)
“আর আমি মানুষের মাঝে এদিনগুলোকে পর্যায়ক্রমে আবর্তন করি।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪০)
বনী ইসরাঈলদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয়েছিল তা সর্বোত্তম খাদ্য হওয়া সত্ত্বেও শুধু একমাত্র খাদ্য হওয়ার কারণেই তাদের তা খেতে ভালো লাগছিল না। (এবং তারা বলেছিল:)
“আমরা একই রকম খাদ্য সহ্য করতে পারব না।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৬১)
আল-মামুন একবার দাঁড়িয়ে, একবার বসে ও একবার হাটতে হাটতে (আরবী ২২তম সংস্করণের মূল পুস্তক থেকে এ অংশটুকুর অনুবাদ করা হল।-অনুবাদক) এভাবে পালাবদল করে করে পাঠ করতেন এবং বলতেন: ‘আত্মা সদাই ক্লান্তিকর।’
“যারা (সর্বদা এবং সালাতে) দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে শুয়ে আল্লাহর জিকির করে…” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৯১)
ইসলামে যে সব ইবাদতের বিধান জারি বা প্রণয়ন করা হয়েছে তা নিয়ে আপনার গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত। কলবের আমল, জিহ্বার আমল, ঠোটের আমল ও সৎ কাজে সম্পদ ব্যয় করার আমল বা সম্পদের আমল। সালাত, রোজা, হজ্জ, যাকাত ও জিহাদ কী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হলো ইবাদতের কয়েকটি উদাহরণ। সালাতে দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা ও বসা (ইত্যাদি অবস্থা) আছে। আপনি যদি বিশ্রাম, সজীবতা ও বিরামহীন উপাদানের আশা করেন তবে আপনার কাজের ধরন, পড়ার ধরন ও জীবন-যাপন প্রণালীতে পরিবর্তন আনুন।
উদাহরণস্বরূপ পড়ার ব্যাপারে বলছি- যখন পড়বেন তখন বিষয় পরিবর্তন করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করুন-যেমন একবার নবী (আঃ) এদের জীবনী, একবার সাহাবীদের জীবনী, একবার হাদীস, একবার ফিকহ, আরেকবার ইতিহাস, ক্ষণিক পরে সাহিত্য, তারপরে সাধারণ জ্ঞানের বই ও এভাবে পালাক্রমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ুন। এর সর্বোত্তম উদাহরণ ও ব্যাখ্যা হলো কুরআন মাজিদ। (কারণ, কুরআনে এভাবে এসব বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে-বঙ্গানুবাদক) আপনার সময়কে ইবাদত, বৈধ আমোদ-আহ্লাদ, বন্ধুদের দেখতে যাওয়া অতিথি আপ্যায়ন, খেলা-ধুলা বা প্রমোদ ভ্রমণের মাঝে ভাগ করে নিন; তবেই আপনি নিজেকে প্রাণবন্ত, সজীব ও উজ্জ্বল ব্যক্তিরূপে পাবেন; কেননা, আত্মা বিভিন্নতা ও নতুন নতুন জিনিসে আনন্দ পায়।
?সংগ্রহঃ বইঃ
লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] লা-তাহযান – অনুচ্ছেদ সূচি ড. আয়িদ আল করনী!
***বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ শাহেদ কাজী সহিহ সুন্নাহ***